থেঁতলানো পায়ের আঙুল |
বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
বীরভূম সীমান্ত লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানা এলাকা থেকে রামপুরহাটের এক পাথর ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। মৃতের নাম শ্রীকুমার ভকত (৪২)। বাড়ি রামপুরহাট শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ব্যবসায়ী ঝাড়খণ্ডের শিকারিপুর থানার সারসডাঙা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই এলাকাতে তাঁর ব্যবসা রয়েছে। বাড়ি ফেরার পথে রামপুরহাট-দুমকা সড়কে শিকারিপাড়া থানার লোরিপাহাড়ি এলাকা থেকে সাত-আট জন দুষ্কৃতী তাঁকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বুধবার দুপুরে লোরিপাহাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সারসাজোল এলাকার একটি কালভার্টের নীচে থেকে ওই ব্যবসায়ীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। |
শ্রীকুমার ভকত। ফাইল চিত্র। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের গলায় ও চোয়ালের নীচে কাটা দাগ রয়েছে। ডান পায়ের তিনটি আঙুলে কোনও ভারী কিছু দিয়ে থেঁতলানোর দাগ রয়েছে। বুধবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা আটক করতে পারেনি। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীকুমারবাবুর আদি বাড়ি শিকারিপাড়া থানার বেনাগড়িয়ায়। বছর ছয়েক আগে রামপুরহাটের ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিশ্চিন্তপুরে দুমকা-রামপুরহাট সড়কের পাশে পাকা বাড়ি করে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। |
|
শ্রীকুমারবাবু পাকাপাকি ভাবে রামপুরহাটে বাস করলেও শিকারিপাড়া থানার বেনাগড়িয়াতে একটি ধানের আড়ত, সারাসডাঙার মাকড়াপাহাড়িতে পাথরখাদান ও ক্রাশার রয়েছে। রামপুরহাটের বাড়িতে বাবা-মা, নিজের পরিবার ছাড়াও দুই ভাই ও তাঁদের পরিবারের সদস্যেরাও থাকেন। স্ত্রী রেনুদেবী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে বলেছিলেন সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বাড়ি ফিরবেন। আটটার সময়ে ফোন করলে জানতে পারেন দুষ্কৃতীরা তাঁকে অপহরণ করেছে। রামপুরহাট-দুমকা রোডের লোরিপাহাড়ির কাছে রাস্তার খারাপ অবস্থার জন্য শ্রীকুমার ভকত আস্তে আস্তে মোটর সাইকেল চালিয়ে ফিরছিলেন। এই সময়ে সাত-আট জন দুষ্কৃতী মুখে কাপড় বেঁধে রাস্তা আটকে দাঁড়ায়। মোটর সাইকেল আটকে শ্রীকুমারবাবুকে মারধর শুরু করে। শ্রীকুমারবাবুর বাইকের পিছনে বসেছিলেন বেনাগড়িয়া এলাকার একটি পাথর খাদানের ম্যানেজার। দুষ্কৃতীরা তাঁকেও মারধর করলেও কোনওক্রমে তিনি পালাতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে খোঁজ শুরু হয়। দুষ্কৃতীরা বনের পথে শ্রীকুমারবাবুকে নিয়ে গা ঢাকা দেয়।
শ্রীকুমারবাবুর মাসতুতো দাদা হরিশঙ্কর ভকত বলেন, “ভাই প্রায় প্রতিদিনই সাড়ে সাতটা-আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরত। আমারও ওই এলাকায় ব্যবসা রয়েছে। আমিও গতকাল সন্ধ্যা সাতটার আগে নুরিপাহাড়ি হয়ে বাড়ি ফিরেছি। বিকেলে ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা সংক্রান্ত কথা হয়েছিল। কিন্তু এ ভাবে যে দুষ্কৃতীরা তুলে নিয়ে গিয়ে ভাইকে খুন করবে তা আমরা ভাবতে পারছি না।”
হরিশঙ্করবাবুর দাবি, শ্রীকুমারবাবুর সঙ্গে তাঁর ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক আলোচনা হত। কোনও সমস্যা হলে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে শ্রীকুমারবাবু। তিনি বলেন, “ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে অন্তত আমি জানতাম।” স্ত্রী রেনুদেবী বলেন, “মঙ্গলবার রাতে বা বুধবার দুপুর পর্যন্ত কেউ মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করেনি। কী ভাবে যে হল তা বুঝে উঠতে পারছি না।” পুলিশ তদন্ত করছে। |
|