দু’বছর পর ঘরে ফিরল পালিয়ে যাওয়া ছেলে
ঠিক সিনেমায় যেমন হয়। বাঁকুড়ার ইন্দাসের হবিবুরের গল্পটা তেমনই।
তখন সবে বারো’য় পড়েছে সে। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে মা রোজই বলতেন, ‘খেটে খা! নিজের ভাত নিজে যোগাড়ের চেষ্টা কর...” অভিমানী কিশোরের সহ্য হত না এই বকাঝকা। একদিন সত্যি সত্যিই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। বাড়ির সাইকেল বিক্রি করে যোগাড় করে কিছু টাকা। পৌঁছয় বর্ধমান স্টেশনে। সামনে যা ট্রেন পায় উঠে পড়ে তাতেই। না জেনেই পৌঁছে যায় মহানগরীতে। কলকাতায়। তারপর ইতিউতি ঘুরে যাদবপুর স্টেশনে রাত্রিবাস। ইতিমধ্যে ফুরিয়ে যায় সাইকেল বিক্রি থেকে পাওয়া টাকা। পেটপুরে খাওয়ার জন্য পরের দিন রাজমিস্ত্রির যোগানদারের কাজ জুটিয়ে নেয় হবিবুর। এখান থেকে কাজে যোগ দেয় এক ত্রিপল তৈরির কারখানায়। এই সব করে কেটে যায় প্রায় দু’বছর। সে যখন একটি চায়ের দোকানে কাজ করছে তখনই শিশুশ্রমের দায়ে চলতি বছরের ২২ মে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায়। হবিবুর অবশ্য পুলিশকে তার নাম বলেছিল সিরাজুল। ঠিকানাও বলেনি স্পষ্টভাবে।
মায়ের সঙ্গে হবিবুর। ছবি: শুভ্র মিত্র।
পুলিশ তাকে তুলে দেয় শিশু শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। সেখান থেকে গত ২৯ জুলাই তাকে পাঠানো হয় বিষ্ণুপুরের খড়িকাশুলি গ্রামের সুমঙ্গলম সরকারি হোমে। কথায় কথায় হবিবুর বুঝতে পারে সে রয়েছে আপন জেলাতেই। আবেগের বশে হোম কর্মীদের বলে ফেলে, তার আসল নাম হবিবুর মল্লিক, মায়ের নাম পূর্ণিমা মল্লিক। বাড়ি ইন্দাসের কড়িশুন্ডায়। বুধবারই হোম কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পুলিশের মাধ্যমে গ্রামের বাড়িতে খবর যায়। পত্রপাঠ ছুটে আসেন মা। এ দিন দুপুরে হারানিধির দেখা পেয়েই বুকে জড়িয়ে ধরেন আদরের তাকে। ছেলের গলা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, “এতদিন কোথায় গিয়েছিলি বাবা? তোকে আর কাছ ছাড়া করবো না। এখনই বাড়ি নিয়ে যাব।” মা কে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হবিবুরও বলে, “যাব, তোমার সঙ্গেই যাব। আর কোথাও যাব না।”
যদিও এদিন আইনি জটিলতার কারণে বাড়ি ফেরা হয়নি হবিবুরের। হোম সুপার অমিয়কুমার মণ্ডল বলেন, “পূর্ণিমার সঙ্গে সরকারি পরিচয় পত্র ছিল না। তাই নিয়ম অনুযায়ী এ দিন হবিবুরের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি।” তিনি জানান, পূর্ণিমাকে জানানো হয়েছে, যেহেতু তাঁরা একে অপরকে চিনতে পেরেছেন তাই আজ, বৃহস্পতিবার পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির’ সদস্যরা হবিবুরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবেন। এ দিন ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে না পারলেও তাকে ফিরে পেয়েই আনন্দে আত্মহারা পূর্ণিমাদেবী। বললেন, “হবিবুরের বাবা বহু দিনআগে মারা গেছেন। তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছি। হবিবুর মেজ ছেলে। ও হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমরা ওর খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছি।” তাঁর কথায়, “দু’বছর ধরে খুঁজেও কোথাও না পেয়ে ধীরে ধীরে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। তখনই হোম থেকে ওর খবর আসে। আমরা খুব খুশি। আল্লাহ’র দয়ায় ওকে ফিরে পেয়েছি।”
Previous Story Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.