|
|
|
|
দোষ প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ |
হাইকোর্টে তিন সঙ্গী-সহ মুক্ত হাত-কাটা দিলীপ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
পুলিশ যথেষ্ট প্রমাণ দিতে না পারায় সল্টলেকে জোড়া খুনের ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে হাত-কাটা দিলীপকে বেকসুর খালাস করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। দিলীপের সঙ্গে খালাস করে দেওয়া হল তার তিন সঙ্গী রাজু বিশ্বাস, সহদেব মণ্ডল এবং অনুপ বেরাকেও।
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার এই চার জনকে বেকসুর ঘোষণা করে বলে, হাজার অপরাধী যদি ছাড়া পেয়ে যায় তা-ও ভাল। কিন্তু এক জনও নির্দোষ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়। এটাই বিচারব্যবস্থার মূল কথা। এই মামলায় আবেদনকারীরা যে প্রকৃতই দোষী, সে ব্যাপারে হাইকোটর্র্ নিঃসন্দেহ হতে পারেনি। কারণ তার সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ পুলিশ হাজির করতে পারেনি। সেই জন্যই তাদের বেকসুর খালাস করে দেওয়া হল বলে উল্লেখ করেছে হাইকোর্ট।
২০০৪ সালের ২৭ জুন সল্টলেকের নয়াপট্টিতে একটি জলসার আসরে গুলিতে নিহত হন দু’জন। পুলিশ হাত-কাটা দিলীপ-সহ চার জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে। নিম্ন আদালত চার জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেয়। নিম্ন আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে দিলীপ ও তার তিন সঙ্গী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয় নারায়ণ পটেল ও বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ চার আবেদনকারীকেই বেকসুর ঘোষণা করেছে। তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্সি ও দমদম সেন্ট্রাল জেলে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে। |
|
ফাইল চিত্র |
কে এই হাত-কাটা দিলীপ? আসল নাম দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় প্রোমোটার। কিন্তু উত্তর শহরতলিতে তোলাবাজ হিসেবেই পুলিশ মহলে তার পরিচয়। পুলিশ জানাচ্ছে, ১৯৯৫ সালে দমদমের বসাকবাগানে বোমা বাঁধতে গিয়ে বাঁ হাত জখম হয়। কব্জি থেকে কাটা পড়ে বাঁ হাত। তার পরেই নাম হয়ে যায়, হাত-কাটা দিলীপ। দমদম, লেকটাউন, পাতিপুকুর, নয়াপট্টি এলাকায় নয়ের দশকের শেষে দাপিয়ে বেড়াত সে।
পুলিশের নথি বলছে, সে সময় দিলীপ ছিল ওই এলাকার তোলাবাজ দলের পাণ্ডা পিনাকী মিত্রের ঘনিষ্ঠ। রাজনৈতিক ভাবে পিনাকী ছিল তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর শিবিরে। পরে এলাকা দখল নিয়ে পিনাকীর সঙ্গে দিলীপের সংঘাত শুরু হয়। দিলীপ ও পিনাকী দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় দুই শিবিরের টক্কর। পুলিশ জানায়, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে ১৯৯৯ সালে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দমদমের বাসিন্দা নোনা রায় খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হয় দিলীপ। চার মাস পরে জামিনে মুক্ত হয়। অভিযোগ, ফের এলাকা দখল নিয়ে শুরু হয়ে যায় তোলাবাজি। এ ছাড়াও কয়েকটি খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নাম ওঠে দিলীপের।
তবে হাত-কাটা দিলীপ সংবাদের শিরোনামে চলে আসে ২০০৪ সালের ২৭ জুন। ওই দিন সল্টলেকের নয়াপট্টিতে জলসায় একটি বিবাদকে কেন্দ্র করে গুলিচালনায় দু’জনের মৃত্যু হয়। ওই দিন দক্ষিণ দমদম পুরসভার নির্বাচন ছিল। পুলিশের নথি বলছে, ভোটপর্ব মিটে যাওয়ার পরে সাঙ্গোপাঙ্গদের সঙ্গে জলসায় যায় দিলীপ। সেখানে এক জন গায়িকা গান গাইছিলেন। এক জন নৃত্যশিল্পী গানের সঙ্গে নাচছিলেন। পুলিশের অভিযোগ, দর্শকদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ওই নাচ ‘অশ্লীল’ বলে প্রতিবাদ করেন। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দর্শকের একাংশের গণ্ডগোল বাধে। তখনই গুলি চলে এবং মিঠু শেখ ও অনিল প্রামাণিক নামে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পুলিশের বক্তব্য, দিলীপ এবং তার কয়েক জন শাগরেদই গুলি চালিয়েছিল। ঘটনার পরে এলাকা ছেড়ে পালিয়েযায় সে। ঘটনার প্রায় সাড়ে তিন মাস পরে হরিপালে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলার ষষ্ঠী দুলের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয় দিলীপ।
দিলীপদের আইনজীবী শেখর বসু ও সুদীপ্ত মৈত্র হাইকোর্টে তাঁদের সওয়ালে বলেছেন, জলসার আসরে গুলি চলেছে এবং দু’জনের মৃত্যু হয়েছে এটা ঘটনা। কিন্তু সেই মৃত্যুর জন্য দিলীপ ও তার তিন সঙ্গীই যে দায়ী, তার সপক্ষে পুলিশ কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ দিতে পারেনি। সাক্ষী হিসাবে পুলিশ যাঁদের পেশ করেছে, তাঁরা কেউই ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। পুলিশের তদন্ত করার পদ্ধতি নিয়ে বারবারই প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। হাত-কাটা দিলীপকে বেকসুর খালাস করার পরে হাইকোর্টের মন্তব্য সেটা আরও এক বার প্রমাণ করল। জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য বলছেন, তথ্যপ্রমাণ দেখেই নিম্ন আদালত দিলীপ ও তার সঙ্গীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল। পুলিশের অভিযোগ, দিলীপ জেলে বসেই দমদম এলাকায় তার জাল সক্রিয় রেখেছিল। দমদমের তোলাবাজ হিসাবে পরবর্তী কালে যে সব নাম পুলিশের খাতায় উঠেছে, তারা দিলীপেরই লোক। এমনকী দমদম পার্কের একটি শো-রুমে সম্প্রতি যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে, তার পিছনেও দমদম তাঁতকল এলাকার জমি দখল ও তোলাবাজির ঘটনা রয়েছে বলেই প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত গেদু দিলীপের মদতপুষ্ট। তাকে পুলিশ ধরতে পারেনি। তার উপরে তিন সঙ্গী-সহ দিলীপ ফিরলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেটাই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। |
|
|
|
|
|