টানা বৃষ্টিতে রবিবার সকাল থেকেই বিপর্যস্ত হাওড়া এবং হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। রাস্তাঘাট, দোকানপাট ছিল কার্যত ফাঁকা। যানবাহন চলেছে কম। অনেকেই ঘর ছেড়ে বেরোননি। যাঁরা বেরিয়েছিলেন, যানবাহনের অভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়েন।
হাওড়া শহরের কোথাও এক হাঁটু, কোথাওবা এক কোমর জল দাঁড়িয়ে যায়। জল ঢুকে গিয়েছে কিছু বাড়িতেও। জলমগ্ন জিটি রোডও। বৃষ্টিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তর হাওড়া। পুরসভার ১ থেকে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ রাস্তা জলের তলায় চলে যায়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় ওই এলাকার জে এন মুখার্জি রোডে পাম্পিং স্টেশনের পাম্প খারাপ হয়ে যাওয়ায়। তিনকড়ি বোস লেন, শশীভূষণ সরকার লেন, কামিনী স্কুল সংলগ্ন এলাকায় কিছু বাড়িতে জল ঢুকে যায়। জল জমে যায় জয়সোয়াল হাসপাতাল চত্বরে। কার্যত বন্ধ হয়ে যায় পরিষেবা। কয়েকটি ওয়ার্ডে তালা ঝুলতে দেখা যায়। বেশির ভাগ চিকিৎসকই ছিলেন অনুপস্থিত। ফলে, ফিরে যেতে হয় বহু রোগীকে। তবে, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ।
সংলগ্ন জিটি রোডেও জল জমে যায়। যার জেরে সকাল থেকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওই রাস্তায়। মধ্য হাওড়ার ১৯, ২০ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বেশির ভাগ জায়গায় হাঁটুসমান জল দাঁড়িয়ে যায়। জলমগ্ন হয়ে পড়ে শিবপুরের কয়েকটি এলাকাও। জল নামার বিষয়ে তেমন কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি মেয়র মমতা জয়সোয়াল। তিনি বলেন, “গঙ্গায় জোয়ার আসায় হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় জল নামতে পারছে না। বৃষ্টি একেবারে ধরে না এলে জল নামার সম্ভাবনা কম। পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুরসভায় দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। জল নামানোর জন্য ১৬টি পাম্প কাজ করছে।” উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক অশোক ঘোষ অবশ্য অভিযোগ করেছেন, জল নামানোর জন্য কোনও পাম্প চালায়নি পুরসভা। তিনি বলেন, “মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। মেয়র ও জেলাশাসককে দ্রুত ত্রাণ পাঠাতে বলেছি।” |
জনজীবন বিপর্যস্ত হাওড়ার গ্রামীণ এলাকাতেও। বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা প্রভৃতি এলাকার বাসস্ট্যান্ডগুলি ছিল কার্যত সুনসান। ছুটির দিন হলেও দোকান-বাজার ছিল ফাঁকা। এ দিন ছিল রমজান মাসের প্রথম রবিবার। কিন্তু বৃষ্টির জন্য যাঁরা উপবাস করেছেন, তাঁরা অনেকেই ফল কিনতে আসতে পারেননি। বেশ কিছু দিন ধরেই বাগনান, শ্যামপুর এবং উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন এলাকায় রূপনারায়ণ এবং গঙ্গার নদীবাঁধ সারানোর কাজ চলছে। তবে ওই সব বাঁধের বেশির ভাগ অংশই এখনও সারানো হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। যে টুকু জায়গা সারানো হয়েছে, এ দিনের বৃষ্টিতে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামনেই অমাবস্যার কোটাল। তাতে নদীর জল বেড়ে উঠে নদীবাঁধগুলির অবস্থা আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বাসিন্দাদের। তবে, টানা বৃষ্টিতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল।
টিকিয়াপাড়ায় জল জমে যাওয়ায় বিকাল ৪টে থেকে হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগে ট্রেন চলাচল অনিয়মিত হয়ে পড়ে। প্রতিটি লোকাল ট্রেন বেশ দেরিতে চলেছে। বাস, ট্রেকার এবং অটো কম চলায় ট্রেন থেকে নেমে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে সমস্যায় পড়েন। পূর্ব রেলের হাওড়া কারশেডের কাছে জল জমে যাওয়ায় প্রতিটি ট্রেন ২০ থেকে ৩০ মিনিট করে দেরিতে হাওড়া স্টেশনে ঢোকে।
জলমগ্ন হয় হুগলিরও বেশ কিছু এলাকা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি আরামবাগ মহকুমার। আরামবাগ পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাতেই জল জমে যায়। ওলাবিবিতলা, সার্কাস ময়দান, বেনেপুকুর ও খাদ্য দফতরের গুদাম সংলগ্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি জল জমে। পুরসভা পাম্প চালিয়ে জল বের করার চেষ্টা করে। এ ভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে খানাকুল ও পুড়শুড়ায় নদীবাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা। তবে মহকুমা কৃষি দফতর জানিয়েছে, এই বৃষ্টি আমন ধান চাষের পক্ষে খুব ভাল।
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার পিরতলায় বৃষ্টিতে পুকুরের জল উপচে রাস্তায় চলে আসে। হরিপালের ডাকাতিয়া খাল উপচে সেখানকার বাগজোলা, খাজুরিয়া, কনকপুর, কালুবাটি প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ডাকাতিয়া সংস্কার না হওয়ার ফলেই এই পরিস্থিতি হয়। চন্দননগর ও শ্রীরামপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতেও জল জমে যায়। |