|
|
|
|
‘ক্ষতিপূরণের’ দাবিতে হাতুড়ের বাড়ি মৃতদেহ নিয়ে হাজির জনতা |
নুরুল আবসার • বাগনান |
হাতুড়ে চিকিৎসকের বাড়ির বিছানায় এক বৃদ্ধের মৃতদেহ শুইয়ে রেখে ৪ লক্ষ টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ দাবি করা হল। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ ও মৃতের পরিবারের অভিযোগ, তিনি ‘দালালি করে’ এক নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধকে। যেখানে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মারা গিয়েছেন অসুস্থ বৃদ্ধ। তাঁর কিডনিও কেটে নেওয়া হয়েছে। ‘ক্ষতিপূরণের’ নাম করে দীর্ঘ ক্ষণ চলে জুলুমবাজি। পুলিশ পরে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। জুলুম করে টাকা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে ১০ জনের নামে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাগনানের খানপুর গ্রামে। উলুবেড়িয়ার এসডিপিও তন্ময় সরকার বলেন, “ভুল চিকিৎসা বা কিডনি কেটে নেওয়ার কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। কোনও নার্সিংহোম বা হাতুড়ে চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ আসেনি। উল্টে, মৃতদেহ ফেলে রেখে ৪ লক্ষ টাকা আদায়ের জন্য জোরজুলুম করা হচ্ছিল। এ ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। ১০ জন গ্রামবাসীর নামে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাধন মল্লিক (৬০) নামে ওই বৃদ্ধ সিনেমার পোস্টার সাঁটানোর কাজ করতেন। গত ১২ জুলাই প্রস্টেট-সংক্রান্ত সমস্যায় তাঁরা দেখা করেন শিখা কোলে নামে গ্রামেরই এক হাতুড়ে চিকিৎসকের সঙ্গে। সাধনবাবুর স্ত্রী গীতারানি জানান, শিখাদেবীর পরামর্শে এবং মধ্যস্থতায় স্বামীকে উলুবেড়িয়ার একটি নাসির্ংহোমে ভর্তি করা হয় স্বামীকে। দু’দিন পরে সেখানে অস্ত্রোপচার হয় সাধনবাবুর। দিন চারেক পরে তিনি বাড়িও চলে আসেন। কিন্তু সুস্থ হননি। আবার তাঁরা যান শিখাদেবীর কাছে। ওই হাতুড়ে এ বার সাধনবাবুকে স্থানীয় উলুবেড়িয়ারই আর একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে দেন গত ২০ জুলাই। সেখানে দিন চারেক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় সাধনবাবুকে। গীতারানিদেবী জানান, স্বামীর অবস্থা ভাল নয় বলে জানিয়ে দেয় ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরা। এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। দিন কয়েক বাড়িতে কাটিয়ে গত শুক্রবার তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম-এ। ওই রাতেই মারা যান সাধনবাবু।
শনিবার দুপুরে গ্রামে তাঁর দেহ ফিরিয়ে আনা হয়। গ্রামবাসীদের একাংশ এবং সাধনবাবুর আত্মীয়েরা এরপরেই দাবি করে বসেন, শিখাদেবী বেশ কিছু নার্সিংহোমে রোগী ভর্তি করিয়ে দেওয়া নিয়ে দালালি করেন। প্রথমে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাধনবাবুকে, সেখানে ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। যার জেরেই মারা গিয়েছেন ওই ব্যক্তি।
উত্তেজিত জনতা বিকেলের দিকে সাধনবাবুর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে শিখাদেবীর বাড়িতে হাজির হয়। গ্রামের মানুষের ক্ষোভ আঁচ করে শিখাদেবী ও তাঁর বেশির ভাগ আত্মীয়ই তত ক্ষণে বাড়ি ছেড়ে গা-ঢাকা গিয়েছেন। সাধনবাবুর দেহ বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয় শিখাদেবীর দাদার ঘরের বিছানায়।
বাড়িতে ছিলেন ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের দুই বৌদি মীনা এবং স্বপ্না। তাঁরা বলেন, “আমরা এ ভাবে মৃতদেহ নিয়ে ঘরে ঢোকানোর প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু গ্রামবাসীরা শোনেননি।” ওই দুই মহিলা ভয়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শিখাদেবীর কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি তোলে বিক্ষুব্ধ জনতা।
তত ক্ষণে শিখাদেবী হাজির হয়েছেন বাগনান থানায়। তাঁর কাছে ঘটনার কথা শুনে পুলিশ গ্রামে গিয়ে রাত ১টা নাগাদ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়।
গ্রামবাসীদের তরফে শরৎ প্রামাণিক, রাজকুমার প্রামাণিক, দিলীপ মান্নারা বলেন, “শিখা নার্সিংহোমে রোগী-ভর্তি নিয়ে দালালি করেন। তিনি কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গেও জড়িত। অস্ত্রোপচারের নামে নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে সাধনবাবুর কিডনি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। মৃত বৃদ্ধের বিবাহযোগ্যা মেয়ে আছে। ওই পরিবারের ভরণপোষণের জন্য আমরা শিখার কাছে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করি।”
অন্য দিকে, শিখাদেবীর বক্তব্য, “সাধনবাবু ও তাঁর স্ত্রী নিজেরাই আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন কোথায় ভর্তি হওয়া যায়। তাঁদের অনুরোধেই আমি বিষয়টিতে জড়িয়ে পড়ি। অস্ত্রোপচারের পরে সাধনবাবু ঠিক মতো ওষুধ খাননি। ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়।” রোগী ভর্তি নিয়ে দালালি করা কিংবা কিডনি পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। |
|
|
|
|
|