সল্টলেকে ফের ডাকাতি, প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা
ফের ডাকাতি সল্টলেকে। বুধবার ভোরে এ এইচ ব্লকের একটি বাড়িতে হানা দিয়ে বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীর হাত বেঁধে এবং গৃহকর্তাকে ঘরবন্দি করে আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাল ডাকাতদল। তার পরে অনায়াসে পালিয়েও গেল তারা। এই নিয়ে এক মাসের মধ্যে তিন-তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটল সল্টলেকে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতে সল্টলেকের পুলিশ যে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, এ দিনের ঘটনা ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এ দিকে, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক এবং পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে সল্টলেকবাসীর মধ্যে।
গত ৭ জুলাই চার ঘণ্টার ব্যবধানে পূর্বাচল এবং সিএফ ব্লকে ডাকাতি হয়। তার দিন চারেকের মধ্যে পূর্বাচলেই ফের বাড়ির সামনে থেকে এক মহিলার হার ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। এ সবের পরেও সল্টলেকে টহলদার পুলিশের মধ্যে বিশেষ কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
দিন কয়েক আগেই উল্টোডাঙার কাছে ‘বিধান নিবাস’-এর একটি ফ্ল্যাটে কয়েক জন ডাকাত হানা দেয়। বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীর মুখ বন্ধ করতে তাঁর মুখে প্লাস্টিক গুঁজে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার জেরেই শ্বাস আটকে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা কলকাতা পুলিশের।
পুলিশ জানায়, বুধবার সল্টলেকের এ এইচ-২৩৯ নম্বর বাড়ির গৃহকর্ত্রী সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তেমন কিছু ঘটে যেতে পারত বলেই মনে করছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। ভোরে ওই বাড়ির মূল দরজা ভেঙে দোতলায় উঠে যায় তিন ডাকাত। ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সুমিত্রাদেবী ও তাঁর স্বামী দেবদাস মুখোপাধ্যায়। ওই দম্পতির ছেলে এবং মেয়ে বাইরে থাকেন। ফলে বাড়িতে থাকেন তাঁরা দু’জনেই।
পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতেরা প্রথমে বৃদ্ধার চোখের উপরে টর্চের আলো ফেলে তাঁকে মশারির ভিতর থেকে টেনে তোলে। পরে তাঁর মুখ চেপে সুমিত্রাদেবীকে বেঁধে ফেলে দুষ্কৃতীরা। সেই অবস্থাতেই তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে সিঁড়ি দিয়ে একতলায় নামিয়ে আনা হয়। বৃদ্ধা এক বার চেঁচিয়ে ফেললে তাঁর মুখ বাঁধার চেষ্টা করে ডাকাতেরা। সুমিত্রাদেবীর কথায়, “আমি চিৎকার করলে গলায় ছুরি ধরে চুপ করতে বলে ওরা। চড়ও মারে। তার পরে আমার মুখ বাঁধতে আসে। দম আটকে যেতে পারে ভেবে ডাকাতদের বলি আমার মুখ না বাঁধতে। আমি চিৎকার করব না। পরে চাবি ও টাকার খোঁজ করে। ওদের এক জন একতলায় আলমারি ভাঙারও চেষ্টা করেছিল। এই সময়ে হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে ওঠে। তাতেই ঘাবড়ে গিয়ে ডাকাতেরা তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে যায়। যাওয়ার আগে আমার হাত থেকে সোনার বালা খুলে নেয়। একটা মোবাইলও নিয়ে গিয়েছে ওরা।”
পুলিশকর্তাকে ভাঙা দরজা দেখাচ্ছেন গৃহকর্তা।
বুধবার, সল্টলেকে। ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ।
তদন্তকারীরা জানান, নীচে আলমারি ভাঙার শব্দ শুনে দেবদাসবাবু তাঁর স্ত্রীর মোবাইলে দু’বার ফোন করেন। তাঁর কথায়, “আমাকে বাইরে থেকে ঘরের ভিতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছু একটা হচ্ছে আন্দাজ করে আমি স্ত্রীকে ফোন করি।” সুমিত্রাদেবীর দাবি, ডাকাতদের সকলেরই মুখ ঢাকা ছিল। তারা বাংলায় কথা বলছিল। পালানোর সময়ে বাড়ির সামনের গ্রিনভার্জ দিয়ে ফার্স্ট অ্যাভিনিউয়ের দিকে চলে যায় তারা।
উল্লেখ্য, কয়েক বছর আগে এ এইচ ব্লকেই অপর্ণা বসু নামে এক বৃদ্ধাকে কয়েক ঘণ্টা পিছমোড়া করে বেঁধে তাঁর ঘরে ডাকাতি করা হয়। তার পরেই তিনি ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যান বলে এ এইচ ব্লকের বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
পূর্বাচল কিংবা সি এফ ব্লকের ঘটনার পরে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, তিনি এবং সল্টলেকের পুলিশকর্তারা সকলেই নতুন এসেছেন। সব ঠিক হয়ে যাবে। নজরদারি বাড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবারও ঘটনাস্থলে এসে কার্যত একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, “এলাকার উপরে নজরদারির পুরনো যে সব ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সেগুলি ফের চালু করা হবে। বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানো হবে।”
এ এইচ ব্লকের আবাসিকদের অভিযোগ, পুলিশ এসে ব্লকের প্রধান রাস্তায় সন্ধ্যার দিকে এক-আধ বার ঘুরে যায়। গলির ভিতরে পুলিশের গাড়ি ঢোকে না। দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে পুলিশের সাইকেল টহলদারি। এমনকী, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ গত এক বছর ধরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেনি।
এই সমস্যা শুধু এ এইচ ব্লকের নয়, বরং গোটা সল্টলেকেরই বলে অভিযোগ আবাসিকদের সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর। ফলে পুলিশের প্রতিশ্রুতিকে ‘ফাঁকা বুলি’ বলেই দাবি করেছেন বাসিন্দারা। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “লোকে পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে। এখানকার পুলিশ পরীক্ষায় বসার আগেই ফেল করছে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তা দিতে সল্টলেকের পুলিশ একেবারেই ব্যর্থ। তাদের চেষ্টাও নেই।”
বুধবার এ এইচ ব্লকে গিয়ে দেবদাসবাবু ও সুমিত্রাদেবীর সঙ্গে দেখা করেন স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু এবং বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। পরে সুজিতবাবু বলেন, “জেলা ও সল্টলেকের পুলিশে রদবদল হয়েছে। ফলে, গোটা বিষয়টি বুঝে নিতে কিছুটা সময় লাগবে প্রশাসনের। তবে আমি নিজে পুলিশের বড় কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সমস্যার সমাধানে যেন দ্রুত জনপ্রতিনিধি এবং ব্লকের বাসিন্দাদের নিয়ে পুলিশ বৈঠক ডাকে, তা নিয়ে কথা হয়েছে।”
তবে বিধায়ক যা-ই বলুন, যে প্রশ্নের উত্তর মিলল না, তা হল যিনি বর্তমানে জেলার এসপি, তিনিই বিধাননগরের মহকুমা পুলিশ অফিসার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তার পরেও তাঁর আর নতুন করে কী বুঝে নিতে হবে?
First Page Calcutta Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.