|
|
|
|
আমাদের চিঠি |
মডেল স্টেশনের এই হাল! |
হাওড়া জেলার মহকুমা শহরের রেল স্টেশনটিকে মডেল স্টেশন-এর শিরোপা পেতে দেখে ‘এ ওয়ান’(!) মহকুমাবাসী আশায় বেঁধেছিল বুক। হয়তো এ বার মিলবে উন্নততর রেল পরিষেবা! কিন্তু তকমাটি বাফার-এর মতো জুড়ে দেওয়া হলেও, বাড়ল শুধু বহিরঙ্গের চাকচিক্য, চটক। বিজ্ঞান-ভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তির পরিকাঠামোর স্বপ্ন চাপা রইল মধ্যযুগীয় মানসিকতায়। ফলে, হাওড়া ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের ‘গেটওয়ে’ এই প্রজেক্টেড এবং প্রোমোটেড স্টেশন পড়ে রইল সেই তিমিরেই। সমস্যাগুলি হল এক, স্টেশন সংলগ্ন; এবং দুই, তার অনুসারী ‘ক্রসিং’ সংলগ্ন। |
|
রোজকার বিপজ্জনক যাত্রা। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় |
দেখে নেওয়া যাক
১) ডোমপাড়ার কাছেপিঠের ক্রসিংটিকে প্রায় চৌপর দিন ফেলে রাখার জন্য গঙ্গারামপুর নিষ্ক্রান্ত সংকীর্ণ পথটিতে জ্যামজট লেগে থাকছে হামেশাই। খানিক এগিয়ে ফুলেশ্বর স্টেশনের লেভেল ক্রসিংটিও প্রায় অষ্টপ্রহর ফেলা! কথিত, ভারত বন্ধের দিনও হাওড়া স্টেশনে নিষ্ক্রান্ত লোকাল ট্রেনের আগমনের আগাম সতর্কতার খাতিরে এখানকার কেবিনম্যানেরা এক ঘণ্টা আগে থেকেই ফেলে রাখেন গেট’টি! অথচ শহর উলুবেড়িয়াকে ডি-সেন্ট্রালাইজ করে চাপমুক্ত রাখার জন্য বাইপাস হিসেবে এই রাস্তাটিকেই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক স্তর থেকেই।
২) প্রকল্পিত ‘উড়ালপুল’-এর মাস্টার প্ল্যানটি থমকে দাঁড়িয়ে গেছে সিগনাল না-পাওয়া ট্রেনের মতোই!
৩) উলুবেড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন দু’দিকের পূর্ব ও পশ্চিমমুখী পাকা সড়কের বর্তমান অবস্থা প্রায় খাটালের মতোই! গর্ত, খানাখন্দ বাড়তে বাড়তে পথ এখন পুকুরে পরিণত।
৪) মডেল স্টেশনটির প্ল্যাটফর্মগুলির উচ্চতা, কম্পার্টমেন্টের সাযুজ্যে একেকটা একেক রকম! যেমন, সদা ব্যস্ত ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মটিতে। লোকাল ট্রেনের কামরার তুলনায় এই প্ল্যাটফর্ম এতই বেশি দূরে, এতই নিচু যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অশক্ত সিনিয়র সিটিজেন মায় শিশুদের ওঠানামা করা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনা ঘটছে আকছার।
৫) স্টেশনের নিজস্ব ‘সাইকেল স্ট্যান্ড’ নেই। যেটি ছিল, সেটি এক অজ্ঞাত কারণে ঝাঁপ ফেলে ‘শাটার ডাউন’! গ্যারেজ হয়ে আছে তাকে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগও!
৬) নিজস্ব ‘বুক স্টল’ নেই। পত্র-পত্রিকাপ্রেমী রেলযাত্রীরা অবসর বিনোদনের জন্য বাধ্য হয়ে ম্যাগাজিন/খবরের কাগজ কিনছেন পথ-বিপণিগুলি থেকে।
৭) কাছেপিঠেই একাধিক প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠান! অথচ প্রতিবন্ধী যাত্রীদের হুইলচেয়ার, ওয়াকার বা হাত ঘোরানো চাকাগাড়ি নিয়ে চত্বরে ঢোকার নেই কোনও প্রবেশাধিকার! নেই র্যাম্প।
৮) বহু দূরপাল্লা বা লোকাল/এক্সপ্রেস ট্রেনের প্যাসেঞ্জারদের সঙ্গে চাকা লাগানো লাগেজ-স্যুটকেসগুলিকে মসৃণ ভাবে টেনে আনার সুবিধার জন্য নেই কোনও ‘স্লাইডিং ট্র্যাক’, নেই ওভারব্রিজ বা প্ল্যাটফর্ম। ফলে ভ্রমণ-ক্লান্ত যাত্রীদের ঘাড়ে করে তুলে আনতে হচ্ছে ওই সব ভারী-ভারী লটবহর!
৯) স্টেশনের উল্টো দিকের তথা উত্তর দিকের জাতীয় সড়কে পৌঁছনোর যে ‘অ্যাপ্রোচ রোড’টি আছে, সেটিতে নামার স্টেশন সংলগ্ন সিঁড়ি এবং আন্ডার-পাসটি বরাবরই অপ্রতুল অপরিসর এবং অপ্রস্তুত! নিমদিঘির ই এস আই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রোগীদের কাছে এই রুগ্ণ রাস্তা ব্যাপক বিঘ্ন-বর্ধক।
১০) পাঁচটা প্ল্যাটফর্মের বিস্তীর্ণ অংশেই নেই মাথা গোঁজবার ‘হেড-শেড’! এই সমস্ত প্রতীক্ষা-সরণিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান যাত্রীরা রোদে পুড়ছেন, বৃষ্টিতে ভিজছেন বেবাক।
ব্যাপার হল, মহানগরের মাত্র মাইল কুড়ি দূরত্বের এই মফস্সল শহরটি, স্থলপথ জলপথ এবং রেলপথের ত্রিবেণী সঙ্গমে অবস্থিত হলেও বরাবরই হতভাগ্য। এমনকী এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক মন্ত্রীমশাই হয়েও দুর্ভোগ রয়ে গেছে বিশ বাঁও জলেই। জনশ্রুতি, পূর্বতন সাংসদ পথ ভুলে একবার-দু’বার দেশের মাটিতে পদধূলি দিতেন! ফলে উলুবেড়িয়ার স্টেশন সংলগ্ন সমস্যা ও দাবি-দাওয়াগুলিকে দীর্ঘদিনই চেন টেনে থামিয়ে রাখার কারণেই এই দীর্ঘসূত্রিতা। সম্প্রতি পরিবর্তনী লাইন বদলের ‘ট্রেন টাইম’-এ নিত্য দিনের হাজারও রেলযাত্রীদের প্রত্যাশার পারদও উঠেছে তুঙ্গে। তাই উলুবেড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন সমস্ত সমস্যাগুলিকে আশু মোকাবিলা না করা হলে মডেল স্টেশনটি নিষ্প্রাণ ‘পাপেট মডেল’(!) হয়েই শোভা বর্ধন করবে সরকারি খাতায়-কলমে। হয়ে উঠতে পারবে না প্রকৃত ‘রোল মডেল’। |
সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। কোর্টপাড়া, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
|
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
আমাদের চিঠি,
সম্পাদকীয় বিভাগ,
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ |
|
|
|
|
|
|