চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
শৈশব কল্পনায় মিশে থাকে পৌরাণিক চেতনা
ই মুহূর্তে স্বদেশে বা বিশ্বে হিংসার কোনও শেষ নেই। আজকের দৃশ্যকলার ভিতরও পরিবৃত এই হিংসা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কোনও শেষ নেই। এত হিংসা ও হিংসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নির্মাণ দেখতে দেখতে দর্শক যখন একটু বিহ্বল বোধ করেন, তখন তাঁর সামনে উপস্থিত হয় করুণা ও প্রশান্তির এক বাতাবরণ। যা তাঁকে সাময়িক ভাবে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়।
সিগাল ফাউন্ডেশন ফর দ্য আর্টস-এর উদ্যোগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল একটি প্রদর্শনী। ২২৪ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডের সেন্ট টমাস চ্যাপেলের বিশপ্স কলেজে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই প্রদর্শনী। শিল্পী বর্তমানে দিল্লি নিবাসী মাধবী পারেখ। শিরোনাম: ‘দ্য লাস্ট সাপার’। যিশুর শেষ ভোজের এই দৃশ্যকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছিল খ্রিস্টের জীবনকে ভিত্তি করে আরও অজস্র ছবি। মূল রঙিন ছবিগুলি অ্যাক্রিলিক শিটের উপর অ্যাক্রিলিক রঙে বিপরীতক্রমে আঁকা। এ ছাড়া ড্রয়িংও ছিল কিছু। শত শত মোমের শিখায় আলোকিত ছিল সেই প্রদর্শনীকক্ষ। দু’পাশে বিস্তৃত দেওয়ালে, কখনও বা আলাদা ইজেলে সাজানো ছিল যিশুর জীবনালেখ্য। যার ভিতর ছিল করুণা, শান্তি ও আত্মত্যাগের বার্তা।
শিল্পী: মাধবী পারেখ
এই প্রদর্শনীর শান্ততার সঙ্গে সঙ্গত করেছে প্রদর্শনীর জন্যই নির্মিত স্মারকগ্রন্থটি। সিগাল-এর কর্ণধার নবীন কিশোর পরিকল্পিত এই ক্যাটালগের শিল্পসুষমা কলকাতার শিল্পকলার পরিমণ্ডলেও একটু ব্যতিক্রমী। মাধবীর প্রদর্শিত ছবি ও ড্রইংয়ের মুদ্রিত প্রতিলিপির পাশে পাশে উৎকীর্ণ হয়েছে পাশ্চাত্যের প্রাচীন, আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক মনীষী ও চিন্তাবিদদের অজস্র ছোট ছোট উদ্ধৃতি। যা এই প্রদর্শনীর পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণকে স্পষ্ট করে তোলে। দেখা যায়, ধর্মচেতনার ভিতরে আভাসিত থাকে যে শান্তির ললিত বাণী, তাও কখনও কখনও উঠে আসে হিংসার বীজ থেকে। এই স্মারকগ্রন্থের শেষ উদ্ধৃতিটি এ রকম: ‘নো বডি ইন দিস ওয়র্ল্ড হ্যাজ ইয়েট ডায়েড ফ্রম অ্যানাদারস সাফারিং/ অ্যান্ড দি ওয়ান হু সেড দ্যাট হি ডায়েড ফর আস ডিড নট ডাই, হি ওয়াজ কিল্ড।’ যিশু প্রয়াত হননি। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।
মাধবী ভ্যাটিকানে ও মস্কোয় গিয়েছেন। সেখানে চার্চে দেখেছেন যিশুর মাহাত্ম্য ও যিশুকে নিয়ে আঁকা ছবির সম্ভার। তাঁর চেতনার গভীরে তো বয়েই চলেছে তাঁর পিতৃভূমি গুজরাতের লৌকিক জীবন ও শিল্পের স্রোতধারা। সেই উৎস থেকেই ১৯৭০-এর দশকের কোনও এক সময়ে তিনি কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষা ছাড়াই শুরু করেছিলেন নিজের ছবি। তখন তিনি ছিলেন কলকাতার বাসিন্দা। তার পর গত প্রায় পাঁচ দশকে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব এক প্রকাশভঙ্গি। লৌকিকের নিরাভরণ ছন্দের সঙ্গে মিলিয়েছেন তাঁর নিজস্ব প্রথাগত প্রশিক্ষণহীন সারল্যময় প্রকাশভঙ্গিকে। এ ভাবে গড়ে তুলেছেন আধুনিকতার জটিলতার বিপরীতে সহজ স্বচ্ছন্দ এক জীবনবোধ ও শিল্পভাষা, ভারতীয় আধুনিকতার আত্মপরিচয় নির্মাণে যা বিশেষ অবদান রেখেছে। তাঁর স্বামী প্রখ্যাত শিল্পী মনু পারেখের পাশে সারা জীবন কাজ করে গিয়েছেন, কিন্তু কোনও ভাবেই প্রভাবিত হননি তাঁর ছবি দ্বারা।
সারল্যকে কেমন করে এক সম্ভ্রান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, তারই পরিচয় রয়েছে এ বারের ‘লাস্ট সাপার’ চিত্রমালায়। ‘লাস্ট সাপার’ পৃথিবীর বহু প্রখ্যাত শিল্পী এঁকেছেন। আমাদের দেশে যামিনী রায়ের রূপায়ণটির কথা মনে পড়ে মাধবীর ছবিটি দেখতে দেখতে, কেননা দুজনেই লৌকিক আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন নিজের নিজের মতো করে। তবে যামিনী রায়ে যতটা ‘সফিস্টিকেশন’ আছে, এখানে তাও নেই। অথচ অঙ্কন অত্যন্ত দৃঢ়বদ্ধ। বর্ণচয়ন পরিমিত। সাদা এবং কালো ও ধূসরের প্রাধান্য। যিশুর মুখের প্রশান্তি ও অন্যান্য প্রতিটি মুখের অভিব্যক্তি পরিস্ফুট করেছেন মন্ময় দক্ষতায়। বাইজান্টাইন, অন্যান্য মধ্যযুগীয় এবং রেনেসাঁস ও পরবর্তী আধুনিকতায় ‘লাস্ট সাপার’ নিয়ে শিল্পীর যে বিপুল অনুশীলন ও পরিক্রমা আলোচ্য ছবিটি তার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নিয়ে অবস্থান করবে দীর্ঘ দিন। ‘জার্নি অব দ্য ক্রাইস্ট’, ‘ক্রাইস্ট ট্র্যাভেলিং উইথ অ্যানিম্যালস’, ‘অ্যানিম্যালস ওয়াকিং ডাউন দ্য স্টেয়ারকেস’, ‘দ্য ওয়াইজ ম্যান’ ইত্যাদি অনেক ছবিতেই আমরা যে আকাশ, সূর্য, চাঁদ ও তারা দেখতে পাই, তার মধ্যে শিল্পীর শৈশব-কল্পনার সঙ্গে মিশে থাকে ভারতের পৌরাণিক সৌর চেতনার আভাস।
সেই ঐতিহ্যগত ভিত্তি থেকেই শিল্পী দূরপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পুরাণকল্পকে আত্মস্থ করেছেন।
Previous Item Alochona Next Item


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.