চেনা ছবিটা এ বার বদলাতে চলেছে!
রাস্তার ডিভাইডারে গজিয়ে ওঠা আগাছা, ঝোপঝাড়ের বদলে এ বার সেখানে শোভা পাবে জুনিপার, শ্যাম্পেন পাম, সিঙ্গাপুরি রঙ্গন, মেক্সিকান ঘাসের মতো বাহারি গাছ। নিবেদিতা সেতু প্রকল্প এলাকায় রাস্তার মাঝে ও খালি জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি ছোট গাছ লাগিয়ে এলাকার সৌন্দর্যায়ন ও উদ্যান তৈরির কাজ শুরু করেছে দ্বিতীয় বিবেকান্দ সেতু টোলওয়ে সংস্থা। ‘জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’র অন্তর্ভুক্ত এই কাজের দায়িত্বে রয়েছে হাওড়া বন দফতরের সামাজিক বনসৃজন বিভাগ ও একটি বেসরকারি নার্সারি। কাজের সমস্ত খরচ বহন করছে টোলওয়ে সংস্থাটি। |
হাওড়ার দিকে ২ ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগস্থল ‘জিরো পয়েন্ট’ থেকে শুরু করে কলকাতার দিকে বরাহনগরের সবেদাবাগান পর্যন্ত মোট ৬.১ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নিবেদিতা সেতু প্রকল্প এলাকা। প্রথম পর্যায়ে ওই প্রকল্পের হাওড়ার দিকে ৪ কিলোমিটার রাস্তার ডিভাইডারে এবং কলকাতার দিকে প্রায় ৫০০ মিটার রাস্তার ডিভাইডারে সৌন্দর্যায়ন ও দু’হাজার বর্গফুট এলাকায় উদ্যান তৈরির কাজ করা হয়েছে। হাওড়ার অংশের কাজ করেছে হাওড়া বন দফতরের সামাজিক বনসৃজন বিভাগ এবং কলকাতার দিকে কাজ করেছে একটি বেসরকারি নার্সারি। দ্বিতীয় বিবেকান্দ সেতু টোলওয়ে সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক লালা কে কে রায় বলেন, “প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচ করে বেশ কিছু অংশে কাজ হয়েছে। তবে কলকাতার দিকে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু সেখানে জমি দখল হয়ে থাকায় সমস্যা হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে আরও উদ্যান ও সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।”
টোলওয়ে সংস্থা সূত্রে খবর, নিবেদিতা সেতু প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিতীয় বিবেকান্দ সেতু টোলওয়ে সংস্থার ৩০ বছরের একটি চুক্তি রয়েছে। তাতে বলা রয়েছে, সেতু রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি জাতীয় সড়কের সৌন্দর্যায়ন ও খালি জমিতে উদ্যান তৈরি করতে হবে। সেই শর্ত মেনেই ২০১০-এ প্রাথমিক ভাবে বালির জিরো পয়েন্ট থেকে নিবেদিতা সেতুতে ওঠার মুখ পর্যন্ত রাস্তায় গাছ লাগানো শুরু হয়। |
ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া-র কলকাতা ডিভিশনের ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “জাতীয় সড়কের নিয়মেই বলা রয়েছে, কোনও রাস্তা বা সেতু তৈরির পরে যে সংস্থা সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করবে, তাদেরকে অবশ্যই সৌন্দর্যায়ন ও সবুজ বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। এটি জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত একটি কাজ।”
দ্বিতীয় বিবেকান্দ সেতু টোলওয়ে সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) সুমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “চলতি বছরে মিনিস্ট্রি অফ রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়ে থেকে নির্দেশ আসে, বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে ও ক্রেতা পরিষেবা বাড়াতে প্রকল্প এলাকায় আরও সবুজ বাড়াতে হবে। এর পরে মে মাস থেকে আমরা আরও বেশি মাত্রায় সৌন্দর্যায়ন ও উদ্যান তৈরির কাজ শুরু করেছি।”
হাওড়া বন দফতরের সামাজিক বনসৃজন বিভাগ সূত্রে খবর, বালির মাইতি পাড়ার কাছে জিরো পয়েন্ট থেকে রাজচন্দ্রপুর টোলপ্লাজা হয়ে নিবেদিতা সেতুতে ওঠার আগে পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডারের সৌন্দর্যায়ন করার জন্য প্রথমে সেখানে মেক্সিকান ঘাসের একটি কার্পেট বানানো হয়েছে। তার উপরে শ্যাম্পেন পাম, রয়্যাল পাম, জুনিপার, একালিসার মতো প্রায় ১১টি প্রজাতির বাহারি গাছ লাগানো হয়েছে। তবে কোনও গাছের উচ্চতাই ৫-৬ ফুটের বেশি নয়। একই রকম ভাবে একটি বেসরকারি নার্সারির সহযোগিতায় কলকাতার দিকে নিবেদিতা সেতু থেকে নেমে ডানলপের দিকে যাওয়ার সময় সবেদাবাগান পর্যন্ত রাস্তার ডিভাইডারে ও তাঁতিপাড়া বাস স্টপের উল্টো দিকে, দক্ষিণেশ্বর আইল্যান্ডে তিনটি উদ্যান বানানো হয়েছে। |
জাতীয় সড়কের ডিভাইডারে গাছ লাগানোর উপকারিতা কী? হাওড়ার বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী জানান, সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি এই গাছ লাগানোর আরও দু’টি উপকারিতা রয়েছে। প্রথমত, দু’টি বিপরীতমুখী গাড়ি যাওয়ার সময় তার হেডলাইটের আলো চালকদের চোখে পড়ে ঝাপসা হয়ে যায়। তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এই ছোট উচ্চতার গাছ যদি ডিভাইডারে লাগানো থাকে তা হলে যানবাহনের হেডলাইটের জোরালো আলো গাছের পাতায় আটকে যাবে। প্রতিফলিত হবে না। তাতে চালকের চোখ ঝাপসা হবে না। দ্বিতীয়ত, গাড়ি থেকে যে ধোঁয়া বের হয় সেগুলি যাতে বাতাসে বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্যও এই ছোট গাছের প্রয়োজন আছে। গাছগুলির পরিচর্যার বিষয়ে সুমিতবাবু বলেন, “হাওড়া জেলা বন দফতর ও বেসরকারি নার্সারিটিকে দু’বছরের জন্য পরিচর্যার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত জল দেওয়ার জন্য দু’টি জলের গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। শীঘ্রই এক জন উদ্যান বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হবে।”
|