|
|
|
|
পরিবর্তন জেলা শিক্ষা সংসদেও |
প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা, নালিশ শিক্ষিকার নামে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
স্বামী মারা যাওয়ায় তাঁকেই প্রাথমিক স্কুলের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। পারিবারিক পেনশনও বরাদ্দ হয়েছিল। নাম ভাঁড়িয়ে সবই গত চার বছর ধরে ভোগ করছিলেন তাঁরই ছোট জা। দেওর দিলীপ মণ্ডল এলাকার দাপুটে সিপিএম নেতা। তার উপরে ছোট জা তাঁর ছেলেকে খুনের হুমকি দেওয়ায় কোথাও অভিযোগও জানাতে পারেননি তিনি। ক্ষমতার পরিবর্তনের পাশাপাশি জেলা শিক্ষা সংসদেও ক্ষমতা বদল হয়েছে। সেই সাহসে ভর করে সম্প্রতি মালদহে বৈষ্ণবনগরের ডোমাইচক গ্রামের বাসিন্দা তরুলতা মণ্ডল সমস্ত ঘটনা জানাতেই নড়েচ বসে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। অভিযুক্ত শিক্ষিকা তথা তরুলতা দেবীর ছোট জা নিরুপমা দেবীর বেতন, পেনশন-সহ সমস্ত সুবিধে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিরুপমা দেবীর নামে থানায় অভিযোগও জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সংসদের চেয়ারম্যান রামপ্রবেশ মণ্ডল। সংসদের চেয়ারম্যান রামপ্রবেশ মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি নজরে আসতেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম। তদন্ত জানা গিয়েছে তরুলতা দেবীর নাম ভাঁড়িয়ে তাঁরই জা নিরুপমা মন্ডল নামে এক মহিলা ৪ বছরের বেশি সময় বৈষ্ণবনগরের ডোমাইচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন। এর পরই ওই ভুয়ো শিক্ষিকার বেতন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।” সংসদ সভাপতি জানিয়েছেন, যাদের মদতে এই ভূয়ো শিক্ষিকা এত দিন ধরে চাকরি করেছে তাদেরও শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হবে।” জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বেতন বন্ধের নির্দেশ জারি করলেও নিরুপমা দেবী, বিধবা তরুলতা দেবীর নামে বরাদ্দ যে পেনশন তুলছেন তা অবশ্য বন্ধ হয়নি। তবে প্রাথমিক সংসদ কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিতেই গা ঢাকা দিয়েছে ওই শিক্ষিকা। তরুলতা দেবীর দাবি, “আমার জা আমার নামে বরাদ্দ চাকরি করছে জেনে কথা বলতে গেলে ছেলেকে খুন করে ফেলার হুমকি দেয়। দেওর এলাকার দাপুটে সিপিএম নেতা। ছেলেকে হারানোর ভয়ে কাউকে জানানোর সাহস পাইনি। সিপিএমের ক্ষমতা গিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছি।” অভিযুক্ত দিলীপ মণ্ডল এবং তাঁর স্ত্রী নিরুপমা দেবী গা ঢাকা দেওয়ায় তাঁদের বক্তব্য জানা যায়নি। বৈষ্ণবনগর এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “এই ঘটনাটি আমার জানা নেই। কেউ এমন করে থাকলে অবশ্য শাস্তি হওয়া উচিত।” ২০০৬ সালে কর্মরত অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষক তুলেশ মন্ডল মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পরে তাঁর স্ত্রী তরুলতা দেবী জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদে চাকরির আবেদন করেন। আবেদনের ভিত্তিতে জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদ ২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল পোস্ট অফিসের মাধ্যমে তরুলতা দেবীকে বাড়ির পাশে ডোমাইচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার নিয়োগপত্র পাঠায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর ৬ বছরের শিশু-সহ তরুলতা দেবীকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর ছোট জা নিরুপমা দেবী তাড়িয়ে দেন। গ্রামেই অন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন তিনি। তরুলতা দেবীর নিয়োগপত্র হাতাতে সমস্যাই হয়নি নিরুপমা দেবীর। তরুলতা দেবীকে নিয়োগপত্র না দিয়ে নিরুপমা দেবী নিজেই তরুলতা সেজে ডোমাইচক প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগ দিয়ে চাকরি শুরু করেন। পাশাপাশি তরুলতা দেবীর নামে বরাদ্দ মৃত স্বামীর পেনশনও তিনি তুলতে শুরু করেন। |
|
|
|
|
|