নির্বিঘ্নে চলল সংসদ
কংগ্রেস-বিজেপি ‘আঁতাঁতে’ বিপাকে বামেরা
কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে শাসক দলের আলোচনা সাপেক্ষে সংসদে আজ যে আপাত শান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, সেটাই নতুন রাজনৈতিক প্রশ্ন তুলে দিল! সিপিএম থেকে সিপিআই, এডিএমকে থেকে বিএসপি সকলেরই প্রশ্ন, তা হলে কি তলে তলে সমঝোতা করে ফেলেছে কংগ্রেস-বিজেপি? এমনকী, সংসদে দাঁড়িয়ে সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত আজ এই প্রশ্নটাই করলেন বিজেপি নেতৃত্বকে।
লোকসভায় আজ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রস্তাব এনে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংসদের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীই জানিয়ে দিচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে বিতর্ক কখনও মসৃণ হয়নি। অন্তত এ ব্যাপারে বিরোধীদের আক্রমণ বরাবরই উঁচু তারে বাঁধা থেকেছে। তাতে বাধা দিয়েছে ট্রেজারি বেঞ্চ। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সমালোচনায় বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা আজ যে ভাবে বিতর্ক শুরু করেছেন, তা নিয়েই মূলত প্রশ্ন তুলেছেন বামেরা। প্রথমত, প্রস্তাবের ভাষা নিয়ে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। কারণ তাঁদের বক্তব্য, প্রস্তাবের ভাষায় ‘সরকারের ব্যর্থতার’ উল্লেখ নেই। তার ওপর সরকারের সমালোচনায় রাজনৈতিক ধারও নেই বিজেপি-র। তত্ত্বগত ভাবে সরকারের সমালোচনা থাকলেও, রাজনৈতিক ভাবে কংগ্রেসকে ‘কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো’ শব্দের বিশেষ ব্যবহার তিনি করেননি। সেই প্রেক্ষিতেই চার বাম দল-সহ বিরোধী বেঞ্চের অনেকেরই অভিযোগ, সংসদ চালাতে কংগ্রেস-বিজেপি ‘ডিল’ (চুক্তি) করে ফেলেছে!
বস্তুত, এই অভিযোগের জবাব দিতে আজ জেরবার হতে হল বিজেপি নেতৃত্বকেও। বিশেষ করে লোকসভায় বিতর্কের মাঝে সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, কংগ্রেস ও বিজেপি আঁতাঁত করে সর্বভারতীয় স্তরে দ্বিমেরু রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করতে চাইছে। জবাবে যশবন্ত অবশ্য বলেন, প্রস্তাবের ভাষা নিয়ে বিজেপি সন্তুষ্ট। সব কথাই যে লাঠি দিয়ে মেরে বোঝাতে হবে, তা নয়। প্রস্তাবের ভাষার মধ্যেই সরকারের ব্যর্থতার কথা নিহিত রয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন এই পথে হাঁটল বিজেপি?
দলের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সংসদের গোটা শীতকালীন অধিবেশন ও আংশিক ভাবে বাজেট অধিবেশন অচল করে রাখার পর কৌশলগত ভাবেই বিজেপি এ বার অচলাবস্থা তৈরি করতে চায়নি। কেন না, তাতে বিজেপি সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতে, এতে দৃষ্টান্ত তৈরি হয়ে যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি বা দুর্নীতির মতো বিষয় অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। ফলে ভবিষ্যতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে তখন বিরোধী আসনে বসে কংগ্রেসও এ ভাবেই অচলাবস্থা তৈরি করবে। তখন বিজেপি’র ভূমিকাই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হবে। সুতরাং ‘দায়িত্বশীল’ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে বিজেপি’কে।
বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, আন্না হাজারে ও রামদেব-পর্বও জানিয়ে দিচ্ছে যে, বিরোধীদের স্থান তাঁরাই এখন দখল করতে চাইছেন। সংসদ দীর্ঘদিন অচল থাকাও এর পিছনে একটা বড় কারণ। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-ও এখন কৌশলে পা ফেলছে। আগামিকাল সংসদে লোকপাল বিল পেশ হতে চলেছে। এই অবস্থায় আন্না হাজারে শিবির বিরোধী দলগুলির কাছে দাবি জানিয়েছে, তারা যেন বিলটি পেশ হতে না দেয়। কিন্তু বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, এই নিয়ে অবস্থান রাজনৈতিক দলগুলিই স্থির করবে। এ ব্যাপারে আন্না হাজারেদের পরামর্শ নিষ্প্রয়োজন।
বিজেপি’র এই ‘দায়িত্বশীল’ ভূমিকায় স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তিতে কংগ্রেস। কারণ, অনেক দিন পর আজ সংসদে কিছুটা হলেও শান্তিপূর্ণ বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব এ-ও মনে করছেন, সংসদে অচলাবস্থা তৈরি হওয়ার ফলেই বিচারব্যবস্থা অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছিল। সংসদ সুষ্ঠু ভাবে চললে তাই ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যাবে।
কিন্তু বামেরা দৃশ্যতই মুশকিলে। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, বিজেপি নেতৃত্ব যতটা না বামেদের সঙ্গে সমন্বয় চাইছিলেন, তার থেকে বেশি আগ্রহী ছিলেন বামেরা। কারণ বিজেপি’কে পাশে পেলে তাঁরা সরকার বিরোধিতায় বল পেতেন। অথচ বিজেপি-কংগ্রেস ‘সমঝোতার’ পরিস্থিতিতে আজ দৃশ্যতই কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন বামেরা। এই অবস্থায় চার বাম দলের পক্ষ থেকে গুরুদাসবাবু আজ সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করেন। কাল তাঁরা এ বিষয়ে ভোটাভুটিও চাইতে পারেন।
তবে এ সবের পাশাপাশি আজ লোকসভায় মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় তাত্ত্বিক ভাবে বিজেপি-সহ বিরোধীরা সরকারের সমালোচনাই করেছেন। যশবন্ত সিনহা বলেন, মূল্যবৃদ্ধির কথা উঠলেই সরকার বারবার আর্থিক বৃদ্ধির দোহাই দেয়। কিন্তু বিজেপি’র বক্তব্য, মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতি তৈরি করে মানুষকে বিপাকে ফেলে, এমন বৃদ্ধি অর্থহীন। সেই সঙ্গে পরোক্ষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে কটাক্ষ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশে যশবন্ত বলেন, “আপনাকে ভোটে জিতে আসতে হয়। আপনি অন্তত বুঝবেন যে মানুষের অসন্তোষ কতটা!” অন্য দিকে, সরকারের তরফে বিতর্কে অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, মূল্যবৃদ্ধি এখন বিশ্বজনীন সমস্যা। ভারত তার থেকে বেরিয়ে আসতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তার দিশা দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরেই সলমন বলেন, হিন্দির ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ মনে আছে নিশ্চয়ই, ‘মেরে পাস মা হ্যায়’! আমাদের কাছে তেমনই মনমোহন সিংহ রয়েছেন।”

গুরুদাসের ‘ভুল’
সংসদে তখন কংগ্রেস-বিজেপি ‘আঁতাঁত’ নিয়ে তুমুল সমালোচনা করছেন গুরুদাস দাশগুপ্ত। সেই সময় শাসক দলের সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলে ওঠেন, “যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তাঁরা মনে করেন এমনই চলবে। চির কালই তাঁরা ক্ষমতায় থেকে যাবেন।” অমনি কংগ্রেস বেঞ্চ থেকে টিপ্পনি, ‘আপনারাও তো সেটাই মনে করতেন।’ মুহূর্তে থমকান সিপিআই নেতা। তার পরেই বলেন, “মানছি সে কথা। সেটা ভুল হয়েছিল!”
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.