|
|
|
|
|
|
|
বন্ধু বলে ডাকলাম |
ঠিক পরের রোববার। বন্ধুদের দিন। তাই নিয়ে আজ একটু আগাম আড্ডা হয়ে যাক। চিরশ্রী মজুমদার |
আচ্ছা, বলো দেখি, পরের রবিবার এই সময় তোমরা কী করছ? হুমমম, আন্দাজ করতে পারি, গ্রিটিংস কার্ডে গোটা গোটা করে নাম লিখছ, মোটা-পাতলা ব্যান্ডগুলো আলাদা করে গুছিয়ে রাখছ। অনেকেই একটু একটু ঠোঁট ফোলাচ্ছ। এমন দাগা দিনে ফোন-এসএমএস ছাড়া কোনও মজাই নেই। সেই কাল স্কুলে গিয়ে তবে হুড়োহুড়ি। সবটাই ‘বিলেটেড’। ফ্রেন্ডশিপ ডে-টা রবিবার করেই কেন পড়ে বলতে পারো?
আসলে এই বুদ্ধিটা বড়দের তো, তাই একটু হিসেবি। হলমার্ক কার্ড যদিও এখন চোখে পড়ে না তেমন, তবে না দেখলেও শুনে থাকবে নিশ্চয়ই। সেই হলমার্ক কার্ড গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জয়েস হল। তাঁরই মাথায় আইডিয়াটা খেলে। ১৯১৯ সাল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, ক্ষয়-ক্ষতি-লোকসানে মানুষজন একটু ঝিমিয়ে। হল ভাবলেন, এই সময় একটা দিনকে বন্ধুত্বের দিন বলে ঘোষণা করে দেওয়া যাক। সেই উপলক্ষে কার্ড বিক্রি হবে অনেক, উপহার, ফুল মানুষগুলোর মুখে একটু হাসিও তো ফুটবে! দিন ধার্য হল অগস্ট মাসের প্রথম রবিবার। ভেবেছিলেন ছুটির দিন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ফুরসত আর কখনই বা মিলবে।
তাঁর ফাটকাটা কিন্তু দুরন্ত ভাবে খেটে গেল। প্রথমটা একটু লোকজন চোখ রাঙিয়েছিল বটে। এ হল গ্রিটিংস কার্ড বিক্রি করার নতুন ফন্দি ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মধ্যিখান দিয়ে জিতে বেরিয়ে গেল বন্ধুরা। ও সব কথায় আমল না দিয়ে হইহই করে উদ্যাপন হতে লাগল বন্ধুত্বের উৎসব। ইউরোপ-আমেরিকা হয়ে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল ফ্রেন্ডশিপ ডে। ১৯৩৫ সালে মার্কিন কংগ্রেসে সরকারি স্বীকৃতিও পেয়ে গেল দিনটা।
|
দিন কি মোটে একটা? |
অগস্টের প্রথম রবিবার তো রইলই, তা ছাড়াও বিভিন্ন দিনে বন্ধুত্বের উৎসব পালনের রেওয়াজ আছে। যেমন ধরো, অগস্ট মাসেরই তিন নম্বর রবিবারটাই হল মেয়েদের ফ্রেন্ডশিপ ডে। বাংলা করলে সই পাতানোর দিনও বলা যায় বোধ হয়। জুন মাসের শেষ শুক্রবারটা হল বেস্ট ফ্রেন্ডস ডে। আর লিওনেল মেসি, দিয়েগো ফোরলানরা কবে হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে বলে উইশ করে জানো? ২০ জুলাই। আর্জেন্তিনা, উরুগুয়েতে আবার ওই দিনটাই ফ্রেন্ডশিপ ডে কিনা। আমরাও তো রাখির দিনটাকে ইন্ডিয়ান ফ্রেন্ডশিপ ডে বলতেই পারি।
ও হ্যাঁ, সম্প্রতি আর একটা ঘটনা ঘটেছে। এত দিন মার্কিনদের দেখাদেখি বাকি দেশগুলো অগস্ট মাসে ফ্রেন্ডশিপ ডে পালন করত। গত ২৭ এপ্রিল, রাষ্ট্রপুঞ্জ ক্যালেন্ডার-এর একটা অন্য দিনকে আন্তর্জাতিক বন্ধুতা দিবস ঘোষণা করেছে। আমারই না, একটু দেরি হয়ে গেছে। দিনটা ৩০ জুলাই। গত কালই পেরিয়ে গেছে। তাতে কী, আসছে বছর আবার হবে। আচ্ছা একটা মন ভাল করা খবর দিই বরং। ফ্রেন্ডশিপ ডে-র ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর কে জানো? হাসিখুশি ভাল ভাল্লুক উইনি দ্য পুহ্।
|
বন্ধু তোমায়... |
|
এই দিনে কার্ড, গিফট, হলুদ গোলাপ আদান-প্রদান তো রয়েইছে, সেটা হল বন্ধুত্বের ‘টোকেন’। কিন্তু সব থেকে জরুরি বোধ হয় ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড। এবং তারও একটা ইতিহাস আছে। একটু নামী দোকানে গেলে খেয়াল কোরো, বেশির ভাগ ব্যান্ডই বিনুনি করা সুতো বা ফিতে দিয়ে তৈরি। এই নকশাটা এসেছে মধ্য আমেরিকার দেশগুলো থেকে। সেখানকার আদিম জনজাতিতে বন্ধুত্বের বাঁধনটা ছিল ভারী মজবুত। নিজের হাতে ব্রেসলেট তৈরি করে প্রিয় বন্ধুকে পরিয়ে দিত ওরা। সুতোর বাঁধন আলগা না হওয়া পর্যন্ত বন্ধুও সেটা হাত থেকে খুলত না। নিজে থেকে খুলে ফেলার মানে আড়ি। তোর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব শেষ। ওরা বিশ্বাস করত, এই ফিতের মধ্যে বন্ধু কোনও ইচ্ছে পুরে দিয়েছে। ব্রেসলেট নিজে থেকে খুলে আসা মানে ইচ্ছে পূরণ হওয়ার সময় হয়েছে।
এখন বিশেষ দিনটা ছাড়াও ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ডের ভারী কদর। কারও সঙ্গে একটু ভুল বোঝাবুঝি? একটা ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বেঁধে দাও, অমনি সব মিটমাট। নতুন আলাপ হওয়া কাউকে একটা ব্যান্ড দাও, ব্যস, গড়গড়িয়ে চলল বন্ধুত্বের গাড়ি। রেড ইন্ডিয়ানদের মতো হাতে বানাও বা কিনে দাও, জাদু একটা আছে বলেই তো মনে হয়, তাই না? |
|
|
|
|
|