কর মকুবের আর্জি মুখ্যমন্ত্রীকে
দার্জিলিং ভেঙে দু’টি জেলার প্রস্তাব মোর্চার
বিগত বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাসুল বয়কটকে অন্যতম হাতিয়ার করেছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। যে কারণে গত তিন বছরে যানবাহনের কর থেকে শুরু করে বিদ্যুতের মাসুল নানা খাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারেনি রাজ্য। বকেয়া সেই বিপুল অঙ্কের মাসুল এ বার মকুব করে দেওয়ার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করলেন মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। সেই সঙ্গে সমতল শিলিগুড়িকে বাইরে রেখেই দার্জিলিং জেলাকে ভেঙে দু’টি জেলা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। তবে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর এলাকা নির্ধারণের আগেই জলপাইগুড়ি জেলাকে ভেঙে আলিপুরদুয়ারকে আলাদা জেলা করার প্রক্রিয়া শুরু না করার দাবি রেখেছেন তাঁরা। এ সব নিয়ে বুধবার ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। সেখানে গুরুঙ্গের সঙ্গে ছিলেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ও আরও কয়েক জন নেতা।
জুলাই মাসে সুকনার কাছে পিনটেল ভিলেজে পাহাড় চুক্তির পরে এই প্রথম গুরুঙ্গের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ হল।
সর্বদল বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গ এবং রোশন গিরি। ছবি: অশোক মজুমদার
বৈঠকের পরে গুরুঙ্গ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কর মকুবের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। সংরক্ষিত অরণ্যের প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তিনিই বলেছেন যে, এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে। ৫ অগস্ট দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিষয়টি তুলব। এ নিয়ে আমরা আগেও কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। জিটিএ-র বিষয়গুলি সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে হবে।” সরকারি সূত্রের খবর, দার্জিলিঙের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ জিটিএ-র হাতে আনতে চাইছে মোর্চা। বিষয়টি পুরোপুরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন।
এ দিন দুপুরে রাজ্যের নাম পরিবর্তন ও জেলা ভাগের প্রস্তাব নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের রোশন জানান, আরও বেশি জেলা তৈরির ব্যাপারে নীতিগত ভাবে আপত্তি না থাকলেও জলপাইগুড়ি জেলা ভাগের ব্যাপারে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “ডুয়ার্সের ১৯৬টি মৌজাকে জিটিএ-তে আনার দাবি রয়েছে। ওই দাবি খতিয়ে দেখতে কমিটি হয়েছে। কমিটির সিদ্ধান্ত জানার পরেই আলিপুরদুয়ার জেলা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত। কারণ ওই মৌজাগুলির অনেকগুলিই আলিপুরদুয়ার মহকুমায়।” ডুয়ার্সের মৌজাগুলি জিটিএ-তে নেওয়ার দাবিকে জেদাজেদির পর্যায়ে নিয়ে যাবে না বলেও রাজ্য সরকারকে আশ্বস্ত করেছে মোর্চা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ওই দাবির যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখে ছ’মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে। কমিটির সিদ্ধান্ত মোর্চার পছন্দসই না-হলে গুরুঙ্গরা ফের আন্দোলনে নামবেন কি না তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর গুরুঙ্গ বলেছেন, “সর্বদলীয় বৈঠকে যা হয়েছে, আমরা তার সঙ্গে সহমত পোষণ করি। পাশাপাশি, (শ্যামল সেন) কমিটি যা সুপারিশ করবে আমরা মেনে নেব।”
দার্জিলিং জেলাকে ভাগ করার প্রস্তাব সম্পর্কে রোশন বলেন, “শুধু জনসংখ্যার নিরিখে জেলা ভাগ হতে পারে না। অর্থনীতি, পরিকাঠামো, দূরত্ব, পর্যটনের দিক থেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তিতে দার্জিলিংকে দু’টি জেলা করার প্রস্তাব দিয়েছি আমরা।” তবে রোশন জানিয়েছেন, আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে এখন তাঁরা কিছু বলতে চান না। মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী জানান, তাঁরা দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও তরাইয়ের কিছু এলাকা নিয়ে একটি জেলা গঠনে আগ্রহী। দ্বিতীয় জেলাটি হতে পারে কালিম্পং ও লাগোয়া ডুয়ার্সের কিছু এলাকা নিয়ে। সে ক্ষেত্রে শিলিগুড়ির অবস্থান কী হবে? মোর্চার এক শীর্ষ নেতা জানান, সমতল শিলিগুড়ি ও তার লাগোয়া এলাকার আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে একটি পুলিশ কমিশনারেট গড়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ওই এলাকা নিয়ে আলাদা জেলা তৈরির কথাও রাজ্য ভাবতে পারবে বলে মোর্চার ওই নেতা জানান। গুরুঙ্গও জানিয়েছেন, পাহাড়ের মানুষের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তাঁরা জিটিএ-র কাজ চালাতে চান। রেলমন্ত্রী হিসেবে শেষ বার দার্জিলিং গিয়েছিলেন মমতা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে দার্জিলিং যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোর্চা নেতারা।
Previous Story Uttarbanga Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.