|
|
|
|
কাটোয়ায় গুলি-বোমায় খুন বাবা-মা ও ছেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গাজিপুর (কাটোয়া) |
খেত থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এক দম্পতি ও তাঁদের ছেলেকে বোমা-গুলি মেরে খুন করল এক দল দুষ্কৃতী। রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ কাটোয়া থানার গাজিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলেঘাটা হরিপাট এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতেরা হলেন তারণ শেখ (৫৫), তাঁর স্ত্রী আদুরি বিবি (৪৫) এবং দম্পতির বড় ছেলে সাবের শেখ (৩০)। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পুরনো বিবাদের জেরেই এই খুন। ওই দম্পতির এক ছেলে আবের শেখ কাটোয়া থানায় ৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আততায়ীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষের কাজে প্রতিদিনের মতো এ দিনও গাজিপুর গ্রামের বাড়ি থেকে হরিপাট সংলগ্ন খেতজমিতে গিয়েছিলেন তারণ শেখ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেজ ছেলে আবের। তাঁরা জলে পাট পচানোর কাজ করছিলেন। সাড়ে ৮টা নাগাদ আদুরি বিবি সেখানে তাঁদের জন্য খাবার নিয়ে আসেন। সাবের সেই সময়ে সাবমার্সিবল পাম্প চালানোর ডিজেল নিয়ে জমির দিকেই আসছিলেন। গাজিপুর গ্রামের কালীতলার কাছে দুষ্কৃতীরা তাঁকে পাকড়াও করে। খেতজমি সংলগ্ন একটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখান থেকে তারণ শেখকে ডাকে দুষ্কৃতীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারণ ইটভাটার কাছে গেলে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে তাঁর বচসা বাধে। দুষ্কৃতীরা বোমা মেরে জখম করে তারণকে। তাঁর কানের পাশে গুলি করে। |
|
পড়ে রয়েছে তারণ শেখ ও সাবের শেখের দেহ। |
বোমার আওয়াজ শুনে ইটভাটার দিকে ছুটে যান আদুরি বিবি। দূর থেকেই তিনি ছেলে সাবেরকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখেন। দুষ্কৃতীদের রুদ্র মূর্তি দেখে প্রথমে ইটের সারির পিছনে লুকিয়ে পড়েন আদুরি। কিন্তু কাছ থেকে গুলি করে তাঁকেও মেরে ফেলে দুষ্কৃতীরা। এর পরে তিনটি মোটরবাইকে চেপে পালায় ৬ আততায়ী। তার মধ্যে একটি মোটরবাইক সাবের শেখের।
চোখের সামনেই গোটা ঘটনাটি দেখেছেন আবের। তাঁর অভিযোগ, “আমার বাবা এক জন কট্টর সিপিএম কর্মী। তাঁকে সামনে রেখে এলাকার ইটভাটাগুলি থেকে তোলা আদায় করতে চেয়েছিল পূর্বস্থলীর হামিদপুর গ্রামের আমানুল্লা গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীরা। বাবা ওদের কথায় রাজি হননি। তাই ওরা আমার চোখের সামনে ওঁদের খুন করে দিল।” তবে বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে সিপিএমের সঙ্গে তারণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে দাবি করেছেন সিপিএমের স্থানীয় নেতারা। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অচিন্ত্য মল্লিক অবশ্য বলেছেন, “ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই।” অন্য দিকে, কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুই সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর পুরনো বিবাদের জেরেই এই খুন।” |
|
তারণ শেখ ও আদুরি বিবি। |
বিমানবাবুর জবাব, “রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে তৃণমূলের লোকেরা এ কাজ করছে।” তাহলে কি নির্বাচনের আগে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে প্রশাসন যে ব্যবস্থা নিয়েছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে? বিমানবাবু বলেন, “আমি প্রশাসনের কেউ নই। বলতে পারব না।”
পুলিশের অস্ত্র-উদ্ধার অভিযানের তালিকায় এ দিনও ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘লালদুর্গ’ কেশপুর, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা, এবং হুগলির গোঘাট। অস্ত্র মিলেছে বাঁকুড়ার জয়পুর থেকেও। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত ১৩মে-র পরে শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেই উদ্ধার হয়েছে ২২০টি আগ্নেয়াস্ত্র। উদ্ধার হয়েছে প্রায় কেজিখানেক বিস্ফোরক এবং প্রচুর গুলিও। ইতিমধ্যেই ওই জেলা থেকে ৪৩ জনকে ধরা হয়েছে, যাঁদের প্রায় সবাই সিপিএম কর্মী-সমর্থক, এমনকী, জোনাল এবং লোকাল কমিটি পর্যায়ের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র কিলোমিটার আটেক দূরে কনকাবতী অঞ্চলে সিপিএম পার্টি অফিসের পিছনের শৌচালয়ের সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে ৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৫টি আগ্নেয়াস্ত্রের অংশ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। রাতে তৃণমূল কর্মীদের নেতৃত্বে জনতা কনকাবতী পার্টি অফিস ঘেরাও করে। খবর পেয়ে পৌঁছয় পুলিশ। পার্টি অফিসের পিছনে শৌচালয়ের সেফটি ট্যাঙ্কের ঢাকা খুলতেই মেলে বিপুল অস্ত্র। |
সাবের শেখ। |
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাট খেতে থাকা মহিলা শ্রমিকেরা জোর করে আটকে না রাখলে দুষ্কৃতীরা এ দিন আবেরকেও খুন করে ফেলত। পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।
তাঁরা অভিযোগ করেন, “দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও নিষ্ক্রিয় থাকে পুলিশ।”
এসডিপিও (কাটোয়া) জ্যোতির্ময় রায়ের দিকে আঙুল তুলে ওই দম্পতির মেয়ে সাবিনা বিবির অভিযোগ, “ওই সব দুষ্কৃতীর কাছে পুলিশ মাসোহারা নেয়। তাই পুলিশ চুপ থাকে।”
|
|
জ্যোতির্ময়বাবু অবশ্য এর কোনও জবাব দেননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া ও পূর্বস্থলী থানায় তারণ শেখের নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, বোমা বাঁধতে গিয়ে তারণের ডান হাত এবং চোখের ক্ষতি হয়েছিল। ওই ঘটনার পরে তারণ মূলত চাষবাসই করতেন। তবে হামিদপুরে দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ ছিল তারণ শেখের। ওই গোষ্ঠীর প্রতিদ্বন্দ্বীদের এক সময় তিনি গ্রামছাড়া করেছিলেন। দীর্ঘ এক দশক পরে গ্রামে ফিরে তারা বদলা নিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। |
ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের। |
|
|
|
|
|