|
|
|
|
কালিম্পঙে বাসে বিস্ফোরণ, ফোনে ‘দায় স্বীকার’ গোষ্ঠীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
কালিম্পঙে সরকারি বাসে বিস্ফোরণ ঘটানোর ‘দায় স্বীকার করে’ ফোন গেল সংবাদমাধ্যমের দফতরে। ফোনে দাবি করা হল, বিস্ফোরণের ‘দায়’ ‘আন্ডারগ্রাউন্ড লিবারেশন অ্যাসোসিয়েশন (ইউএলএ) নামে একটি সংগঠনের।
বৃহস্পতিবার রাতে শিলিগুড়িতে একটি নেপালি দৈনিকের দফতরে ফোন করেছিলেন যিনি, তিনি নিজের পরিচয় দেন ওই সংগঠনের নেতা এম থেগিমলে হিসেবে। ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে’র (জিটিএ) চুক্তির প্রতিবাদে এবং গোর্খাল্যান্ডের দাবিতেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার (এনবিএসটিসি) ওই বাসে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলেও তিনি ওই দৈনিকের কাছে দাবি করেছেন।
শুক্রবার সকালে ওই দৈনিকের পক্ষ থেকে দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহকে বিষয়টি জানানো হয়। রাজ্য পুলিশের আইজি (উত্তরবঙ্গ ) রণবীর কুমার বলেন, “ওই নামে কোনও সংগঠন রয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তদন্তের পরেই ওই সংগঠনের ভূমিকা বোঝা যাবে।” পুলিশ সুপার বলেন, “ইউএলএ নামে কোনও সংগঠনের আদৌ অস্তিত্ব রয়েছে কি না, দেখা হচ্ছে। এর আগে গোর্খা লিবারেশন আর্মি নামে একটি সংগঠন গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়ে কিছু লিফলেট ছড়িয়েছিল। তাদের সঙ্গে এই সংগঠনটির (ইউএলএ) যোগাযোগ রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।”
গত মঙ্গলবার ভোর ৩টে নাগাদ এনবিএসটিসি-র একটি বাসের নীচে রাখা একটি স্টোভে ওই বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে বাসের নীচের অংশ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনার তদন্তে ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে এ দিনই কালিম্পঙে পৌঁছেছে। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জাতীয় রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে।
এ দিকে, একটি সংগঠন ওই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে এই খবর ছড়ানোর পরে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা গৌতম দেব বলেন, “খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়েছি। কারা পাহাড়কে অশান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে, তা দেখা হচ্ছে।” গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পংয়ের বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রী বলেন, “জিটিএ চুক্তির প্রতিবাদে রান্নার স্টোভে বিস্ফোরণ ঘটানো হাস্যকর। উপযুক্ত তদন্ত করে পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করুক।” সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী আবার বলেন, “গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন বন্ধ করতে একটা আতঙ্ক তৈরির ষড়যন্ত্র হয়েছে। সে জন্যই ওই বিস্ফোরণ। ষড়যন্ত্রে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং মোর্চা যুক্ত রয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।” সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “কালিম্পঙের ঘটনা উদ্বেগজনক। প্রস্তাবিত ‘জিটিএ’ চুক্তির জন্যই এই ধরনের অশান্তির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।” কালিম্পঙে ‘জঙ্গি মনোভাবাপন্ন’ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অবশ্য নতুন ঘটনা নয়। পার্বত্য পরিষদ (ডিজিএইচসি) চুক্তির বিরোধিতায় কালিম্পংয়ে ছত্রে সুব্বার নেতৃত্বে ‘গোর্খা লিবারেশন অর্গানাইজেনশন’ (জিএলও) নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। পুলিশ সূত্রের দাবি, ‘জিএলও’র সঙ্গে নাগা জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন-এর আইজাক-মুইভা গোষ্ঠীর সম্পর্ক ছিল। ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে তিনকাটারিতে পুলিশ ‘জিএলও’র একটি অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দেয়। তার পরের বছর পাঙ্খাবাড়ির রাস্তায় সুবাস ঘিসিংয়ের উপরে ‘জিএলও’ সদস্যেরা হামলা চালান বলে অভিযোগ। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র-সহ ‘জিএলও’র বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ছত্রে সুব্বাকেও ধরা হয়। ২০০৬ সালে অজয় দহলের নেতৃত্বে কালিম্পঙে ‘ইউনাইটেড গোর্খা রেভলিউশনারি ফ্রন্ট’ (ইউজিআরএফ) নামে আর একটি সংগঠন মাথাচাড়া দেয়। ওই সংগঠনটিও কালিম্পঙের কাছে আলগারার জঙ্গলে অস্ত্র প্রশিক্ষণের শিবির গড়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ অজয় দহলকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। |
|
|
|
|
|