বঞ্চিত ও অবহেলিত ডুয়ার্স থেকে কিছু সমস্যা তুলে ধরলাম, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিকারের আশায়। বিশাল ডুয়ার্সের জনগণ দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত ও অবহেলিত। যে দিকে তাকাও নেই-নেই রব। টি, টিম্বার ও ট্যুরিজমে সমৃদ্ধ ডুয়ার্স থেকে প্রতি বছর রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করে, অথচ ডুয়ার্সের কোনও উন্নয়ন নেই। জলপাইগুড়ি জেলার আলিপুরদুয়ারের পর এই মালবাজার মহকুমা, দীর্ঘদিন যাবৎ তৈরি হয়েছে, অথচ মহকুমা শহরের পরিকাঠামো সে ভাবে তৈরি হয়নি। এখানে একটি কলেজ আছে, তাতে বিজ্ঞান শাখা নেই। বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাঙালি, নেপালি, আদিবাসী, রাজবংশী ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়ে। যদি বিজ্ঞান নিয়ে কেউ পড়তে চায় তবে তাকে ৫৫ কিমি. দূরে শিলিগুড়ি, ৬৫ কিমি. দূরে জলপাইগুড়ি, ১২৩ কিমি. দূরে আলিপুরদুয়ারে যেতে হয়। ভাবা যায়! এখানে একটি ১০০ বেডের মহকুমা হাসপাতাল আছে, সমগ্র মহকুমা ও পাহাড়-সহ কয়েক লক্ষ লোকের একমাত্র ভরসা। অথচ এখানে নেই পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার, ব্লাড ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসের সুবিধা। এ ছাড়া আরও অনেক অসুবিধা রয়েছে। এই মহকুমা শহরে নেই মোটর ভেহিকলস দফতর, জেলখানা ও রেজিস্ট্রি অফিস। প্রায় পনেরো বছর আগে অনেক ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দু’জন মন্ত্রী এসে এখানে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা তৈরির প্রতিশ্রুতিতে শিলান্যাস করে গিয়েছিলেন, কিন্তু কোনও কাজই হয়নি। দু’-একটি গাড়ি যাতায়াত করে আপন মর্জিমাফিক। এখানে একটি সুন্দর পার্ক আছে। স্থানীয় ও বহিরাগত ভ্রমণার্থীদের খুব প্রিয় ছিল এই পার্ক। বর্তমানে তার কী করুণ অবস্থা! ধুঁকে ধুঁকে চলছে, অথচ এখানে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। আয়ের চেয়ে ব্যয় চার গুণ। মালবাজার থেকে ক্রান্তি যাওয়ার রাস্তায় (ভায়া বড়দিঘি) চেল নদীর ওপর একটি পাকা সেতুর দাবি দীর্ঘ দিনের। মাল ও ক্রান্তির বিশাল এলাকার জনগণের দাবি যে, ওই সেতু হলে মহকুমা শহরের পথে ক্রান্তির যোগাযোগের সুবিধা হবে, জনগণের হয়রানিও কমবে। এ ব্যাপারে বহু মিটিং-মিছিল, বাইক র্যালি ও জেলা সভাধিপতিকে ডেপুটেশন দিয়েও কাজ হয়নি। |
ডুয়ার্সবাসীর শিলিগুড়ি যাওয়ার একমাত্র রাস্তা ধসপ্রবণ সেভকের ‘করোনেশন সেতু’, যেটা ব্রিটিশ জমানায় তৈরি হয়েছিল। তা ছাড়া বহু বছর আগে তার মেয়াদও শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন ভাবে ধসপ্রবণ এলাকা বাদ দিয়ে দ্বিতীয় বিকল্প সেতুর দাবিতে আন্দোলন চলছে। রেল দফতরও বর্তমানে আপনার দলের মন্ত্রীমশাইয়ের হাতে। তাই আপনাকে জানাই, অবহেলিত সমগ্র ডুয়ার্স থেকে অ্যাপোলো, ভেলোর, বেঙ্গালুরুতে প্রতি মাসে প্রচুর লোক যাতায়াত করেন। মহকুমা শহর মালবাজারের নিউ মাল জংশন দিয়ে দক্ষিণ ভারতগামী একটি ট্রেন যাতায়াত করে। ওই ট্রেনের দু’মিনিটের স্টপেজ যদি নিউ মাল-এ দেওয়া হয়, তবে ডুয়ার্সের লোকের বিশেষ সুবিধা হবে। নয়তো হাজার টাকা থেকে পনেরোশো টাকা খরচ করে নিউ জলপাইগুড়ি গিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়। এটা একটা বিরাট চাপ। এ ব্যাপারে নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারকে হাতে হাতে ডেপুটেশন দিয়েও কোনও ফল পাইনি। তা ছাড়া, ডুয়ার্সে চাই পলিটেকনিক, হিন্দি হাইস্কুল ও চা বাগানের কর্মীদের মজুরির সমস্যার সমাধান।
আপনি ডুয়ার্সকে সুইজারল্যান্ড বানাতে চেয়েছেন; তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবহেলিত ডুয়ার্সের এই সমস্যাগুলোর প্রতি যদি আপনার কৃপাদৃষ্টি পড়ে, তবে সমগ্র ডুয়ার্সবাসী কৃতজ্ঞ থাকবে। |