তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’, প্রশাসনকে অভিযোগ বাম জনপ্রতিনিধিদের
কোথাও মহিলা পঞ্চায়েত প্রধানকে দফতরে ‘আটকে রেখে’ পদত্যাগপত্র লেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, আবার কোথাও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য থেকে কর্মাধ্যক্ষদের ‘মারধর’ করা হচ্ছে। ফলে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে কাজ করতেই পারছেন না। রাজ্যের নব্য শাসক দল তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে এ রকম একগুচ্ছ অভিযোগ জানাতে এবং নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাম জনপ্রতিনিধিরা।
এক সময়ের ‘লালদুর্গ’ পশ্চিম মেদিনীপুরে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বেশিরভাগ আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি তৃণমূল বা কংগ্রেস। বেশিরভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ সিপিএম তথা বামেদেরই দখলে। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পরে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। নতুন শাসক দলের ‘সন্ত্রাসে’ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কাজকর্ম কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। এই প্রেক্ষিতেই শুক্রবার জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পঞ্চায়েতের বাম জনপ্রতিনিধিরা মেদিনীপুরে মিছিল করেন। মিছিলের পরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শুভাঞ্জন দাস এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুকেশ জৈনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। অন্তরাদেবীর দাবি, “পঞ্চায়েত সদস্যদের জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে। এই সন্ত্রাস যাতে বন্ধ হয়, সকলের নিরাপত্তা রক্ষা হয়, প্রশাসনের কাছে সে দাবিই জানিয়েছি।” অতিরিক্ত জেলাশাসকের আশ্বাস, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই পুলিশ যাতে কড়া ব্যবস্থা নেয়, তা দেখা হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের বাম জনপ্রতিনিধিদের মিছিল। শুক্রবার। রামপ্রসাদ সাউ
যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে রাজি নন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “বাম জনপ্রতিনিধিদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বা মারধর করা হচ্ছে বলে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়েছেন, শান্তি বজায় রেখে উন্নয়নের কাজ করতে হবে। সেই কাজে কেউ বাধা দিলে, এমনকী, সে আমাদের দলের কর্মী হলেও, বরদাস্ত করা হবে না।”
তৃণমূল নেতার এই বক্তব্য কার্যত ‘সত্যের অপলাপ’ বলেই কিন্তু পাল্টা দাবি নারায়ণগড় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমর সিংহ, মোহনপুর পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ প্রণব দে কিংবা সাঁকরাইলের কুলটিকরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অনামিকা সাহুর। অনামিকাদেবীর অভিযোগ, “জোর করে আমার পঞ্চায়েতের চার সদস্যাকে পদত্যাগপত্র লিখিয়েছে তৃণমূল। পাঁচশো, হাজার লোক নিয়ে পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে আমাকেও পদত্যাগ করার ফতোয়া দিয়েছিল। পদত্যাগ না-করায় শারীরিক নির্যাতনের হুমকি দিয়েছে।” সমরবাবুর অভিযোগ, “এক দিন পঞ্চায়েত সমিতির অফিস থেকে ফেরার পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে তৃণমূল। পদত্যাগ করার ফতোয়া দেয়।” আর পেশায় শিক্ষক প্রণববাবু বলেন, “আমাকে রাস্তায় আটকে বেধড়ক মারধর করে ওরা। আংটি, ঘড়ি, টাকাপয়সা কেড়ে নেয়। তার পরে এই বলে মুচলেকা দিতে বাধ্য করে যে, আমি দুর্নীতিতে যুক্ত। সে জন্য ২০ হাজার টাকা ‘জরিমানা’ বাবদ আদায় করে তবে আমায় ছাড়ে।” এ ধরনের ‘অত্যাচারের’ ফলে পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই গত দু’মাস ধরে দফতরে যেতেও ভয় পাচ্ছেন বলে বাম প্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছে জানান। জেলাস্তরে সর্বদল বৈঠক ডাকার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক।
Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.