হাবরা হাসপাতালে সুপার নিগৃহীত, ধৃত তৃণমূল নেতা
য়াদের দৌরাত্ম্যের বিরোধিতা করে মাস খানেক আগেই তৃণমূল বিধায়কের শাসানির মুখে পড়তে হয়েছিল হাসপাতালের সুপারকে। এ বার ফের আয়াদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে সেই সুপারই এক তৃণমূল নেতার হাতে নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ। শুক্রবার দুপুরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। সুপার তাপস ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এই ঘটনায় তৃণমূল প্রভাবিত আয়া ইউনিয়নের নেতা কল্যাণ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে।
ঘটনার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাপসবাবু। বারাসত হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে তিনি বলেন, “হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে কোনও রাজনৈতিক কর্মী গায়ে হাত তুলছেন এটা বিশ্বাস করতে এখনও কষ্ট হচ্ছে। এ ভাবে কত দিন কাজ করতে পারব জানি না। প্রতি পদে এ ভাবে বাধা পেলে মনোবল নষ্ট হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে চেষ্টা করলেও রোগীদের ভোগান্তি দূর করতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।”
ঘটনার সূত্রপাত দুপুরে। প্রসূতি বিভাগে রোগিণীদের সঙ্গে আয়ারা দুর্ব্যবহার করছেন ও জোর করে টাকা আদায় করছেন এমন অভিযোগ পেয়ে ওয়ার্ডে যান তাপসবাবু। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আয়াদের সঙ্গে কথা বলে তিনি যখন নিজের ঘরে ফিরছেন সেই সময়েই আয়া ইউনিয়নের নেতা কল্যাণবাবু তাঁর রাস্তা আটকান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কল্যাণবাবু সুপারকে বলেন, “আপনি বড্ড বাড়াবাড়ি করছেন।” সুপার বলেন, “আমার হাসপাতালে আমি কী করব সেটা আপনি ঠিক করবেন না।” এর পরেই কল্যাণবাবু সুপারকে ধাক্কা মারেন বলে অভিযোগ। সঙ্গে চলতে থাকে গালিগালাজও। বহিরাগত বেশ কিছু লোকজন সুপারকে ঘিরে ফেলেন। খবর যায় পুলিশের কাছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরেও সুপারকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তাঁকে একটি ঘরে দরজা আটকে বসে থাকতে দেখা যায়। নিরাপত্তা দিয়ে তাঁকে হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ঘটনার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সুপার। তাঁকে প্রথমে বারাসতে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দফতরে ছিলেন না। এর পরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত হাসপাতালে।
বুধবারই হাবরা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তারা। হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতি নিয়ে সুপারের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকও করেন তাঁরা। তার পরেই এ দিনের ঘটনা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপরে স্বাস্থ্য কর্তাদের নিয়ন্ত্রণহীনতাই প্রমাণ করছে বলে মনে করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। এর পর কী হবে? উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-১ তপন ঠিকাদার জানান, তিনি স্বাস্থ্যভবনে বিষয়টি জানাবেন। পাশাপাশি সুপারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির হবে।
এই ঘটনার দায় নিতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের হাবরা শহর কমিটির সম্পাদক ঝন্টু দাস বলেন, “কল্যাণবাবু আয়া ইউনিয়নের কেউ নন।” কল্যাণবাবু অবশ্য নিজেকে তৃণমূল নেতা বলেই পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর সাফাই, “এক আয়াকে কাজ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন সুপার। আমি তাঁর হাত ধরে অনুরোধ করি, ওই আয়াকে যেন কাজে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। মারধর বা কোনও অন্যায় আচরণ করিনি।”
হাবরা হাসপাতালে আয়াদের দৌরাত্ম্য নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, প্রয়োজনে ডেকেও আয়াদের পাওয়া যায় না। তাঁরা জোর করে টাকা আদায় করেন বলেও অভিযোগ। স্থানীয় সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন তাদের মতো ব্যবস্থা নেবে। তবে চিকিৎসক হিসাবে আমি বলতে পারি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এক দিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সুস্থ পরিবেশ আনতে চাইছেন, তখন এ ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়।”
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.