|
|
|
|
মার্কার পেনের বরাতেও অনিয়ম |
|
কলমের দাম বাড়তেই বন্ধ হচ্ছে
৫০০ পোলিও শিবির
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
শিবিরগুলো চলত কার্যত ‘কলমের জোরে।’ কলম মহার্ঘ্য হয়ে যাওয়ায় এ বার পাঁচশো পাল্স পোলিও শিবিরও পাট গোটাতে চলেছে!
মামুলি কলম নয়। ওগুলো ‘মার্কার’ পেন। যে শিশুকে পোলিওর টিকা খাওয়ানো হয়ে গিয়েছে, এই পেন দিয়ে তার আঙুলে কালির দাগ দেওয়া হয়। পাঁচ বা তার কম বয়সী কোনও বাচ্চার আঙুলে ওই দাগ না-থাকলে বুঝতে হবে, তাকে টিকা খাওয়ানো হয়নি।
সেই কলমেরই দাম বেড়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতর পাইকারি হিসেবে একটা কলম ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে কিনত। এখন দাম পড়ছে সাড়ে ১৯ টাকা। অর্থাৎ প্রায় পাঁচ টাকা বেশি। ফলে এ বাবদ স্বাস্থ্য দফতরের বাড়তি খরচ হচ্ছে ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু এতে পোলিও শিবির বন্ধ হবে কেন?
রাজ্যের টিকাকরণ-আধিকারিক পার্থসারথি চৌধুরীর ব্যাখ্যা, “টিকা সংক্রান্ত পোস্টার, ব্যানার আর মার্কার পেন কিছুটা সস্তায় কিনে যে টাকা বাঁচে, তা দিয়ে আমরা বাসস্ট্যান্ড বা রেল স্টেশনের মতো জায়গায় অন্তত ২৩০০ ‘ট্রানজিট’ ক্যাম্প করি। কারণ, এ জন্য কেন্দ্র আলাদা ভাবে টাকা দেয় না। এখন মার্কার পেনের পিছনে বাড়তি পাঁচ লাখ বেরিয়ে যাওয়ায় পাঁচশো ট্র্যানজিট ক্যাম্প ছেঁটে ফেলতে হচ্ছে।”
অথচ তথ্য বলছে, পালস পোলিও টিকাকরণে পশ্চিমবঙ্গ এখনও যথেষ্ট পিছিয়ে। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, গত বছর রাজ্যে পোলিও-আক্রান্ত আট-আটটি শিশুর খোঁজ মিলেছে। এই অবস্থায় এতগুলো শিবির উঠে গেলে পুরো প্রকল্পটাই কি ধাক্কা খাবে না?
পার্থসারথিবাবু বলেন, “ভালই ধাক্কা খাবে। যদিও এর সমাধান কী, বুঝতে পারছি না।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ‘বেশি দামে’ কলম কেনার জন্য পোলিও টিকাকরণই যদি হোঁচট খায়, তা হলে ওই দামে মার্কার পেন কেনাই বা হল কেন? বস্তুত স্বাস্থ্য-কর্তারা এর পিছনে কোনও যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনকী, এ ব্যাপারে ‘নিয়ম মেনে’ দরপত্রও ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। অনিয়মটা কী হয়েছে?
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, মার্কার পেনের টেন্ডার জমা দিয়েছিল মাত্র দু’টো সংস্থা। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিযোগিতায় অন্তত তিনটি সংস্থা না-থাকলে টেন্ডারই বাতিল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তা তো হয়ইনি, উপরন্তু যে সংস্থা তুলনায় কম দর দিয়েছিল, তাকেই বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। আর ‘গুণমানের’ যুক্তি দেখিয়ে কেনা হয়েছে বেশি দামের কলম।
এ ভাবে কাজ হল কেন?
অনিয়মের কথা কার্যত স্বীকার করে পরিবারকল্যাণ বিভাগের কমিশনার দিলীপ ঘোষ বলেন, “টেন্ডারে কেউ নামই দিচ্ছিল না। এ দিকে পরের পোলিও রাউন্ড এসে পড়ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করে দু’টো সংস্থাকে নিয়েই টেন্ডার হয়। আইনত এটা ঠিক হয়নি।”
কিন্তু ওই ‘ভুলের’ জেরে তো পোলিও ক্যাম্পই বন্ধ হতে বসেছে! এর সুরাহা কী?
দিলীপবাবুর আশ্বাস, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফের টেন্ডার ডেকে আগের ভুল শুধরে নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|