দক্ষিণ কলকাতা
অবাধ ব্যবসা
রুদ্ধ স্রোত
লের গতি রুদ্ধ করে ক্যানালের দু’ধারে বেআইনি ভাবে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সায়েন্স সিটির কাছে অম্বেডকর সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাবারবান হেডকাট ক্যানালটি কার্যত স্রোতহীন হয়ে পড়ছে পলিথিন আর প্লাস্টিকের বস্তায়। প্রশ্ন উঠছে, কেন বাড়তে দেওয়া হচ্ছে বেআইনি এই ব্যবসা? কেন নষ্ট করা হচ্ছে পরিবেশ?
দক্ষিণ কলকাতার তিলজলা এলাকার অম্বেডকর সেতু থেকে যত দূর চোখ যায়, নজরে পড়ে শুধুই পলিথিন ও প্লাস্টিকের বস্তা। খালের দুই ধার ঘেঁষে সারি সারি ছোট-বড় ঝুপড়ি। সেখানেই চলছে পলিথিন প্যাকেট, প্লাস্টিক বোতল, ছেঁড়া-ফাটা টায়ার ও টিউবের ব্যবসা। শহরে আবর্জনা হিসেবে ফেলে রাখা এই সব মাল কাগজকুড়ানিদের হাত হয়ে চলে যাচ্ছে সেখানে। বেশির ভাগটাই ব্যবহার হচ্ছে রিফিলের জন্য। যেগুলো বাতিল হচ্ছে, তা পড়ছে খালের জলে। ক্যানাল হয়ে উঠেছে কার্যত ‘ডাস্টবিন’। দুর্গন্ধে ভরে গিয়েছে আশপাশ। শুধু জলের গতিরোধ নয়, দারুণ ভাবে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশও।

সম্প্রতি একনাগাড়ে বৃষ্টির পরে জল জমে কলকাতা শহরের নানা জায়গায়। ঘুম ছুটে যায় পুরসভা আর সেচ দফতরের কর্তাব্যক্তিদের। নিকাশি ব্যবস্থার গাফিলতির অভিযোগই প্রথম ওঠে। পলিথিন আর প্লাস্টিকের প্যাকেটে আটকে যায় জলের স্বাভাবিক গতি। বিকল হয়ে পড়ে বেশ কয়েকটি পাম্প। হইচই হয় প্রশাসনিক মহলে। খালপাড়ের দখলদারদের বিরুদ্ধে তর্জন গর্জন শুরু হয়ে যায়। ব্যস, ওই পর্যন্তই। বৃষ্টি একটু কমতেই সব চুপচাপ।
কিন্তু কেন?
ওই ক্যানালের পাশেই চৌবাগা। স্থানীয় বাসিন্দা রতন দাসের কথায়: “একটা সময় ফাঁকা ছিল খালপাড়। জল চলাচলেও কোনও বাধা ছিল না। একটা দুটো করে পলিথিনের ব্যবসা শুরু হয়। তখন গুরুত্ব দেয়নি সরকার। এখন তো খালপাড় ওদের দখলে চলে গিয়েছে। শুধুমাত্র ভোটসর্বস্ব রাজনীতির জন্য কোনও দল ওদের উচ্ছেদ করতে চায় না।”
ক্যানালটি সেচ ও জলপথ দফতরের অধীনে থাকলেও খালপাড়ের কর্তৃত্ব পুরোপুরি তাদের হাতে নেই বলে ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করার বিষয়ে তাই তাদের কিছু করার নেই বলে দফতর সূত্রে বলা হয়। রাজ্যের সেচ ও জলপথ দফতরের সচিব অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গতিপথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মে জল প্রবাহিত হচ্ছে না। প্রায় পুরো নিকাশি ব্যবস্থা প্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে করতে হচ্ছে।” তিনি জানান, সাবারবান হেডকাট ক্যানালের জল এস ডব্লিউ এফ খালের মাধ্যমে কুলটি গাঙে গিয়ে পড়ছে। ওই যাত্রাপথের দু’ধারে ঝুপড়ির সংখ্যা বাড়ায় এমনিতেই খালের পরিসর কমে যাচ্ছে। তার উপর পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারণে সমস্যা আরও বাড়ছে।”
সমাধানের রাস্তা কী? সেচ বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ারের মন্তব্য: “নিকাশি বিষয়টা বরাবরই অবহেলিত হয়ে রয়েছে। এটা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত।” তিনি জানান, খালের দু’পাড় কংক্রিটের (ব্লক পিচিং) তৈরি করে ঘিরে রাখলে দখলদারি রোখা সম্ভব। এ নিয়ে পরিকল্পনাও হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে কাজ হয়নি। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “খালগুলি পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সেচ দফতরের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে।”
অন্য দিকে, এই বেহাল দশার জন্য আগের বাম সরকারকে দায়ী করেছেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার। তাঁর মন্তব্য: “এত কাল এ রাজ্যে নামেই একটা পরিবেশ দফতর ছিল। কোনও কাজ হয়নি।” তিনি বলেন, “আগের সরকার পরিবেশ সচেতনতাকে অগ্রাধিকার দেয়নি। পলিথিন, প্লাস্টিক-সহ পচনশীল নয়, এমন সব জিনিস পরিবেশে কতটা ক্ষতিকর, তা জানাতে তেমন কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি।” মন্ত্রী জানান, সবে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শীঘ্রই কাজ করা হবে।

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
Previous Story

Kolkata

Next Story




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.