|
|
|
|
অমিতকে ডেকে পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী |
সাহায্যের অনেকটা এমনিই প্রাপ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এ যেন তেলমাখা বাঁশ বেয়ে বাঁদরের ওঠার গল্প!
এক বার আলোচনা এগোচ্ছে। পর ক্ষণেই আবার জটিলতা তৈরি হয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে কয়েক ধাপ।
রাজ্যের জন্য আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে বোঝাপড়ার আবহ তৈরি করে দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছিলেন, চলতি বছরে রাজ্যের ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। সেই অনুযায়ীই আর্থিক প্যাকেজ তৈরির কাজ চলছে। কী ভাবে, কোন পথে এই আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া যায়, তা নিয়ে গত কাল রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রর সঙ্গে প্রণববাবুর দীর্ঘ বৈঠকও হয়। কথা ছিল, আজ ফের এক দফা আলোচনা হবে। কিন্তু সেই বৈঠক বাতিল করে দিয়ে আজ সকালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতায় ফিরে যান অমিতবাবু। তাঁর সঙ্গে ফিরে যান রাজ্যের অর্থসচিব সি এম বাচাওয়াতও।
মহাকরণ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে গত কাল যে সব বিষয় জানানো হয়েছিল, আজ তা সবিস্তার মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন অমিতবাবু। সব শুনে মমতা রায় দেন, রাজ্য সরকারকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে। এই ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য অমিতবাবুকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন রাজ্য সরকারকে ধোঁকা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন মমতা?
মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, অর্থ মন্ত্রক বলছে কেন্দ্র স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে অর্থ বরাদ্দ করে তার বাইরেও এ বছর রাজ্যের ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু যে প্যাকেজের হিসাব দেওয়া হয়েছে, তার পরিমাণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে এমনিতেই রাজ্যের পাওনা। ফলে বাস্তবে আর্থিক সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত আর্থিক প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত যে যে খাতের টাকা এমনিতেই প্রাপ্য বলে রাজ্যের দাবি, সেগুলি হল: কেন্দ্রের কাছ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অধিকার, জওহরলাল নেহরু জাতীয় নগর পুনরুজ্জীবন মিশনের আওতায় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং ক্যানসার প্রতিরোধ কর্মসূচিতে ৬০০ কোটি টাকা। ফলে এই প্যাকেজ কোনও ভাবেই মেনে নিতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে আর্থিক প্যাকেজের বিষয়টি বিশ বাঁও জলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে এর মধ্যে একটি ইতিবাচক দিক হল, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পরামর্শ শুনে রাজ্য সরকার পূর্ণাঙ্গ বাজেট তৈরি করতে আপাতত রাজি হয়েছে। ঠিক হয়েছে, অগস্টের শেষ সপ্তাহে রাজ্য পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবে। প্রণববাবুর বক্তব্য, পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করে রাজ্য নতুন আয়ের উৎস ও কর এবং কর-বহির্ভূত খাতে রাজস্ব বাড়ানোর পথ দেখালে, বিভিন্ন নতুন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে আর্থিক সাহায্য দেওয়া কেন্দ্রের পক্ষে সহজ হবে। কারণ যে সব প্রকল্পে কেন্দ্র অর্থ সাহায্য দেবে, সেই প্রকল্পে রাজ্যের দায়ের অংশ কোথা থেকে আসবে, তার নিশ্চয়তা প্রয়োজন।
আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে অমিতবাবু কলকাতা ফিরে গেলেও, আগামিকাল ফের তিনি দিল্লি আসছেন বলে মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে। কাল দুপুরে প্রণববাবুর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হওয়ার কথা। কাজেই গোটা আলোচনাটা একেবারে ভেস্তে যাচ্ছে না বলে দু’পক্ষই মনে করছে। তবে সেই বৈঠক হলেও রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগের সুর মমতা আরও চড়াতে চাইছেন বলেই তৃণমূল সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে মমতা-প্রণব বৈঠকের আগে বরফ পুরোপুরি গলার সম্ভাবনা নেই। আর্থিক প্যাকেজের বিষয়টি নিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে ইতিমধ্যে নিজেই জানিয়েছেন প্রণববাবু। |
|
|
|
|
|