|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
নিধিরাম পুলিশ |
বেনিয়মের ভিআইপি |
আর্যভট্ট খান |
লেকটাউন ট্রাফিক গার্ডের উল্টো দিকে দাঁড়িয়েছিলেন লেকটাউন বি ব্লকের বাসিন্দা অরূপ রায়। সিগন্যাল লাল হওয়ার পরে রাস্তা পেরতে গেলেন। আচমকাই একটি গাড়ি সামনে চলে আসে। কোনও মতে নিজেকে সামলে নিলেও পায়ে চোট পেলেন তিনি। ট্রাফিক গার্ডে পুলিশ থাকলেও তাঁরা গাড়িটি আটকাতে পারেননি।
প্রায় একই অভিজ্ঞতা কৈখালির বাসিন্দা অপর্ণা দাশগুপ্তের। ভিআইপি রোডের তেঘরিয়া মোড়ে অটো ধরার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। উল্টো দিক থেকে হঠাৎ নিয়ম ভেঙে একটি মোটরবাইক চলে এসে অপর্ণাদেবীকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। পড়ে গিয়ে চোট পান তিনি। সে দিন মোটরসাইকেলটিকে ধরার জন্য তেঘরিয়া মোড়ে কোনও ট্রাফিক পুলিশ ছিলেন না। মোড়ের দায়িত্বে থাকা রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার কর্মীরা জানান, তাঁদের পক্ষে মোটরসাইকেলটি ধরা সম্ভব নয়। তা ছাড়া তাঁরা শুধু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন। |
|
পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভিআইপি রোডে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। ভিআইপি রোডে লেকটাউনের কাছে, বাগুইআটি এবং এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেটের কাছে ট্রাফিক গার্ড রয়েছে। অথচ এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনেক সময়েই মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় না। সাহায্য চাইলেও পুলিশের দেখা মেলে না। রাত সাড়ে দশটার পরে তো কথাই নেই! ওই সময় অধিকাংশ গাড়িই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল মানে না। গাড়ির চাপও থাকে। |
|
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এমনিতেই কেষ্টপুর, বাগুইআটি ও কৈখালির মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। তার উপরে চলছে নিয়ম ভাঙা। কেষ্টপুরের বাসিন্দা স্বপন দেবনাথ বললেন, “জোড়ামন্দির মোড়ে যানজট দেখে বহু গাড়ি নিয়ম ভেঙে সার্ভিস রোডে চলে আসে। অনেক ক্রসিংয়ে ‘ইউ টার্ন’ বারণ। কিন্তু অনেক গাড়িই সে নিয়ম মানে না। তা ছাড়া নিয়ম ভাঙলে ধরারও কেউ নেই।” তেঘরিয়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কৈখালি এলাকার বহু গাড়ি রাস্তা কমানোর জন্য উল্টো পথে ভিআইপি রোডের তেঘরিয়া মোড়ে ওঠে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও অটোগুলি। ফলে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে। কয়েকটি মোড়ে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার কর্মীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ। এই পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভিআইপি রোডের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আমাদের প্রশিক্ষিত কর্মীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন। ভবিষ্যতে কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া বেআইনি পার্কিং নিয়ে পুরসভা সমীক্ষা করবে। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে।” |
|
পুলিশ সূত্রে খবর, এই রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। যেমন, লেকটাউন ট্রাফিক গার্ডে প্রয়োজন ২৬ জন পুলিশকর্মীর। কিন্তু, রয়েছেন ১২ জন। অভাব রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্মী জানালেন, পর্যাপ্ত ম্যানপ্যাক ওয়াকিটকি তাঁদের নেই। অনেক ম্যানপ্যাক খারাপ। ফলে গাড়ি নিয়ম ভাঙলে পরের সিগন্যালের পুলিশকে ওই গাড়িটি ধরতে বলার কোনও সুযোগ থাকে না। কেবলমাত্র বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যাওয়ার সময়েই পর্যাপ্ত ম্যানপ্যাক পাওয়া যায়। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “শুধু কর্মী সংখ্যা বাড়ানোই নয়, ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও আধুনিক করা হবে। ভিআইপি রোড ও নিউটাউন রোডের ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হচ্ছে। তবে পথচারীদেরও সচেতন থাকা দরকার।”
|
ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ |
|
|
|
|
|