|
|
|
|
সিয়ান-মুলুক পঞ্চায়েত |
মেলেনি বিদ্যুৎ সংযোগ, পাম্প চালু না হওয়ায় ক্ষোভ |
মহেন্দ্র জেনা • বোলপুর |
সাবমার্সিবল পাম্পগুলি দিয়েছিল জেলাপরিষদ। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পাম্পগুলি কোনও কাজেই লাগছে না চাষিদের। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বোলপুর ব্লকের সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষিদের মধ্যে।
চাষিদের অভিযোগ, প্রায় তিন বছর আগে পাম্পঘর তৈরি হয়েছে। বসেছে পাম্পও। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিক এবং জেলাপরিষদে বহু বার জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
জেলাপরিষদ বছর তিনেক আগে এলাকার কৃষকদের জমিতে সেচের ব্যবস্থা করার জন্য সিয়ান-মুলুক গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর এবং মহুলী-গীতগ্রাম মৌজায় দশটি সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকায় দু’টি মৌজায় দশটি পাম্পঘর তৈরি হয়। পরে পাম্পও বসানো হয়। জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ বদরুজ্জামান খান বলেন, “বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গেলে কত খরচ (কোটেশন) হবে সে ব্যাপারে জানিয়ে দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
|
|
এ ভাবেই পড়ে আছে পাম্পঘর। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
এলাকার চাষিরা জানান, সাধারণত একটি সাবমার্সিবল পাম্পে বোরো চাষে প্রায় ১৬ একর সেচের ব্যবস্থা হয়। রবি ফসলের প্রায় ২০ একর এবং বর্ষার সময়ে চাষে ২৮ থেকে ৩০ একর পর্যন্ত সেচের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে দু’টি মৌজার বোরো চাষের ৬০ একর এবং রবি ফসলের ২০০ এবং বর্ষার সময় প্রায় ৩০০ একর জমিতে সেচের প্রয়োজনীয়তা মেটানো যাবে। দুর্গাপুর মৌজার কৃষক শুভেন্দু ঘোষ, নিমাই দলুই, সোম মুর্মু, হীরালাল মণ্ডল, লাল মাড্ডিরা জানান, কারও দুই, কারও তিন এবং কোনও কোনও জায়গায় পাঁচ বিঘে করে বর্ষার ধান পোঁতা হয়েছে। কিন্তু জলের অভাব রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, “আশায় ছিলাম জেলাপরিষদ অনুদান প্রাপ্ত আমাদের মৌজার পাঁচটি সাবমার্সিবল পাম্প চলবে। চলতি মরসুমে চাষে জলের সমস্যা মিটবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগই হল না। হচ্ছে, হবে করে করে দিন যাচ্ছে। জলের অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
চাষি কিরীটী মণ্ডল, এককড়ি ঘোষ, রাখহরি ঘোষ, শম্ভুনাথ ঘড়ুই, চপল কিস্কুদের অভিযোগ, “পানীয় জলের গভীরতায় সাবমার্সিবল পাম্প বসানোয় পানীয় জলে টান হতে পারে। এর জন্য আরও গভীরতায় পাম্প বসাসে ভাল হয়। অন্য দিকে মাটির নীচে তিন ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ফিল্টার রয়েছে। কিন্তু ৬ ইঞ্চি পাইপ। ফলে মাটির নীচ থেকে কম জল তুলবে বলে আশঙ্কা।” তাঁদের কথায়, “এলাকায় যাঁদের ব্যক্তি মালিকানাধীন সাবমার্সিবল পাম্প রয়েছে, তাঁদের মাটির নীচে এবং উপরে ৬ ইঞ্চি করে পাইপ বসানো থাকে। সে ক্ষেত্রে জল প্রয়োজন মোতাবেক তুলতে সামর্থ্য হবে।”
জেলার কৃষি ও সেচ বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অমিত বক্সী বলেন, “সমস্ত দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় আলোচনা হয়েছে। আশা করছি বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ দিকে, শুধু কোটেশনের জন্যই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না তা মানতে চাননি রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির বোলপুর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল গফফর। তিনি বলেন, “নিয়ম মোতাবেক সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর ব্যাপারে রেজিস্ট্রেশন দাখিল করতে হবে। বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে গেলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-সহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। আমরা বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষকে জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় রেজিস্ট্রেশন পাওয়া গেলে নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ অবিলম্বে দেওয়া হবে।”
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কে কে মিশ্র বলেন, “সম্প্রতি চিঠি পেয়েছি। আমরা প্রকল্প আধিকারিক, বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ-সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি। নিয়ম মোতাবেক সর্বনিম্ন ‘সিকিউরিটি মানি’ জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে কোনও সমস্যা হবে না।” |
|
|
|
|
|