|
|
|
|
সন্দেশখালি, নামখানায় সেচ দফতরের বিরুদ্ধে তোপ বাসিন্দাদের |
বাঁধ ভেঙে ভেসে গেল ঘরবাড়ি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • সন্দেশখালি ও নামখানা |
বার বার সেচ দফতর থেকে প্রশাসনের নানা জায়গায় বাঁধ সারানোর জন্য তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ২০০৯ সালে আয়লার সময় থেকেই উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির বেশ কিছু এলাকায় নদীবাঁধের অবস্থা খুবই সঙ্গীন। মাঝেমধ্যেই বাঁধ ধসে গ্রামে জল ঢুকে ক্ষতি হয়েছে চাষের, ঘরবাড়ির। কিন্তু টনক নড়েনি প্রশাসনের। পাকাপাকি মোরমতির বদলে স্রেফ তাপ্পির কাজ করা হয়েছে। এই অবস্থায় ফের সোমবার রাত থেকে বাঁধে ধস নামার ফলে সন্দেশখালি ২ ব্লকের বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালেও আরও বেশ কিছু এলাকায় জুড়ে ধস নামে।
বুধবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ওই এলাকায় স্থানীয় বিধায়ক-সহ, সেচ দফতরের প্রতিনিধিরা গেলে বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। এমনকী তাঁদের উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্যও ভেসে আসে, ‘বাঁধের খারাপ অবস্থার কথা বার বার জানালেও তো গ্রামে আপনাদের পা পড়েনি। এখন বাঁধ ভাঙার পরে সরকারের তেল পুড়িয়ে আপনারা কি মজা দেখতে এসেছেন। যান ফিরে যান’। বাসিন্দারা ঘেরাও করেন সেচ দফতরের কালিনগর ডিভিশনের এসডিও ষোড়শী কুমার ভট্টাচার্যকে। তিনি বলেন, “টাকা না থাকার কারণেই এতদিন বাঁধ মেরামতির কাজ করা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ৪০ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে। কাজ সবে শুরু হচ্ছিল, সেই সময়েই বাঁধ ভেঙে এই বিপ্তি।” তিনি জানান, জল কমলে ওই এলাকায় ৮২০ মিটার জুড়ে রিং বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হবে। শুধু সন্দেশখালিতেই নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকে মুড়িগঙ্গার বাঁধ ধসে নামখানা গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। ভেসে গিয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি।
|
|
নামখানার দক্ষিণ নারায়ণগঞ্জ গ্রামের কাছে ভেঙে গিয়েছে মুড়িগঙ্গার বাঁধ। ছবি: দিলীপ নস্কর। |
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু দিন ধরেই সন্দেশখালি ২ ব্লকের আতাপুরে বাঁধের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছিল। সোমবার রাত থেকেই বাঁধের মাটি ধসে যেতে থাকে। মঙ্গলবার সকালে হুড়মুড়িয়ে প্রায় ৪০০ ফুট এলাকায় বাঁধ ধসে গেলে রায়মঙ্গল নদীর জলে প্লাবিত হয় পূর্ব ও পশ্চিম আতাপুর, মনিপুর, দুয়ারিপাড়া, মোল্লাপাড়া, কাছারিপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকা। বহু মানুষ পরিবার, গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের উপরে। পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সর্বত্র জল থাকায় বন্ধ রান্নাবান্না। এই অবস্থায় ত্রাণের আশায় বসে রয়েছেন দুর্গতেরা। বাঁধ সারানোর কাজে প্রশাসনের গা ছাড়া মনোভাবের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মানুষ বুধবার সন্দেশখালির বিধায়ক নিরাপদ সর্দার ও সেচ দফতরের লোকজন ওই এলাকায় গেলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান ভাগ্যধর মণ্ডল অভিযোগ করেন, “সুন্দরবন সংলগ্ন এই সব গ্রামের মানুষের কথা কেউ ভাবেন না। তাই বার বার বাঁধের খারাপ অবস্থার কথা জানানো হলেও কেউই তাতে কর্ণপাত করেননি। শুধু প্রতিশ্রুতিই পাওয়া যায়। বাঁধ সারাই হয় না। তাই খোনকার মানুষের এই ক্ষোভ যুক্তিসঙ্গত।” পরে অবশ্য বিধায়ক সকলের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় জনতা শান্ত হয়। বিধায়ক জানান, দুর্গতদের জন্য আতাপুর হাইস্কুল, মহদআলি মোড়, তালতলা ঘাট, গোপালের ঘাট এবং ফড়িয়া মোড় এলাকায় ত্রাণ শিবির খোলার ব্যবস্থা হয়েছে। |
|
সন্দেশখালি ২ ব্লকে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবন। ছবি: নির্মল বসু। |
অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নামখানা ব্লকের নামখানা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও পরিস্থিতি একই। এখানকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, দিনের পর দিন মুড়িগঙ্গার বাঁধ ক্ষয়ে যাওয়ার ফলেই এই বিপত্তি ঘটেছে। অথচ বাঁধের সংস্কারের জন্য তাঁরা সেচ দফতর এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দেলর নেতাদের বার বার জানিয়েছেন। কিন্তু কারও তাঁদের দিকে তাকানোর সময় হয় না।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে নামখানা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ নারায়ণগঞ্জ গ্রাম লাগোয়া প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঁধের মাটি ধসে গিয়ে মুড়িগঙ্গার জল ঢুকে ভেসে গিয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি। ক্ষতি হয়েছে চাষের। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বাঁধ ভেঙে ঘর-বাড়ি ভেসে গেলেও এখনও প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য বা কাউকেই কোনও খোঁজ নিতে দেখা যায়নি। এ দিন ওই পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুমারেশ পন্ডা বলেন, “সেচ দফতরের গাফিলতিতেই আজ এই অবস্থা। রিং বাঁধ দিয়ে এখন গ্রামে জল ঢোকা আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” বিডিও শিলাদিত্য চক্রবর্তী বলেন, “ওই নদীবাঁধ লাগোয়া ১০টি পরিবারকে অন্যত্র সরানোর পরে রিং বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হবে। যাঁদের ঘর ভেসে গিয়েছে, ইন্দিরা আবাস যোজনায় তাঁদের ঘর তৈরির ব্যবস্থা করা হবে।” |
|
রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবন। সুন্দরবনের আতাপুরে। ছবি: নির্মল বসু। |
নামখানা সাব ডিভিশনাল সেচ দফতরের বাস্তুকার প্রদীপ হালদার বলেন, “আপাতত মাটির বস্তা ফেলে গ্রামে জল ঢোকা বন্ধ করা হচ্ছে। পরে জল নেমে গেলে পাকাপাকিভাবে রিং বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করা হবে।”
পুলিশকর্মীদের বাড়ি ‘দখল’ নিয়ে বিতর্ক থামেনি
নিজস্ব সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: পুলিশের অনুরোধ সত্ত্বেও বগুলার একটি পুলিশ শিবিরের পুলিশকর্মীরা যে বাড়িতে থাকতেন, তা থেকে পতাকা-ব্যানার খোলেনি কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ। রবিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ওই বাড়িটি পতাকা, ব্যানার লাগিয়ে ‘দখল’ করে তারা।
জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস বলেন, “পুলিশ আমাদের বারবার ফোন করে পতাকা খুলে নিতে বলেছে। কিন্তু আমাদের একটাই কথা, আগে এটা নিশ্চিত করা হোক যে, ওই বাড়ি ও ঘরগুলি সরকারি কাজ ছাড়া অন্য কোনও কারণে ব্যবহার করা হবে না, তা হলেই আমরা পতাকা খুলে নেব।” জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতি শশাঙ্ক বিশ্বাসের অবশ্য সোজা কথা, “আমরা চাই জেলা পরিষদের ওই সম্পত্তি দখল মুক্ত হোক। ওই জায়গায় পশু চিকিৎসালয় করার প্রস্তাবও আমরা দিয়েছি।” জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “আমরা পতাকা খুলে নিতে বলেছি।” ওই বাড়ি ও ঘর যাঁদের সম্পত্তি সেই জেলা পরিষদ কী বলছে? জেলা সভাধিপতি মেঘলাল শেখের কথায়, “আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|