বলছেন মনোবিদেরা
‘পার পেয়ে যাব’ ভাবনা থেকেই বাড়ছে উগ্রতা
যা-ই করি না কেন, পার পেয়ে যাব। এই নিশ্চিন্ত মনোভাবই ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের সর্বত্র। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী বাসুদেব নন্দীর মৃত্যু সেই ছবিটাই আরও প্রকট করে দিল বলে মনে করছেন মনোবিদেরা। তাঁদের মতে, পার পেয়ে যাওয়ার মানসিকতাই মানুষের মধ্যে আত্মসংযম কমাচ্ছে। জোরালো হচ্ছে ‘আমিত্ব’। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, শুক্রবার রবীন্দ্রভারতীতে যা ঘটেছে, তাকে বলে ‘মব বিহেভিয়ার’। তা থেকে এক ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত হিংস্রতা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, “কেউ কাউকে মেরে ফেলতে চাননি। কিন্তু তাৎক্ষণিক উত্তেজনা থেকে অপরকে আঘাত করার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আমি যা চাই, তা-ই করব। অন্য কেউ বাধা দেওয়ার কে? যদি কেউ বাধা দেয়, তা হলে তাকে নস্যাৎ করতে হবে। এটাই মূল লক্ষ্য।”
নীলাঞ্জনাদেবী মনে করেন, চারপাশের জগতে এখন রাগ, অসহিষ্ণুতার প্রকাশ বড় তীব্র। একই সঙ্গে এই বার্তাও খুব জোরালো যে, রাগ প্রকাশ করলে বা রাগের জেরে কোনও ভাবে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেলেও কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না। কোনও শাস্তি পাওয়ার নজির সামনে না থাকায় যা খুশি করার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
মনোবিদ হিরণ্ময় সাহার মতে, ‘আই অ্যাম দ্য বস’ এই মানসিকতাই নানা ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনছে। এ ক্ষেত্রেও তেমন ঘটেছে। তিনি বলেন, “এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামাজিক অস্থিরতা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে পারস্পরিক সম্পর্কগুলি আলগা হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবোধও। আগে গুরুজনেরা মাথা গরম করতে বারণ করতেন। এখন তাঁরা নিজেরাই মাথা গরম করে ফেলেন। ফলে নতুন প্রজন্মের সামনে কোনও ধৈর্য্য বা শান্তির নিদর্শন থাকছে না।” এ-ও এক ধরনের মানসিক অবসাদের জের বলে তাঁর ধারণা। মানসিক অবসাদ বহু ক্ষেত্রে খুব দ্রুত মানুষকে মারমুখী করে তোলে বলে জানান তিনি।
মোটরবাইক বা সাইকেল রাখার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দিন যে ভাবে গোলমাল বাধে, তাতে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছেন। কিন্তু মনস্তত্ত্ব নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁরা একে সামাজিক অস্থিরতার পরিণাম হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য: শিক্ষা, জীবিকা, পরিবার সব কিছুতেই যে অনিশ্চয়তা, তা থেকে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা বোধ তৈরি হয়। ‘আমি’র বাইরে কেউ নেই। হিরণ্ময়বাবুর বক্তব্য, “চোখের সামনে কোনও সদর্থক নজির না থাকায় যেনতেন ভাবে নিজের গুরুত্ব প্রকাশের জন্য মানুষ মরিয়া হয়ে উঠছে। এমন ধরনের ঘটনা হয়তো তারই ফল।”
নীলাঞ্জনাদেবী বলেছেন, এই ঘটনাটি থেকে আত্মসংযমের অভাবটিই বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। তাঁর কথায়, “বাহ্যিক ভাবে নিজের গুরুত্ব প্রকাশ করতে এখন বেশির ভাগ মানুষই খুব মরিয়া। কেউ তাতে সামান্য বাধা দিলেও সহজেই মারমুখী হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.