|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা
সাজবদল |
কোন সে আলোর... |
সঞ্জয় সিংহ |
দিনের আলোয় ঝকঝকে তকতকে ফুটপাথ। আর রাতে অন্য রকম আলোয় মায়াবী পরিবেশ। এখন আর স্বপ্ন নয়!
এত দিন দক্ষিণের হরিশ মুখার্জি
রোডের দু’দিকের ফুটপাথে যে আলোর শোভা দেখা যেত, এখন তা শহরের উত্তর-পূর্ব-পশ্চিম সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। কারণ, এমনটাই চেয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়: “কলকাতার সৌন্দর্যায়ন তো বটেই, আমরা চাই শহরের রাস্তায় আলোকসজ্জাও যেন সুন্দর হয় এবং শহরের সর্বত্রই যেন একই রকম আলোর বিন্যাস থাকে। এটা এখন কলকাতায় হচ্ছে। এর পর রাজ্যের সমস্ত জেলা-শহরের রাস্তায় এমন আলোকসজ্জা হবে। মানে আলো দিয়ে শহরের একটা ‘ব্র্যান্ড’ বা পরিচিতি তৈরি করা।”
সেই কারণেই কলকাতা পুরসভা দক্ষিণে হরিশ মুখার্জি রোড থেকে শুরু করে উত্তরে রাজবল্লভ পাড়া, গিরিশ অ্যাভিনিউতে এই বিশেষ ধরনেরআলোয় পথের দু’ধার সাজাচ্ছে। আবার দক্ষিণে দেশপ্রিয় পার্ক থেকে আরম্ভ করে পূর্বে সিআইটি রোড-কাঁকুড়গাছিতেও এই ভাবে আলোকসজ্জা হচ্ছে। নতুন সাজে সাজা হচ্ছে বেহালা সমেত সংযোজিত এলাকার রাস্তা ও পার্কগুলিও। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “আমাদের নেত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন শহরটাকে সাজানোর। আমরা সেই কাজটা করছি। দ্রুত যাতে কাজ
শেষ হয়, সে দিকে লক্ষ রেখেই আমরা সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা তৈরি করেছি।” |
|
এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারও জানান, রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগেই তৃণমূল নেত্রী তাঁদের বলেছিলেন, ‘সবুজ কলকাতা, পরিচ্ছন্ন কলকাতা’ তৈরি করতে হবে। পুরসভার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দেবাশিসবাবুরা সেই ‘গ্রিন কলকাতা, ক্লিন কলকাতা’ তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন। রাস্তার ফুটপাথ ও সংলগ্ন কলকাতায় যে সমস্ত পার্ক আছে, ইতিমধ্যেই সেই পার্কগুলিতেও আলোকসজ্জা, সংলগ্ন রাস্তা, ফুটপাথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে পুরোদমে। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, কলকাতায় প্রায় ৬৫০টি পার্ক আছে। এর মধ্যে ১০০টি পার্কের সাজবদলের কাজ প্রায় শেষ। সেই সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবর, বেলেঘাটার সুভাষ সরোবর, লালদিঘি, কার্জন পার্ক, কেএমডিএ-র ২০টি পার্কের সজ্জা পরিবতর্নের কাজ করছে পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রী যেমন শহরের আলোকসজ্জায় সামঞ্জস্য রাখার কথা বলেছেন, শহরের সমস্ত পার্কের সজ্জাও প্রায় একই ধাঁচে করা হচ্ছে।
পার্কে সৌন্দর্যায়নের কাজ শোভনবাবুদের আগে বামফ্রন্টের পুরবোর্ড থাকার সময় থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু দেবাশিসবাবুর দাবি, “তখন পার্কের সামনের রাস্তাগুলি ছিল অপরিচ্ছন্ন। কাগজকুড়ানিদের ঝুপড়িতে ভরা। ফুটপাথের উপর ডাঁই করে রাখা থাকত ওই কাগজকুড়ানিদের সংগ্রহ করা নোংরা জিনিসপত্র। আমরা ক্ষমতায় এসে পার্কের সামনে রাস্তা থেকে অবাঞ্ছিত ওই দখলদারদের সরিয়ে ফুটপাথগুলি পরিষ্কার করে দিয়েছি। ভ্রমণকারীরা যাতে স্বচ্ছন্দে পার্কে ঢুকতে পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” |
|
পার্ক বা ফুটপাথের অঙ্গসজ্জার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে শহরের রাস্তার সাজেও পরিবর্তন হচ্ছে। ইতিমধ্যেই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড ও সাদার্ন অ্যাভিনিউ মোড় থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তায় বুলেভার্ড তৈরি করা হচ্ছে। সেই বুলেভার্ডে থাকবে রংবেরঙের ফুলের গাছ। একই ভাবে কলকাতার
শরৎ বসু রোড, আশুতোষ মুখ্যর্জি রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সিআইটি রোড, কসবা কানেক্টর-সহ শহরের বড় রাস্তায় ‘রোড ডিভাইডার’-এর লোহার রেলিং তুলে দিয়ে ‘সবুজ প্রাচীর’ করা হবে। দেবাশিসবাবু বলেন, “লোহার রেলিংয়ের বদলে ডিভাইডারে লাগানো হবে রঙিন ফুলের গাছ। সেই গাছের উচ্চতা রাখা হবে এখনকার রেলিংয়ের উচ্চতায়। রাস্তা ধোয়ার জন্য যেমন জলের গাড়ি ব্যবহার করে পুরসভা, ডিভাইডারে লাগানো গাছে জল দেওয়ার জন্যেও পুরসভার গাড়ি থাকবে। এ জন্য অতিরিক্ত চারটি জলের গাড়িও কেনা হচ্ছে। গাছের উচ্চতা ও বহর যাতে না বাড়ে সে জন্য পুরকর্মীরা নিয়মিত ছাটাইয়ের কাজ করবে।” সেই সঙ্গে শ্যামবাজার থেকে মানিকতলা পর্যন্ত খালের দু’ধারে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তার সৌন্দর্যায়নের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে তিনি জানান।
শহরের সাজ-বদলের কাজই শুধু নয়, শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কারের ব্যাপারেও পুর-কর্তৃপক্ষ সচেতন। রাস্তা পরিষ্কারের জন্য বিশেষ সাফাইকর্মীও নামানো হয়েছে। শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা জল দিয়ে ধোয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন। সেই ব্যবস্থা এখন তো বলবৎ আছেই, তার সঙ্গে এখন নতুন ব্যবস্থা হয়েছে মধ্যাহ্ণে আরও একপ্রস্থ শহরের রাস্তাঘাটে ঝাড়ু দেওয়া। যে কোনও দুপুরেই শহরের নানা এলাকায় দেখা যাচ্ছে মাথায় টুপি, গায়ে ‘কেএমসি’র জ্যাকেট পরা কর্মীরা ব্যস্ত রাস্তা পরিষ্কারের কাজে।
মুখ্যমন্ত্রী বার বার বলেছেন, “বিজ্ঞাপনে কলকাতা তিলোত্তমা হবে বললেই হবে না, কাজেও করে দেখাতে হবে।” সেই কাজই করার চেষ্টা করছে পুরসভা।
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|