ডুবছে ভাইবোন, সেচখালে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচালেন শিক্ষক |
দয়াল সেনগুপ্ত • খয়রাশোল |
বয়স তার সাত। কিন্তু প্রাণে বেঁচে ছোট্ট রনিতও বুঝতে পেরেছে, আর সেচখালের দিকে যাওয়া নয়। বারবার তো আর ‘কাকু’ বাঁচাতে আসবে না! বুঝেছে তার জেঠতুতো দিদি, এগারো বছরের স্বাগতাও।
দুই ভাইবোনের পরিবারই বারবার বলছে, ‘‘উনি না থাকলে ছেলেমেয়ে দু’টোকে হয়তো আর ফিরেই পেতাম না।” যিনি ডুবন্ত ভাইবোনকে রক্ষা করেছেন, সেই ‘উনি’ হলেন বীরভূমের খয়রাশোলের মাদ্রাসার শিক্ষক সুশীলচন্দ্র দাস। তিনি অবশ্য বলছেন, “কী আর করেছি! ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে ঠিক সময়ে আমি ওখানে ছিলাম।”
এবং ভাগ্যিস ছিলেন! |
সুশীলচন্দ্র দাস। |
রোজের মতোই শনিবার বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন সুশীলবাবু। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ স্থানীয় হিংলো সেচখালের পাড় থেকে চিৎকার শুনে ছুটে যান। দেখেন, বর্ষার ভরা খালে ভেসে যাচ্ছে দু’টি বাচ্চা। নিজের প্রাণের পরোয়া না করে সঙ্গে সঙ্গেই জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রাণ বাঁচান দু’জনেরই।
নওপাড়া আহমেদিয়া হাই মাদ্রাসার বাংলার শিক্ষক সুশীলবাবুর আদতে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের বাসিন্দা। বছরখানেক আগে যোগ দেন ওই স্কুলে। তাঁর কথায়, “রোজই দু’বেলা |
|
ওদিকে বেড়াতে যাই। শনিবারও গিয়েছিলাম। যখন যাচ্ছি, তখন দেখি দু’টি বাচ্চা খেলছে। একটু এগিয়ে যেতেই কানে আসে চিৎকার। যাঁরা আমাকে ডেকেছিলেন, তাঁরা সাঁতার জানতেন না।”
স্বাগতা স্থানীয় নাকড়াকোন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। রনিত দুবরাজপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। স্বাগতার বাবা শঙ্কর পাল ও রনিতের বাবা ভাস্কর পাল দু’জনেই পেশায় ব্যবসায়ী। দু’ভাই থাকেন খয়রাশোলের দু’টি পাড়ায়। শনিবার বিকেলে স্বাগতা সাইকেলে খেলার সঙ্গী রনিতকে চাপিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে হিংলো সেচখালের পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল। বাড়িতে কিছু না বলেই। বাড়ি থেকে একটি পাথর হাতে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ছোট্ট রনিত। খেলতে খেলতে হঠাৎ তার হাতের পাথর খালের জলে পড়ে যায়। পাথর তুলতে গিয়ে তলিয়ে যায় সে। ছোট ভাইকে ডুবতে দেখে জলে ঝাঁপ দেয় স্বাগতাও। কিন্তু দু’জনের কেউই সাঁতার না জানায় হাবুডুবু খেতে থাকে খালের জলে। স্বাগতার কথায়, “যখন আমিও ডুবে যাচ্ছিলাম, তখন খালের পাশে দুই কাকুকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করি। কিন্তু ওরাও চিৎকার করে অন্য কাউকে ডাকতে থাকে। অন্য এক কাকু এসে আমাদের দু’জনকেই জল থেকে তুলে আনেন। একটু সুস্থ হওয়ার পর বাড়ি ফিরি।” |
|
দিদি স্বাগতা এবং ভাই রনিত পাল। |
পড়শিদের কাছ থেকে স্বাগতা ও রনিতের অভিভাবকেরা জানতে পারেন সুশীলবাবুর কথা। স্বাগতার বাবা শঙ্করবাবু বলেন, “কী ভাবে সুশীলবাবুকে ধন্যবাদ জানাব, জানি না।” স্বাগতার মা উন্নতিদেবী এবং রনিতের মা সোমাদেবী বললেন, “সুশীলবাবু না থাকলে ওদের দু’জনকে হয়তো আর ফিরেই পেতাম না!” রনিতের বাবা ভাস্করবাবু বলেন, “দু’জনেই সুস্থ আছে। কেবল জল খেয়ে ফেলায় ছেলের গলায় একটু ব্যথা রয়েছে।”
খুদে রনিত অবশ্য তার মধ্যেও বলে ওঠে, “জলে পড়ে খুব কষ্ট হচ্ছিল। ওই কাকু খুব ভাল। আমাদের জল থেকে তুলল। আর কখনও ও দিকে যাব না।” |
ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
|