রবীন্দ্রভবনে প্রদর্শিত হবে না কবির ভস্মাধার
প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও আজ, বাইশে শ্রাবণ বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে প্রদর্শিত হবে না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিতাভস্ম সংবলিত আধার। সৌজন্যে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের একটি ব্যক্তিগত চিঠি।
রথীন্দ্রনাথের এই অপ্রকাশিত চিঠিটি ‘উদ্ধার’ করেছেন রবীন্দ্রভবনের প্রাধিকারিক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, “রথীন্দ্রনাথ বিষয়ক গবেষণামূলক একটি গ্রন্থ প্রকাশের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিলাম। তখনই রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ প্রতিমাদেবীর ভ্রাতুষ্পুত্র, কলকাতার বাসিন্দা সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ওই চিঠিটি উদ্ধার করি।” দেরাদুনের কাছে রাজপুর থেকে উত্তরায়ণের প্যাডে লেখা ওই চিঠিতে রথীন্দ্রনাথ তাঁর স্ত্রী প্রতিমাদেবীকে লিখেছেন, “বাবার দেহাবশেষ রক্ষা করা আমার কখনই ইচ্ছা ছিল না। আমি যত দূর জানি তিনিও তা পসন্দ করবেন না। আমার অনিচ্ছায় বীরেণরা ওটা এনে রেখেছিলতখন যাই করব তাই নিয়ে একটা হৈচৈ ও মতবাদ হবে বলে রবীন্দ্রসদনে এক রকম লুকিয়ে রাখাই হয়েছিল। লেকের দ্বীপে সংরক্ষিত হলে লোকে যেই জানতে পারবে সেটা পীঠস্থান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছেক্রমশ পূজোর জায়গাও হতে পারে। আমার মনে হয় সেটা avoid করাই ভাল। এই ক্ষেত্রে দেহাবশেষ গঙ্গার জলে সমর্পণ করাই বিধেয় বলে মনে হয়। কিন্তু করতে হলে তা quitely করাই উচিত, ঘটা করে নয়। এবং তার জন্যে কোনো memorialও থাকা উচিত বলে মনে করি না।”
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই রবীন্দ্রনাথের দেহাবশেষ ভরা আধার
পর্যটকদের না দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ওই রবীন্দ্রসদনই এখন রবীন্দ্রভবনে পরিণত হয়েছে। রবীন্দ্রভবনের পাশেই হচ্ছে রথীন্দ্রনাথের চিঠিতে উল্লেখ থাকা ‘লেক’ বা পম্পা সরোবর। কোনও কোনও বছর রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত কবির চিতাভস্মের আধারটিও সংগ্রহশালার বাইরে নিয়ে আসা হয় সাধারণ পর্যটকদের দেখার জন্য। নীলাঞ্জনবাবু বলেন, “শুধু রবীন্দ্রনাথেরই নয়, তাঁর বাবা দেবেন্দ্রনাথেরও চিতাভস্ম সংরক্ষিত রয়েছে রবীন্দ্রভবনে। আমাদের ভাবনা ছিল এ বছর যেহেতু কবির জন্ম সার্ধশতবর্ষ, তাই তাঁর প্রয়াণ দিবসে পর্যটকদের জন্য রবীন্দ্রনাথের ভস্মাধার প্রদর্শিত হবে সংগ্রহশালার বাইরে।” তিনি জানান, রবীন্দ্রভবনের সংগ্রহশালা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। তাই সেখানে দর্শকেরা যাতে বছরভরই রবীন্দ্রনাথ ও দেবেন্দ্রনাথের চিতাভস্মের আধার দেখতে পান, তার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
বিশ্বভারতীতে সংরক্ষিত রবীন্দ্রনাথের দেহাবশেষ
কিন্তু রথীন্দ্রনাথের চিঠি উদ্ধারের পরেই ঠিক হয়েছে, আজ রবীন্দ্রনাথের ভস্মাধারের প্রদর্শনী হবে না। নীলাঞ্জনবাবুর কথায়, “কবিপুত্রের চিঠি খুঁজে পাওয়ার পরে আমরা ঠিক করেছি, সোমবার কবির ভস্মাধার প্রদর্শন করা হবে না। আমি মনে করি, ভবিষ্যতেও আর কখনও সেগুলি জনসমক্ষে আনা উচিত নয়। তবে এ বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। খুব শীঘ্রই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমি এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠাব।” তাঁর আরও বক্তব্য, “নিজের চিঠিতে দেবেন্দ্রনাথের চিতাভস্ম নিয়ে রথীন্দ্রনাথ কোনও উচ্চবাচ্য না করলেও তাঁর বাবার চিতাভস্ম সংরক্ষণ নিয়ে স্পষ্ট মতামত জানিয়েছেন। রথীন্দ্রনাথের ইচ্ছাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য কবির চিতাভস্ম বিলুপ্ত করে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। এ জন্য অনেক আলোচনা ও গবেষণা দরকার।”
প্রবীণ আশ্রমিক তথা পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুর অবশ্য বলেন, “এত দিন ওই ভস্মাধার প্রদর্শিত হয়েছে। এখন তা না দেখানোর সিদ্ধান্তের পিছনে আমি কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।”

ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.