|
|
|
|
মুগা দেখে মুগ্ধ হিলারির প্রতিনিধি রিটা |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • শুয়ালকুচি (অসম) |
তাঁর নামের উচ্চারণ অনেকটাই স্থানীয়। রিটা-রীতা। তাই মার্কিন মেমসাহেবের সঙ্গে নামের মিল পেয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলেন শুয়ালকুচির রীতা দাস।
সেই রিটা এলেন, দেখলেন, বিস্তর হাসলেন। চলেও গেলেন। কিন্তু শুয়ালকুচির রেশম শিল্পীরা বুঝতেই পারলেন না, লালবাতি
গাড়ি আর কনভয় নিয়ে আসা ‘কালো’ মেমসাহেব তাঁদের কোন মোক্ষ সাধন করবেন। তাঁতঘর ভ্রমণ সেরে রিটা ‘বাইদেও’ (দিদি) সোজা চললেন সচিবালয়। যা দেখলেন, যা বুঝলেন তার সারাৎসার পৌঁছবে মার্কিন ‘সেক্রেটরি অফ স্টেট’ হিলারি ক্লিন্টনের কাছে। তাই এখান থেকেই শুরু হতে পারে শুয়ালকুচির বিশ্বায়ন।
হিলারির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রিটা জো লিউইস-এর পদমর্যাদাটি বেশ খটমট। মার্কিন দেশের হয়ে, বিশ্ব আন্তঃসরকার কর্মকাণ্ডের বিশেষ প্রতিনিধি তিনি। এর আগে আমেরিকার নানা দফতরে ব্যবসা উন্নয়ন, শিল্প বিকাশ, এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকায় তাবড় প্রকল্পগুলির আইনগত ও পরিকাঠামোগত বিকাশের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বণিক সংস্থা, ইউ এস চেম্বার অফ কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্টও ছিলেন। ক্লিন্টনের আমলে তিনি ছিলেন হোয়াইট হাউসে, রাষ্ট্রপ্রধানের বিশেষ রাজনৈতিক পরামর্শদাতা। তাই অসমের রেশম শিল্পের প্রাণকেন্দ্রে আসা রিটাদিদির ধার ও ভার অনেক তা বলাই বাহুল্য। শুয়ালকুচি এসে তিনি দুটি বয়নকেন্দ্র ঘুরে দেখেন। পুলিশ ও সরকারি আমলাদের ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি হল বিস্তর, মত বিনিময় হল না বললেই চলে। তারমধ্যেও তাঁত নিয়ে বসা মহিলাদের সঙ্গে দোভাষির মাধ্যমে আলাপ সারলেন। নিজেও একবার তাঁতে বসলেন। কেবল তাঁত বোনাই নয়, রেশম শিল্পীদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন রিটা। তাদের কষ্ট ও অভাবের তালিকা এত বড় যে পুরোটা তাঁর শোনাই হল না। |
|
শুয়ালকুচিতে রেশম বয়ন কেন্দ্র ঘুরে দেখছেন রিটা। নিজস্ব চিত্র। |
বয়ন কেন্দ্রের পাট চুকিয়ে, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। শুয়ালকুচি রেশম বয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়ে রিটা চমকিত। রেশমের নানা ধরন, ভেষজ রং-এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে জানতেই সামনে এক বৃদ্ধাকে দেখে থমকে গেলেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ‘ছাত্রী’, ৮০ বছরের মহেশ্বরী বৈশ্য রীতিমতো আগ্রহ নিয়ে বিদেশিনীকে বললেন, “জন্ম থেকেই কাপড় বুনি। এখানে ছাত্রী হিসেবে শিখতে এসেছি। দেখি, নতুন কিছু জানতে পারি কী না। বাড়ি গিয়ে বাকিদের শেখাতে হবে তো!” পরীক্ষাগার, বয়নকেন্দ্র দেখার পরে উপরের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে আবার চমক! ৭০ বছরের প্রণতিদেবীর সঙ্গে একই ক্লাসে রেশমের খুঁটিনাটি শিখছে ১৭-১৮ বছরের মেয়েরা। ঋতুপর্ণা বণিক্য ব্যাগ থেকে তাঁর আঁকা মেখলার নক্শা বের করে রিটার সামনে মেলে ধরলেন। মুখে কথা সরে না। রিটা জানতে চাইলেন এমন নক্শা বানানো শিখতে কতদিন লেগেছে? যেখানে মায়ের পেট থেকে মেখলার নক্শা শিখে আসে মেয়েরা, সেখানে এই প্রশ্নের কী কোনও জবাব হয়? আগ বাড়িয়ে এক আমলাই উত্তর দিয়ে দিলেন, ‘‘৪-৫ দিনেই শিখে গিয়েছে।’’
হিলারির ভারত সফরের পিঠোপিঠি রিটার সফর শুরু হয়েছে। অসম ছাড়াও, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল ও মহারাষ্ট্রে যাবেন তিনি। দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি ও শিল্পের যোগাযোগ বাড়াতেই তাঁর আসা। শুয়ালকুচিতে এসে বারবারই রিটাকে শুনতে হল, অসমে আবদ্ধ থাকতে চান না শিল্পীরা। বিশ্বের বাজারে নিয়ে যেতে যান মুগা, মেখলার শিল্পকলা। ‘সিস্টার সিটি প্রকল্প’ ও শিল্পের আদান-প্রদান নিয়ে নানা কর্মকাণ্ড চলছে আমেরিকায়। রিটা বললেন, “এখানকার শিল্পকলা দেখে আমি মুগ্ধ। এখানকার নেতা ও মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলব। শিল্পকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিলেই তার কদর বাড়ে। পুরো বিষয়টি নিয়ে দেশে ফিরে কিছু একটা করতে হবে।” এই শেষের ভরসাটুকুই সারকথা। |
|
|
|
|
|