হস্তক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীরও
ফের ‘বেঘর’ দীনেশ, ক্ষুব্ধ মমতার ফোন
পুনরাবৃত্তি। পরপর দু’দিন। সংসদে রেলমন্ত্রীর ঘর নিয়ে টানাপোড়েন আবারও।
বারবার একই ঘটনা ঘটায় বিষয়টি স্বভাবতই হালকা ভাবে নিতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব।
গত কাল এক বার বেহাত হতে বসেছিল রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর ঘর। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। ছুটে আসেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশলও। এই নিয়ে যাতে আর ভুল বোঝাবুঝি না থাকে, তার জন্য অনুরোধ করা হয় দীনেশকেও। কিন্তু আজও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। যার জেরে লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক দীনেশকে সারতে হয়েছে করিডরে দাঁড়িয়েই। প্রতিকার চেয়ে আজ ফোন করতে বাধ্য হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
গত কাল, রেলমন্ত্রী তখন সংসদের অধিবেশন কক্ষে। কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক এবং সিপিডব্লিউডি-র কর্মীরা ৬ নম্বর ঘর থেকে দীনেশ ত্রিবেদীর নামের ফলক খুলে সে জায়গায় অম্বিকা সোনির নামফলক বসাতে উদ্যত হন। রেলমন্ত্রীর কাছে খবর যায়। তিনি প্রণববাবুকে বিষয়টি জানান। প্রণববাবু পবন বনশলকে ডেকে বিষয়টি মিটমাট করে দেন। ঘটনাটি অবশ্যই ভাল লাগেনি দীনেশের। ঘর দখল হবে, এমন কোনও খবরও আগে থেকে তাঁকে কেউ দেয়নি। কালই তিনি বলেছিলেন, “ব্যক্তিগত মান-অপমানের বিষয় নয়। ৩০ বছর ধরে ৬ নম্বর ঘরটি রেলমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দ।”
প্রণববাবুর হস্তক্ষেপের পরে কাল সন্ধ্যায় ঘরের দরজায় ফিরে এসেছিল দীনেশের নামফলক। কিন্তু চিত্রনাট্য ফের বদলে যায় আজ বেলা দশটা নাগাদ। রেল কর্মীদের মতে, ওই সময় সংসদের বেশ কিছু কর্মী এসে দীনেশের নামের ফলক খুলে নিয়ে যায়। দীনেশ বিষয়টি জানতে পারেন বেলা একটা নাগাদ। সেই সময় প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব তাঁর এলাকার কিছু রেল প্রকল্প নিয়ে তদ্বির করতে দীনেশের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে ঠিক ছিল। দীনেশ ৬ নম্বর ঘরে ঢুকতে গিয়ে জানতে পারেন, ওই ঘরের উপর কোনও দাবি নেই তাঁর। এক রাতেই পাল্টে গিয়েছে মালিকানা! ক্ষুব্ধ দীনেশ এর পর ওই ঘরের সামনে সংসদের করিডরে একটি বেঞ্চের উপরে বসেই লালুপ্রসাদের সঙ্গে প্রায় আধ ঘণ্টা বৈঠক করেন।
প্রাক্তন ও বর্তমান রেলমন্ত্রীর এই ‘করিডর-বৈঠক’ স্বভাবতই চাঞ্চল্য ছড়ায় সংবাদমাধ্যমে। খবর পেয়ে ঘুরে যান অনেক সাংসদও। পরে দীনেশ বলেন, “এটা কোনও প্রতিবাদ নয়। রেলমন্ত্রীর বসার কোনও ঘর নেই। তাই বাধ্য হয়ে এ ভাবে করিডর-বৈঠক করতে হল।” দীনেশ মুখে এ কথা বললেও ওই বৈঠকের খবরে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয় গোটা সংসদে। তৃণমূলের মুখ্য সচেতক সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি সুদীপকে সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশলেরসঙ্গে দেখা করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলতেও অনুরোধ করেন। সুদীপবাবু প্রধানমন্ত্রীকে জানান, সংসদে যে কোনও সমস্যায় দলীয় সাংসদদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতেই নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। সেই জন্যই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছুটে এসেছেন। ঘর ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আলাদা করে দাবি জানান দীনেশও। যদিও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে পবন বনশলের সঙ্গেও বৈঠক করেন। মমতা নিজেও বনশলকে ফোন করেন। পরে সুদীপবাবু বলেন, “বনশল মমতাকে বলেছেন, ঘরটি দীনেশের কাছেই থাকবে। যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত মিটে যাবে।”
সংসদে এই চলতি অধিবেশন শুরুর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ানিধি মারান ও মুরলী দেওরা। সুতরাং সংসদের এক তলায় তিনটি ঘর খালি হয়েছে। ফলে সংসদীয় মন্ত্রক ঠিক করেছিল, বয়স ও মন্ত্রিত্বে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ওই তিনটি ঘর গুলাম নবি আজাদ, সুশীল শিণ্ডে ও অম্বিকা সোনিকে বণ্টন করা হবে। এর মধ্যে রেল মন্ত্রকের হেফাজতে থাকা ৬ নম্বর ঘরটি অম্বিকা সোনিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর, তা নিয়েই যত সমস্যার সূত্রপাত। কংগ্রেস সূত্রে গত কালই বলা হয়েছিল, শারীরিক কারণে এক তলার ঘর চেয়েছিলেন অম্বিকা। সেই জন্যই তাঁকে ৬ নম্বর ঘরটি দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, কী কারণে রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের ঘরটিই হাতবদলের জন্য বেছে নেওয়া হল? যদি বা হল, সেটা দীনেশকে জানানো হল না কেন? এবং সর্বোপরি গত কাল আপাত ভাবে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসানের পরেও আজ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল কেন? কেন হস্তক্ষেপ করতে হল মমতাকে? কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের মধ্যে অন্তর্বিরোধের স্রোত যখন উধ্বমুখী হচ্ছে, তখন এ ধরনের ঘটনার অভিঘাত কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা তাই থাকছেই। আটচল্লিশ ঘণ্টার স্নায়ুযুদ্ধ আপাতত শেষ হয়েছে বলেই অবশ্য দাবি করছে দু’পক্ষই। সন্ধ্যায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় ঘরের মালিকানা ফিরে পেয়েছেন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। সত্যিই পেলেন কি? উত্তর জানা যাবে আগামী কাল।
First Page Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.