ফিল্মি ঢঙে ছিনতাইয়ের চেষ্টা ব্যর্থ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ভরদুপুরে ছিনতাই হয়ে যাচ্ছিল লক্ষাধিক টাকা! নিতান্তই বেসামাল হয়ে মোটরবাইক থেকে পড়ে যায় দুই দুষ্কৃতী। তার পরেই দৌড়। হাত ব্যাগ নিয়ে দৌড়চ্ছে দেখে লোকে ছিনতাইবাজ ভেবে গণধোলাই দিতে পারে ভেবেই ফেলে দেয় সেই টাকা ভর্তি ব্যাগ। তাই এ যাত্রায় সংস্থার টাকা খোওয়ানো থেকে বেঁচে গেলেন রাইস মিলের কর্মী দীনবন্ধু আচার্য।
হিন্দি সিনেমার মতো এই ঘটনা ঘটল শুক্রবার মেদিনীপুর শহরে। জেলা পরিষদের সামনে। একেবারে ভরদুপুরে। রাস্তায় তখন অনেক মানুষ, যানবাহন। প্রথমে অবশ্য পথচলতি মানুষ বুঝতেই পারেননি যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তাঁরা ভাবছেন, দুই যুবক বোধহয় জোরে গাড়ি চালাতে গিয়েই পড়ে গিয়েছেন। কিন্তু ছুটছে কেন? আবার হাতে ব্যাগ! সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। সেই সময়েই দীনবন্ধুবাবুর চিৎকার কানে ভেসে আসে‘আমার ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছে’। |
|
ঘটনার কথা বলছেন দীনবন্ধুবাবু |
দুষ্কৃতীরা তখন শিশু উদ্যানের পাশ দিয়ে দৌড়চ্ছে। সেই রাস্তাতেও অনেক লোকজন। ধরা পড়ে গণধোলাই খেতে হতে পারে, এই ভয়েই ব্যাগ ফেলে পালায় ছিনতাইবাজরা। পরে পুলিশ এসে ছিনতাইবাজদের মোটরবাইকটি আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, মোটরবাইকের নম্বর ধরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কিন্তু তাতে সত্যিই কি প্রকৃত অপরাধীর সন্ধান মিলবে? এই প্রশ্ন উঠছে অন্য এক কারণে। গত ৫-৬ মাসে মেদিনীপুর শহরে কম করেও ২০টি মোটরবাইক চুরির ঘটনা ঘটেছে। যে বাইকগুলি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তেমন চোরাই মোটরবাইক নিয়েই যদি ছিনতাইবাজরা এসে থাকে? পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, সে দিকটাও তদন্তের সময়ে মনে রাখা হবে।.
কিন্তু দীনবন্ধুবাবুর ব্যাগে টাকা রয়েছে কী ভাবে জানল দুষ্কৃতীরা? দীনবন্ধুবাবুর বাড়ি চন্দ্রকোনা রোডে। সেখানেরই এক রাইস মিলের কর্মী। মেদিনীপুর শহরে এসেছিলেন সংস্থার টাকা তুলতে। গোলকুঁয়াচকের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ২ লক্ষ টাকা তোলেন। মেদিনীপুর শহরে তাঁর এক বন্ধু রয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে সাইকেল নিয়ে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। টাকাভর্তি ব্যাগটি সাইকেলের হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে যাচ্ছিলেন। মাঝে একটি জুতোর দোকান থেকে জুতোও কেনেন। |
|
দুষ্কৃতীদের মোটরবাইক |
জুতোর ব্যাগটিও ঝোলানো ছিল সাইকেলের হ্যান্ডেলেই। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা নিশ্চয়ই আগেভাগে টাকা তোলার খবর পেয়েছিল। দীনবন্ধুবাবু জেলা পরিষদের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দুষ্কৃতীরা কালো ব্যাগটি সাইকেল থেকে তুলে নেয়। সেই সময়ে ব্যাগটি সাইকেলের হ্যান্ডেলে একটু আটকে যায়। জোরে হ্যাঁচকা মেরে ব্যাগটি টেনে নেওয়ায় সাইকেল থেকে পড়ে যান দীনবন্ধুবাবু। আর প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনে বেসামাল হয়ে উল্টে যায় ছিনতাইবাজদের মোটরবাইকটিও।
ভরদুপুরে জনবহুল রাস্তায় দুষ্কৃতীরা ছিনতাইয়ের সাহস পেলল কী ভাবে? স্বভাবতই আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে শহরে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুকেশ জৈন অবশ্য বলেন, “চুরি-ছিনতাই বাড়তে থাকায় কড়া পদক্ষেপের কথা ভাবছে পুলিশ।” |
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|