বিশ্বাস বিশিষ্টদের
জঙ্গলমহলে শান্তির জন্য আলোচনাই রাস্তা
নগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো-সহ অন্যদের মুক্তি দিয়েই সরকারের শান্তি আলোচনা শুরু করা উচিত বলে মনে করছেন জঙ্গলমহলের বিশিষ্টজনেদের একাংশ। ওই মহলের মতে, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গেই আলোচনায় বসুক সরকার। নাগরিক সমাজের কয়েক জনের আবার বক্তব্য, জঙ্গলমহলের সমস্ত অরাজনৈতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষের সঙ্গেই কথা বলুন সরকারি প্রতিনিধিরা। সাধারণ মানুষ কী চাইছেন, তা খতিয়ে দেখা হোক। কার সঙ্গে, কী ধরনের প্রেক্ষিত তৈরি করে আলোচনা হবে, সে নিয়ে নানা মত থাকলেও শান্তি-সন্ধানে আলোচনাই যে একমাত্র রাস্তা, তা নিয়ে অবশ্য অভিন্নসুরই শোনা যাচ্ছে জঙ্গলমহলে।
শান্তি স্থাপন ও বন্দিমুক্তির বিষয়ে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে যে কমিটি গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার চার সদস্য শুক্রবার মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে গিয়ে দেখা করেন ছত্রধর মাহাতো, মাওবাদী নেতা সুদীপ চোংদার-সহ চার বিচারাধীন বন্দির সঙ্গে। তার আগে ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি ওই চার জন--সুজাত ভদ্র, অশোকেন্দু সেনগুপ্ত, ছোটন দাস ও প্রসূন ভৌমিকরা ঝাড়গ্রামে ‘ঝাড়খণ্ড আন্দোলন সমন্বয় মঞ্চ’-এর নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দারও বক্তব্য শোনেন। জেলে ছত্রধরদের সঙ্গে সরকারি প্রতিনিধিদের দেখা করার ঘটনাকে শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন জঙ্গলমহলের নাগরিক সমাজের একাংশ।
ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্কর সুখময় শতপথীর বক্তব্য, “অবিলম্বে বেআইনি কার্যকলাপ নিরোধক আইন (ইউএপিএ) বাতিল করে এবং জেলবন্দিদের মুক্তি দিয়েই শান্তির সংলাপ শুরু হোক।” আর এক শিল্পী ও ভাস্করউপল পাহাড়ির আবার বক্তব্য, “বর্তমান শাসকদল নির্বাচনের আগে যৌথ বাহিনী প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সেই দাবি কার্যত খারিজ করা হয়েছে। ছত্রধর মাহাতো-সহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিয়ে সরকারকে আগে নমনীয় মনোভাব দেখাতে হবে।” বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশিষ্ট ঝুমুর-গায়ক বিজয় মাহাতোরও। তাঁর মতে, “জঙ্গলমহলের সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নে সরকারকে ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে তো আলোচনায় বসতেই হবে। আলোচনার আগে প্যাকেজে কিন্তু লাভ হবে না।”
নাট্যকর্মী দেবলিনা দাশগুপ্ত অবশ্য মনে করেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে জঙ্গলমহলের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, “শান্তি ফেরাতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গেই কথা বলা দরকার। দেখা হোক সাধারণ মানুষ কী চাইছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় সব মহলকে আন্তরিকও হতে হবে।” কবি তপন চক্রবর্তীও মনে করেন, “ছত্রধর মাহাতোর পাশাপাশি অন্য সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সরকারি প্রতিনিধিরা কথা বলুন। তাতে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ জরুরি, সে নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব।” সমাজ-কর্মী স্বাতী দত্তেরও দাবি, “রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আগে স্থানীয় বিশিষ্টজনেদের নিয়ে আলোচনায় বসে সরকারকে সমাধান সূত্র বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ একটি বা দু’টি স্তরে রাজনৈতিক সংলাপে সমস্যার সমাধান হতে পারে না।” আইনজীবী কৌশিক সিংহের মতে, মূল সমস্যার উৎস খুঁজতে হলে “জঙ্গলমহলের আন্দোলনকারী, স্বজনহারা ও নির্যাতিত বাসিন্দাদের সঙ্গে সহানুভূতিশীল হয়েই সরকার পক্ষকে আলোচনায় বসতে হবে।”
কার সঙ্গে এবং কী প্রাক্-শর্ত পূরণ করেসে নিয়ে অনেক ভাবনা। কিন্তু আলোচনাই যে একমাত্র পন্থা, সে নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই নাগরিক সমাজের। শান্তি প্রার্থনায় আলোচনারই অপেক্ষায় তাঁরা।
Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.