স্মরণসভায় শপথের পাশেই বিচ্যুতি নিয়ে তরজা
বিমানের সামনেই মঞ্চে বসা নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুকে সামনে পেয়ে নেতাদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ ও ক্ষোভ উগরে দিলেন সিপিএম কর্মীরা। বুধবার বরাহনগরের রবীন্দ্রভবনে সিপিএমের এক সভায় দলীয় কর্মীরা সরাসরি অভিযোগ করেন, বিধানসভায় হারের পরেও নেতাদের একাংশ ‘ব্যক্তিস্বার্থে’ দলীয় পদ ব্যবহার করছেন। অথচ সাধারণ মানুষ তাঁদের অনেককে দেখলেই ‘মুখ ঘুরিয়ে’ নেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় কর্মীদের শান্ত করতে বিমানবাবু বলেন, “সকলে এমন কাজ করেন না। কেউ কেউ করেন। তাঁদের সতর্ক হতে হবে। না-হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সুভাষ চক্রবর্তীর দ্বিতীয় প্রয়াণবার্ষিকী এবং সাক্ষরতা আন্দোলনের কর্মী কল্যাণ শতপথীর স্মরণসভা উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল। তৃণমূল জোট সরকারের কড়া সমালোচনার পাশাপাশি নতুন পরিস্থিতিতে দলের নেতা কর্মীদের আচরণ নিয়ে কঠোর বার্তা দিতে বিমানবাবু ওই সভাকে বেছে নেন। সাক্ষরতা আন্দোলন করে প্রচারের আলোয় আসা যায় না বলেই পার্টি সদস্যরা এ কাজে আগ্রহ দেখান না বলে বিমানবাবু অভিযোগ করেন।
বিমান বসুর শ্রদ্ধা। বুধবার রবীন্দ্র সদনে। নিজস্ব চিত্র
তিনি বলেন, “কমিউনিস্টদের সকলকে আর আগের মতো সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধাভক্তি করেন না।” কর্মীদের কাছে তিনি প্রশ্ন করেন, “শ্রদ্ধাভক্তি করেন কি?” কর্মীদের একাংশ জবাব দেন “না।” এরপরেই বিমানবাবু চড়া গলায় বলতে থাকেন, “আমায় দেখলে কেউ মুখ ঘুরিয়ে নিলে ভাবব না, কেন সে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে? বিভিন্ন কমিটির সদস্য হব। আর ব্যক্তিস্বর্থে পার্টিকে ব্যবহার করব। তা হলে মানুষকে দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই!”
তখনই সভা থেকে এক কর্মী বলে ওঠেন, “কিন্তু এখনও রোজই এ কাজ হচ্ছে! দলীয় পদকে ব্যবহার করা হচ্ছে!” তারপরেই সভা থেকে বহু লোক সমস্বরে একই অভিযোগ করতে থাকেন। কেউ কেউ চিৎকার করে বলতে থাকেন, “আপনার পাশে মঞ্চে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা অনেকেই এ কাজ করছেন!” মঞ্চে তখন ছিলেন জেলা কমিটির বহু নেতা। তাঁরা সকলেই চরম অস্বস্তিতে পড়েন। পরিস্থিতি সামলাতে বিমানবাবুকে চিৎকার করে বলতে হয়, “শুনুন। শুনুন। আপনারা যা বলছেন, তাতে না করছি না। কিন্তু সকলেই এ কাজ করেন না। কেউ কেউ করেন। তাঁদের সতর্ক হতে হবে। বুঝতে হবে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।”
সেখানেই না-থেমে বলেন, “যেখানে শাসক তৃণমূল রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিকে ধ্বংস করতে চাইছে, সেখানে যারা আমাদের পার্টির পতাকাতলে সমবেত হবে, তারা যাতে কোনও অপরাধমূলক কাজে যুক্ত না থাকে, তা সকলকে দেখতে হবে।” আরও একধাপ এগিয়ে নেতাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “কেউ অপরাধমূলক কাজে অংশ নিয়ে থাকলে সেই ব্যক্তিকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। না-হলে জনগণ বিশ্বাস করবে না। অপরাধ যা হয়েছে, হয়েছে। আর যেন না হয়।” বিমানবাবুর এই সতর্কবার্তায় নিচু তলার কর্মীরা অত্যন্ত খুশি। ১৯৬৮ সালে ভারতের আটটি রাজ্যে অ-কংগ্রেসি সরকার গঠিত হওয়ায় সিপিএমের পক্ষ থেকে এক দলিলে বলা হয়েছিল, ‘নতুন পরিস্থিতি এবং পার্টির কর্তব্য’। তার উল্লেখ করে বিমানবাবু বলেন, “এ বার যে ভাবে বামপন্থী স্লোগানের মোড়কে দক্ষিণপন্থী শক্তি রাজ্যের মানুষের বিপুল সমর্থন পেয়ে জিতেছে, তা-ও এক নতুন পরিস্থিতি।” কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার তার কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করার ব্যাপারে জনগণের সমস্যাকে ‘উপেক্ষা’ করছে বলে বিমানবাবুর অভিযোগ।
বিমানবাবুর মতে, কলকাতাকে লন্ডন বানানোর মতো কর্মসূচি গ্রহণ না-করে বর্ষা ঠিকমতো না-হওয়ায় চাষের জলের অভাব, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এমনকী, মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সর্বদল বৈঠক ডাকা উচিত বলেও বিমানবাবু মনে করেন। দলীয় কর্মীদের প্রতি বিমানবাবুর নির্দেশ, এ সব সমস্যা নিয়ে ছোট ছোট সভা করে মানুষকে বোঝাতে হবে। সেই সঙ্গে রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাস, খুন এবং নিজের বাড়িতে থাকতে তৃণমূলকে জরিমানা দেওয়ার কথাও বলতে হবে। বিমানবাবুর কথায়, “এই প্রচারের মধ্যে দিয়েই মানুষের মধ্যে চেতনা আসবে। তখন তারা নিজেরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।” বস্তুত, দলের একাংশের অভিমত, জেলা বা লোকাল কমিটির নেতারা নিজেদের সংশোধন না করলে যে সাধারণ মানুষ সিপিএমের পতাকাতলে আসবে না, তা বুঝতে পেরেই সোমবার নজরুল মঞ্চের পরে এ দিন বরাহনগরেও নেতাদের সতর্ক করলেন বিমানবাবু।
Previous Story Rajya Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.