|
|
|
|
কোন নিয়মে চলছে পুলিশ |
চিকিৎসা-গাফিলতির তদন্তে বিশেষজ্ঞ বাছাই নিয়ে প্রশ্ন |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
বিশেষজ্ঞ কে? কার মতামতের ভিত্তিতে কাউকে দোষী বা নির্দোষ সাব্যস্ত করা হবে?
চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগের তদন্তে পুলিশ যে ভাবে ‘বিশেষজ্ঞের’ মতামত নেয়, এ বার তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আদৌ নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম রয়েছে কি না, সাম্প্রতিক ওই ঘটনার জেরে এমন সংশয়ের অবকাশও তৈরি হয়ে গিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে ‘পেশাগত সীমারেখা’ লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিলের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আর এক ডাক্তার। অভিযোগকারী স্ত্রী-রোগের চিকিৎসক (গাইনিকোলজিস্ট)। তাঁর আঙুল যাঁর দিকে, তিনি ফরেন্সিক মেডিসিনের অধ্যাপক। অভিযোগ: এক মামলায় দ্বিতীয় জন প্রথম জনের চিকিৎসা সম্পর্কে মতামত পেশ করে পেশার গণ্ডি অতিক্রম করেছেন। তদন্ত শেষে মেডিক্যাল কাউন্সিল অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে। শাস্তি হিসেবে তাঁকে ‘সতর্ক’ও করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত ন’বছর আগে। গার্গী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে কলকাতার এক গাইনির কাছে গর্ভপাত করাতে এসেছিলেন এক মহিলা। গর্ভপাতের (মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি) প্রক্রিয়ার পরে গার্গীদেবী জানান, মহিলার জরায়ুতে কোনও ভ্রূণ ছিল না। অথচ সোনোগ্রাফির রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি তখনও গর্ভবতী! গার্গীদেবী মতামত নেওয়ার জন্য রোগীকে পাঠান মধুসূদন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে প্রবীণ এক স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকের কাছে। মধুসূদনবাবুর দাবি, তিনি মহিলাকে পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, এটি ‘এক্টোপিক টিউবাল প্রেগন্যান্সি।’ অর্থাৎ ভ্রূণ রয়েছে ফ্যালোপিয়ান টিউবে। তিনি রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন মধুসূদনবাবু। পর দিনই মহিলার পেটে যন্ত্রণা শুরু হলে তাঁকে আলিপুরের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের দিন কয়েক বাদে তিনি মারা যান।
এর পরেই গাফিলতির অভিযোগ এনে গার্গীদেবী ও মধুসূদনবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার পরিজন। পুলিশ তদন্তে নেমে ‘বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে অজয় গুপ্ত নামে ফরেন্সিক মেডিসিনের ওই চিকিৎসকের মতামত চেয়েছিল। মহিলার মৃত্যুর ক্ষেত্রে মধুসূদনবাবুর গাফিলতি ছিল বলে অজয়বাবু তাঁর রিপোর্টে মন্তব্য করেন।
অজয়বাবুর সেই রিপোর্টকেই চ্যালেঞ্জ করে তাঁর বিরুদ্ধে ‘পেশাগত অসদাচারণ’-এর অভিযোগ আনেন মধুসূদনবাবু। কাউন্সিল তদন্ত করে অজয়বাবুকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। কাউন্সিলের বক্তব্য: অজয়বাবু কোনও কাগজপত্র না-দেখে, সোনোলজিস্ট ও গাইনির সঙ্গে কথা না-বলেই মতামত দিয়েছেন, যা সম্পূর্ণ অনুচিত।
মধুসূদনবাবু প্রশ্ন তুলেছিলেন, স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকের গাফিলতি ছিল কি না, ফরেন্সিক মেডিসিনের লোক কী ভাবে সে ব্যাপারে মতামত দেওয়ার অধিকারী হন? পুলিশি ব্যাখ্যা কী? পুলিশের যুক্তি: যে মেডিক্যাল কলেজে ময়না-তদন্ত হয়, সাধারণত তারা সেখানকার ফরেন্সিক বিভাগের প্রধানের মতামতই নেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো মৃতার ময়না-তদন্ত হয়নি! তা হলে ফরেন্সিক প্রধানের মতামত চাওয়া হল কেন?
পুলিশকর্তাদের কাছে এর কোনও স্পষ্ট জবাব নেই। যা থেকে ‘গয়ংগচ্ছ’ প্রক্রিয়ার ধারণাটি আরও প্রকট হচ্ছে বলে চিকিৎসকমহলের একাংশের অভিমত। এ প্রশ্নও উঠছে যে, ময়না-তদন্তেও কি সব ধরনের গাফিলতি প্রমাণ হওয়া সম্ভব?
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সম্ভব নয়। তা হলে পুলিশ তা করে কোন যুক্তিতে? এখানেও সরাসরি উত্তর এড়িয়ে পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, এমনটাই হয়ে আসছে।
পুলিশি তদন্ত না-হয় ধরাবাঁধা গতে এগোল। স্বাস্থ্য দফতরের নির্দিষ্ট নিয়ম নেই?
স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে পুলিশ মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে দিতে বললে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের চিকিৎসকদের নিয়ে তাঁরা বোর্ড গড়ে দেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে বোর্ড মতামত দেয়। তবে তাঁরা এ-ও জানিয়েছেন, পুলিশের তরফে এমন বোর্ড গড়ার অনুরোধ আসে খুবই কম।
কিন্তু কোন ঘটনায় বিশেষজ্ঞ কে হবেন, তার কি কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই? রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার দিলীপকুমার ঘোষ বলেন, “আলাদা ভাবে কোনও নিয়মের উল্লেখ না-থাকলেও আমরা তদন্তের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের চিকিৎসকদের বক্তব্য জানতে চাই। হার্টের সমস্যা হলে কার্ডিওলজিস্ট, ক্যানসার হলে অঙ্কোলজিস্ট, স্ত্রী-রোগজনিত সমস্যা হলে গাইনিকোলজিস্ট।”
এ ক্ষেত্রে পুলিশ তা করেনি। অজয়বাবু নিজে অবশ্য বলছেন, “আমি এমন বহু ঘটনায় মতামত দিয়েছি। ফরেন্সিক মেডিসিনের চিকিৎসক মতামত দিতেই পারেন।”
তা হলে কাউন্সিলের সতর্কীকরণের বিরুদ্ধে কি তিনি
আপিল করবেন?
অজয়বাবু বলেন, “এখনই মন্তব্য করব না।” |
|
|
|
|
|