|
|
|
|
সরকারি বিধি ভেঙে রাতে ময়না-তদন্ত |
পীযূষ নন্দী • আরামবাগ |
বিধি ভেঙে রাতে ময়না-তদন্ত হল সরকারি হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার রাতে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা। অভিযোগ, সাপের ছোবলে মৃত এক প্রৌঢ়ার আত্মীয় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপারকে মারধরের হুমকি দিয়ে ময়না-তদন্ত করতে ‘বাধ্য’ করান। ‘চাপে পড়ে’ টর্চের আলোয় ময়না-তদন্ত করেন ভারপ্রাপ্ত সুপার জনার্দন সেন। অন্য দিকে, মৃতার পরিবারের যুক্তি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘গাফিলতি’র জেরেই ওই ‘পরিস্থিতি’।
ময়না-তদন্ত করা চিকিৎসক জনার্দনবাবু শুক্রবার বলেন, “এমন চললে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। আইন ভেঙে রাত ৮টার পরে ময়না-তদন্ত করার কারণ এবং পরিস্থিতি মহকুমাশাসক এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছি।” মহকুমাশাসক (আরামবাগ) তথা মহকুমা রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “রাতে ময়না-তদন্তের নিয়ম নেই। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে জেলাশাসকের অনুমতি নিয়ে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা সাপেক্ষে ময়না-তদন্ত করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিচ্ছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক উন্মেষ বসু বলেন, “খবর শুনেছি। বিশদে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সাধারণ ভাবে ময়না-তদন্তের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে জেলাশাসকের নির্দেশে তাঁর কোনও প্রতিনিধির (মহকুমা স্তরের ম্যাজিস্ট্রেট) উপস্থিতিতে ময়না-তদন্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত আলোর
ব্যবস্থা রাখতে হবে। পুরো বিষয়টি তদারক করবেন সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার খানাকুলের সেকেন্দারপুরের বাসিন্দা ভারতী ভুঁইয়ার (৫৫) ময়না-তদন্তের সময়ে এ ধরনের কোনও নিয়মই মানা হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরে সাপ ছোবল মারে ভারতীদেবীকে। ওই রাতেই তাঁকে আরামবাগ হাসপাতালে আনা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনি সেখানে মারা যান। মৃতার পরিবারের দাবি, ওই দিন সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ তাঁরা ভারতীদেবীর মৃত্যুসংবাদ পান। তাঁদের অভিযোগ, বিকেল ৪টে পর্যন্ত ময়না-তদন্ত করা হয়নি। সরকারি বিধি অনুযায়ী, এ ধরনের মৃত্যুসংবাদ হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ সংশ্লিষ্ট থানাকে জানান। থানা সে খবর জানায় স্থানীয় প্রশাসনকে (এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত)। পুলিশ-প্রশাসনের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হলে শুরু হয় ময়না-তদন্তের প্রক্রিয়া। পুলিশ সূত্রের খবর, ভারতীদেবীর মৃত্যুসংবাদ খানাকুল থানায় পৌঁছয় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ।
পুলিশকে ভারতীদেবীর মৃত্যুসংবাদ দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এত দেরি করলেন কেন? ভারপ্রাপ্ত সুপারের জবাব, “এ ক্ষেত্রে গাফিলতি যে একটা হয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না। তবে কী কারণে গাফিলতি হয়েছে, এখনই বলা সম্ভব নয়। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্য দিকে, ভারতীদেবীর স্বামী মদন ভুঁইয়ার বক্তব্য, “হাসপাতালের গাফিলতিতে দেরি হওয়ায় আমার স্ত্রী-র দেহে পচন ধরে যাচ্ছিল। বিষয়টা স্থানীয় ছেলেদের বলেছিলাম। আমার অসহায় অবস্থা দেখে তারাই সব ব্যবস্থা করে। তা ছাড়া, আমি অত ময়না-তদন্তের নিয়মটিয়ম জানি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল করেছেন। তাই নিজেরাই তা শুধরে নিয়েছেন।” |
|
|
|
|
|