|
|
|
|
সাবির-কাঞ্চনের কী হল, জানতে চান পরিজনেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া |
ঠিক দু’বছর আগের ঘটনা। ২০০৯-এর ৩০ জুলাই। লালগড়ের বৃ্ন্দাবনপুর থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গিয়েছিলেন দুই পুলিশকর্মীকাঞ্চন গরাই ও সাবির মোল্লা। দু’বছর প্রতীক্ষার পরেও দুই পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেননি, ‘অপহৃত’ সাবির-কাঞ্চন আদৌ জীবিত আছেন কি না। ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সেই ঘটনার ক’দিন পরে মাওবাদী নেতা বিকাশ এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য জানিয়েছিলেন, ওই দুই পুলিশকর্মী ‘জনরোষের শিকার হয়েছেন’। পেটের দায়ে চাকরি করতে যাওয়া সাধারণ দুই পুলিশকর্মী কেন এবং কী ধরনের ‘জনরোষের শিকার’, তা-ও বুঝতে পারেননি সাবির ও কাঞ্চনের পরিজনেরা। সাদা পোশাকে নিরস্ত্র অবস্থায় লালগড় থেকে মোটরবাইকে ধরমপুর ক্যাম্পে ফেরার পথে অপহৃত হয়েছিলেন ওই দু’জন। তাঁরা নিখোঁজ হওয়ার পরে বেতনের টাকা অবশ্য বাড়ির লোকেদের দেওয়ার ব্যবস্থা করে বিগত বাম সরকার। সেই টাকা নিতে প্রতি মাসে সাবিরের বৃদ্ধা মা জাহানারা বেওয়াকে বর্ধমানের মেমারির বাড়ি থেকে যেতে হয় উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুরে। আর কাঞ্চনের বাবা বাসুদেববাবুকে বাঁকুড়ার ছাতনা থেকে যেতে হয় পুরুলিয়ায়। দু’জনেরই আর্জি, নিকটবর্তী কোনও জায়গা থেকে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থাটুকু করা হোক। সে আর্জিরও অবশ্য এখনও সুরাহা হয়নি। |
সাবির মোল্লা |
কাঞ্চন গড়াই |
|
দুই পুলিশকর্মীর ঠিক কী পরিণতি হয়েছে, তা জানার জন্য গত দু’বছরে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের সব মহলেই ঘুরেছেন পরিজনেরা। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছু জোটেনি। চলতি বছরের গোড়ায় লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চলে মাটি খুঁড়ে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলি সাবির-কাঞ্চনের কি না তা জানার জন্য ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। গত ১৩ মার্চ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সাবিরের মেজদা সামাদ মোল্লা এবং কাঞ্চনের বাবা ও মায়ের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরে মেমারির তেলসাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সাবিরের মায়ের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। সাড়ে চার মাস পরেও সেই ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টও জানতে পারেননি পরিজনেরা।
বছর দেড়েক আগে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাবির ও কাঞ্চনের পরিজনদের দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই মমতাই এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রতি সাবিরের মায়ের আর্জি, “সাবির-কাঞ্চন যদি বেঁচে থাকে তা হলে ওদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন। আর তা না হলে ওদের কী পরিণতি হয়েছে সেটা অন্তত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আমাদের জানান।” ১৩ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ায় এসেছিলেন। সার্কিট হাউসে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন কাঞ্চনের বাবা বাসুদেববাবু। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে সে দিন সর্বসমক্ষে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সাবির-কাঞ্চনের বিষয়টি তিনি দেখছেন। সেই আশ্বাসবানীতেই নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন বাসুদেববাবু। তবে হতাশাও চাপা থাকে না। তাঁর কথায়, “কাঞ্চনের বেতনের টাকা আনতে যখন পুরুলিয়ায় যাই, কাঞ্চনের বয়সী পুলিশকর্মীদের দেখলেই বুকের ভিতরটা হু-হু করে ওঠে।”
কৃষক পরিবারের সন্তান সাবির। বাবা নেই। চার ভাইয়ের মধ্যে সাবিরই সবচেয়ে ছোট। বছর পাঁচেক আগে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। ২০০৯-এর ১৫ জুলাই, নিখোঁজ হওয়ার মাত্রই ১৫ দিন আগে ধরমপুর ক্যাম্পে আসেন। ওই সময়েই পুরুলিয়ার শিমুলিয়ায় রাজ্য সশস্ত্র পুলিশেরই তেরো নম্বর ব্যাটেলিয়ন থেকে ধরমপুরের ক্যাম্পে আসেন ছাতনার ছেলে কাঞ্চনও। অত্যন্ত গরিব পরিবারের এই তরুণও বছর পাঁচেক আগেই পুলিশে চাকরি পেয়েছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। ছেলেদের হারিয়ে দুই পরিবারই হারিয়ে ফেলেছে জীবনের ছন্দ। |
নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|