|
|
|
|
কেন্দ্রের আর্থিক কেলেঙ্কারি |
আর্থিক দুর্নীতির প্রশ্নে কারাটের নিশানা প্রধানমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ইউপিএ-২ সরকারকে স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার’ বলে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। এখনই প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা না চাইলেও কারাটের অভিযোগ,
একের পর এক কেলেঙ্কারির দায় প্রধানমন্ত্রী এড়িয়ে যেতে পারেন না।
কারাটের কথা থেকে স্পষ্টএক দিকে, সংসদের বাদল অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সিপিএম আরও আক্রমণাত্মক হবে, অন্য দিকে, ২০১২ সালের ৪-৯ এপ্রিল কেরলের কোঝিকোডে যে পার্টি কংগ্রেস হবে, সেখানেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কড়া রাজনৈতিক দলিল পেশ করা হবে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে কোয়ম্বত্তূরে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের সময়ে কেন্দ্রের ইউপিএ-১ সরকার বামেদের সমর্থনের উপরে নির্ভরশীল ছিল। ওই পার্টি কংগ্রেসে সেই সরকারকে টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েই দলিল পেশ করেছিলেন কারাট। কিন্তু পরবর্তী কালে পরমাণু-চুক্তি ঘিরে কেন্দ্রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় বামেরা। |
|
আলিমুদ্দিনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শেষে রবিবার কারাট বলেন, “যে ভাবে স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, কে জি বেসিনের গ্যাস কেলেঙ্কারি, এমনকী কমনওয়েলথ গেমস নিয়েও কেলেঙ্কারি হয়েছে, তার দায় প্রধানমন্ত্রী এড়িয়ে যেতে পারেন না। মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। স্বাধীনতার পর থেকে কেন্দ্রে এমন দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার আগে কখনও হয়নি।” কারাটের আরও অভিযোগ, “যে সব বিষয়ে দুর্নীতি হয়েছে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারেই সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকী স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে জেলে থাকা প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজাও বলেছেন, তিনি যা করেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েই করেছেন।”
কারাটকে প্রশ্ন করা হয়, অতীতে রাজীব গাঁধী বা নরসিংহ রাও সরকারকেও সিপিএম ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে অভিযোগ করেছিল। ইউপিএ-২ সরকার কি তার থেকেও বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘হ্যা। রাজীব গাঁধী, নরসিংহ সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। এনডিএ সরকারও দুর্নীতি করেছে। কিন্তু কেলেঙ্কারির আর্থিক পরিমাণ এবং দুর্নীতির মাত্রায় এই সরকার অতীতের সব সরকারকে ছাপিয়ে গিয়েছে।” তা হলে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছেন না কেন? জবাবে কারাট বলেন, “সময় হলেই চাইব।”
এখনই মনমোহনের পদত্যাগ না চাওয়ার প্রধানত দু’টি কারণ। বফর্স কেলেঙ্কারি বা সাংসদদের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে সরাসরি রাজীব গাঁধী বা নরসিংহ রাওয়ের নাম যুক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কেলেঙ্কারিতেই মনমোহনের নাম সরাসরি জড়ায়নি। দ্বিতীয়ত, মনমোহন ইউপিএ-১ এর সময়েও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখন বামেদের সমর্থনেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।
মনমোহনের পদত্যাগ না চাইলেও কারাট বলেন, “বিভিন্ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি এক জন শিক্ষিত ও সম্মানীয় ব্যক্তি। যা কিছু ঘটেছে, তাঁর আমলেই ঘটেছে। তাই তিনি কোনও ভাবেই দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।” কারাটকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন? জবাবে তিনি বলেন, “এটা সততা বা অসততার প্রশ্ন নয়। প্রধানমন্ত্রীর নৈতিক দায় আছে
কি নেই, সেটাই প্রশ্ন। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে আছেন, তখন কোনও ভাবেই কেলেঙ্কারির নৈতিক দায় এড়িয়ে যেতে
পারেন না।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে কারাট বলেন, “কারও দলে যদি চোর, পকেটমার, গাঁটকাটা থাকে, তা হলে তার দায় কি সেই ব্যক্তি এড়িয়ে যেতে পারেন? ঠিক তেমনই এই সরকারে যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের কেউ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কেউ কংগ্রেসের সাংসদ বা কেন্দ্রের আমলা। কী করে তার দায় প্রধানমন্ত্রী এড়িয়ে যাবেন?” এই সূত্র ধরে তিনি বলেন, “২০০৮ সালে স্পেকট্রাম লাইসেন্স বণ্টনের সময়ে আমাদের দলের সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি একাধিক বার প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাতে কোনও গুরুত্ব দেননি।” এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীকে লোকপাল বিলের আওতায় আনার দাবিও কারাট জানান।
সিএজি রিপোর্টে কমনওয়েল গেমসের কেলেঙ্কারিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারাট বলেন, ‘‘অন্য কোনও ক্ষেত্র হলে মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করতেন।” তবে, শুধুই কংগ্রেসকে আক্রমণ করলে সিপিএমের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রতি কিছুটা ‘নরম মনোভাব’ নেওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে। তাই কারাট বিজেপি শাসিত কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার দুর্নীতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রূব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেন কারাট। তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে অপারগ। খাদ্যের ৫% মূল্যবৃদ্ধি হলেই সরকার চিন্তায় পড়ে। কিন্তু এখন ১০% মূল্যবৃদ্ধিতেও সরকার বলছে কিছুই করার নেই!” কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা বিলে যে ভাবে সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে গ্রামাঞ্চলের মাত্র ৪৬% এবং শহরাঞ্চলের ২৮% মানুষকে রেশন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তাতে সমস্যা আরও বাড়বে বলে সিপিএম মনে করে। কারাট বলেন, “আমাদের দাবি, “বড়লোকদের বাদ দিয়ে বাকি সবার জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু হোক।” |
|
|
|
|
|