|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ২... |
|
এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আমিই রঞ্জনা |
বললেন পার্নো মিত্র। টালিগঞ্জের সাম্প্রতিকতম হার্টথ্রব। মুখোমুখি দেবশ্রুতি রায়চৌধুরী
|
পত্রিকা: আপনি নাকি উকিলের কাছে ছুটছেন এফিডেভিট করে নিজের নামটা পাল্টানোর জন্য?
পার্নো: (থতমত খেয়ে) অ্যাঁ!
পত্রিকা: হ্যাঁ। শোনা যাচ্ছে ‘পার্নো মিত্র’ না, এ বার থেকে মিড্ল নেম জুড়ে আপনার নাম হতে চলেছে ‘পার্নো রঞ্জনা মিত্র’...
পার্নো: (প্রচণ্ড হাসতে হাসতে) কী যে বলেন!
পত্রিকা: না তো কী! প্রথম ছবিই সুপার হিট। আপনার চরিত্রের নাম সবার মুখে মুখে। এই যে পার্ক স্ট্রিটে আড্ডা মারছি, রাস্তা দিয়ে যারা যাচ্ছে, তারাও দেখছি বলছে, “ওই দ্যাখ রঞ্জনা।” আপনি তো রঞ্জনা নামেই বিখ্যাত...
পার্নো: সর্বনাশ করেছে! পরের ছবিতে আমার চরিত্রের নাম ‘ঋত্বিকা’। ধরুন ওটাও যদি পপুলার হয়, তা হলে তো বলবেন, আমার নাম হওয়া উচিত ‘পার্নো রঞ্জনা ঋত্বিকা মিত্র’। এ ভাবে এক-একটা চরিত্রের নাম জুড়তে জুড়তে কী অবস্থা দাঁড়াবে ভাবুন তো!
পত্রিকা: ‘রঞ্জনা...’ এত হিট করবে ভেবেছিলেন?
পার্নো: সত্যি ভাবিনি। জানতাম, অঞ্জনদা (দত্ত) একটা খুব অন্য রকম ছবি তৈরি করছেন। এটাও জানতাম যে, ছবিতে ভাল লাগার অনেক উপাদান আছে, কিন্তু এত মানুষ যে ছবিটাকে পছন্দ করবেন, এটা সত্যি ভাবিনি। আমার অবাঙালি বন্ধুরা পর্যন্ত ছবিটা দেখে বলেছে, এ রকম ছবি বাংলায় হয় ওরা জানতই না। বলেছে, এই ধরনের ছবি অন্য ভাষায় ডাব করা উচিত ইত্যাদি। বাংলা ছবি নিয়ে ওঁদের এত উৎসাহ আগে দেখিনি।
পত্রিকা: ইন্ডাস্ট্রি বলছে, এটা একটা ‘কাল্ট’ ছবি। বাংলা ছবির ইতিহাসে এই ছবিটা থেকে যাবে... এ রকম একটা ছবিতে আপনি নায়িকা। যেটা কিনা পাকেচক্রে আপনার প্রথম ছবিও। দারুণ ব্যাপার নিশ্চয়ই। কিন্তু এই আপনিই তো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আর কাজ করবেন না বলে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন...
পার্নো: (গম্ভীর ভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে) ঠিকই। আসলে টেলিসিরিয়াল করতে করতে চূড়ান্ত বোর হয়ে গিয়েছিলাম। ভাল কাজ, অন্য রকম কাজ করার খিদেটা ভেতরে ভেতরে বাড়ছিল। অথচ সে রকম অফার আসছিল না। লোকে বলত, আমায় দেখতে ভাল, অভিনয়টা ভাল করতে পারি, তাও এই অফার না পাওয়া ব্যাপারটা আস্তে আস্তে একটা হতাশা তৈরি করছিল। শেষে একদিন ভাবলাম, যাই মুম্বই। দেখি ওখানে যদি অন্য রকম অফার, ভাল অফার পাই।
পত্রিকা: তার পর ‘রঞ্জনা...’র অফার আর কলকাতায় ফিরে আসা?
পার্নো: ‘রঞ্জনা...’র অফারটা ফর্মালি পাওয়ার আগেই নীল (দত্ত) আমাকে মুম্বইয়ে ফোন করে বলত, “কী করছিস ওখানে বসে? হাতে সময় আছে যখন গিটার বাজানোটা শিখে ফেল।” পাত্তাই দিইনি তখন ওই সব কথায়। তার পর দিন দু’য়েকের জন্য কী একটা কাজে কলকাতা এসেছিলাম, অঞ্জনদা ফোন করে বললেন, “মুম্বই ফেরার আগে এক বার আয়। একটা স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাব।” গেলাম। শুনলাম। শুনতে শুনতে ভাবছি, আমায় হয়তো সাংবাদিকের রোলটার জন্য ভাবছেন অঞ্জনদা। স্ক্রিপ্ট পড়া শেষ হলে জানতে চাইলাম, আমার জন্য কোন রোলটা ভেবেছ? অঞ্জনদা বলল, “রঞ্জনা।” নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারিনি। অঞ্জন দত্তর ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’য় আমি রঞ্জনা! তার পর থেকে ৮ মাস কেটে গেছে। ছবি রিলিজ করে সফলও হয়ে গেছে। এখনও ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আমিই ‘রঞ্জনা’।
পত্রিকা: সত্যিই কতটা ‘রঞ্জনা’ আপনি?
পার্নো: (চোখ দু’টো খানিক ক্ষণ বুজে) অনেকটাই। রঞ্জনা তার প্যাশনের জন্য অনেক দূর যেতে পারে। আমিও। ভাল অভিনয়ের জন্য ‘আই ক্যান গো টু এনি এক্সটেন্ট’।
পত্রিকা: তাই? এত সিরিয়াস আপনি কাজের ব্যাপারে? কিন্তু লোকে তো বলে আপনি চূড়ান্ত খামখেয়ালি। কখন কী করেন ঠিক নেই। এই খামখেয়ালিপনার জন্যই ‘০৩৩’-তে ডেবিউ করা হয়নি। শু্যটিংয়ের সময় আপনি নাকি আমেরিকায় ছুটি কাটাচ্ছিলেন...
পার্নো: যেটা বললেন সেটা কিছুটা ঠিক, কিন্তু পুরোটা নয়।
পত্রিকা: পুরোটা শুনি তা হলে।
পার্নো: বিরসা (দাশগুপ্ত)র সঙ্গে অনেক দিনই ধরেই ‘০৩৩’ নিয়ে কথা হচ্ছিল। দেড় বছর অপেক্ষা করেছি ছবিটার জন্য। ছবি আটকে গিয়েছিল। যা হয় আর কী! আমি তখন টানা সিরিয়ালে কাজ করে ক্লান্ত। একটা ছুটির খুব দরকার ছিল। ছবিটা আটকে আছে বলে ছুটি কাটাতে আমেরিকা গেলাম। বিরসাকে বলেও গিয়েছিলাম। ও মা! সেখানে যাওয়ার পরে পরেই একদিন বিরসার ই-মেল ‘এ মাসের শেষে ‘০৩৩’র ওয়ার্কশপ শুরু হচ্ছে।’ আমি তো হা।ঁ রীতিমতো গাঁটের পয়সা খরচা করে আমেরিকা বেড়াতে গেছি। সেই প্রথম বিদেশ ট্যুর। আর যেতে না যেতেই বলে কিনা ফিরে আসতে হবে! আসা হয়নি বুঝতেই পারছেন।
পত্রিকা: বুঝলাম। কিন্তু সেটা তো বিখ্যাত হওয়ার আগে। বড় পর্দায় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগে। এখন যদি এ রকম কিছু হয়?
মানে ‘রঞ্জনা’ পরবর্তী সময়ে যদি আপনি বেড়াতে যান, আর ছবির কাজ হঠাৎ শুরু হয়ে যায়, তা হলে?
পার্নো: (হাসতে হাসতে) খুব একটা তফাত হবে বলে মনে হয় না। বেড়াতে চলে গেলে আমাকে ফিরিয়ে আনা খুব মুশকিল।
পত্রিকা: সাঙ্ঘাতিক স্টেটমেন্ট! প্রযোজক-পরিচালকেরা তো আঁতকে উঠবেন!
পার্নো: আমি এই রকমই। কাজ যেমন ভালবাসি, তেমনই আমার নিজের স্পেসটাও খুব দরকার। আমার বেড়াতে, বই পড়তে, গান শুনতে ভাল লাগে। আর সেগুলো করতে না পারলে হাঁফিয়ে উঠি। শুধু টাকার জন্য কাজ করি না। করতেও চাই না। ভালবেসে যে চরিত্রটা বেছে নিই তাতে নিজের দু’শো ভাগ দিই। তবে জীবনের অন্য দিকগুলোও আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।
|
|
পত্রিকা: এ তো একদম ‘পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট’ উত্তর দেখছি। কোথায় বলবেন, ‘আমার কাজই আমার সব’...
পার্নো: বানিয়ে বানিয়ে বলতে পারব না। সরি। ছোটবেলা থেকেই অভিনয় আমার প্যাশন। ক্লাস এইটে পড়ার সময় থেকেই জানতাম অভিনেত্রী হব। সেই ভাবেই নিজেকে গড়েছি। কিন্তু জীবনের অন্য দিকগুলোও যে আমাকে টানে সেটা বলতে অসুবিধা কোথায়? আবার এটাও তো ঠিক যে, প্রচুর ভাল কাজ করতে চাই। গৌতমদা (ঘোষ), ঋতুদা (ঋতুপর্ণ ঘোষ), টনিদা (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী), শ্রীজিৎ (মুখোপাধ্যায়)সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই।
পত্রিকা: আর নায়কদের মধ্যে? দেব, জিৎদের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছে করে না? মনে হয় না একটা ‘পাগলু’ বা ‘জোশ’ করি।
পার্নো: এ রকম ছবিতে আমার রোলটা যদি অর্থবহ হয় তা হলে অবশ্যই হ্যাঁ। সেখানে পরিচালক বা নায়কের থেকেও আমার কাছে আমার রোলটাই ইম্পর্ট্যান্ট।
পত্রিকা: কিন্তু কোনও এক জন বিশেষ নায়কের সঙ্গে কাজ করতে নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে...
পার্নো: অঞ্জনদার সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন দেখতাম। যেটা সফল হয়েছে। এখন মুখিয়ে আছি বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করার জন্য। ‘অটোগ্রাফ’ দেখার পর তো বুম্বাদার প্রেমেই পড়ে গেছি। শুধু আমি কেন, আমার বয়সী সব মেয়েই বোধহয়। ওঁর সঙ্গে কাজ করতে পারলে দারুণ লাগবে। (হেসে) এটা ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ উত্তর দিলাম না কিন্তু।
পত্রিকা: মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের মেয়ে আপনি। বাবা-মা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে বলেননি?
পার্নো: (হাসতে হাসতে) ভাগ্যিস বলেননি। আসলে ওঁরা জানতেন, আমার দ্বারা ও সব হবে না। বাবা ইঞ্জিনিয়ার। বাড়িতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী ভর্তি। কিন্তু আমি (হাসতে হাসতে) ওই গ্র্যাজুয়েশন করেই ফুলস্টপ। বাবা-মা সেখানে কোনও জোর করেননি। উল্টে যা করেছি তাতেই ওঁদের সাপোর্ট পেয়েছি। প্রথম প্রথম ওঁরা বোঝেননি আমি অভিনয়ের ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস। বুঝতে পারার পর কখনও বাধা দেননি। এ ব্যাপারে আমি বাবা-মা’র কাছে খুব কৃতজ্ঞ।
পত্রিকা: লোকে বলছে, আপনি এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রির সব থেকে বড় খবর। এ সবে আশেপাশে ছেলেদের ভিড় আগের থেকে বাড়ল না কমল?
পার্নো: ধুর! (হতাশ মুখভঙ্গি করে) কোথায় ছেলে? আমার আশেপাশে আগেও ছেলে-টেলে ছিল না। এখনও নেই...
পত্রিকা: এই উত্তরটা লিখলে লোকে ইন্টারভিউটা বিশ্বাস করে পড়বেন ভাবছেন?
পার্নো: (হাসতে হাসতে) আরে সত্যি বলছি। ছেলেরা আমার আশেপাশে খুব একটা ঘেঁষে না। ভয়-টয় পায় বোধহয়!
পত্রিকা: তা আপনি কী এমন করেন যে ভয় পায়?
পার্নো: কিছুই করি না...
পত্রিকা: তা হলে কি কিছু করেন না বলে ভয় পায়?
পার্নো: হা হা হা। এটা যা-তা হচ্ছে...
পত্রিকা: কিন্তু আপনি তো এক ক্রিকেটারের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে শোনা যায়...
পার্নো: (হেসে) আমিও তাই শুনেছি।
পত্রিকা: বুঝলাম। শেষ প্রশ্ন। ধরে নিন, প্রেম করছেন। বয়ফ্রেন্ড হঠাৎ বলল, ‘পার্নো আমি আর আসব না’। কী করবেন?
পার্ণো: বলব ‘ওকে’। তুমি যেতে পার। আমি বেটার কাউকে খুঁজে নেব। |
|
|
|
|
|