মনমোহন-মমতার জন্য নতুন ‘খেল দাওয়াই’ দক্ষিণ আফ্রিকার
নমোহন সিংহ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য খেলা নিয়ে এক নতুন বার্তা রেখে দিল শেষ বিশ্বকাপের দেশ। একটা নতুন শব্দও।
কমনওয়েলথ গেমসের পরে গেমসের দুর্নীতি নিয়ে যা আলোচনা হয়েছে, তার এক ভাগও হয়নি গেমসের পরিকাঠামোকে কাজে লাগানো নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু বিশ্বকাপ কাঠামো বাণিজ্যের কাজে লাগানো শুরু করে দিল।
মুম্বইয়ে আইপিএল বা কলকাতায় মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ঘিরে তীব্র উৎসাহকে পর্যটনের কাজে লাগানো হয়েছে কবে? ভাবাই হয়েছে কোনও দিন? ভারতের কাছে কার্যত অপরিচিত ও অব্যবহৃত একটা শব্দ নিয়ে গবেষণা দক্ষিণ আফ্রিকায়।
স্পোর্টস ট্যুরিজম।
কলকাতায় বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেটের আগে কিছু ট্র্যাভেল এজেন্ট অনেক খেলা ভক্ত লোককে নিয়ে যায় বিদেশে। ব্যাপারটাকে কোনও দিনও বিস্তৃত বাণিজ্যের চোখে দেখেনি কোনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার। এটাই স্পোর্টস ট্যুরিজমখেলাকে কেন্দ্র করে পর্যটন। এবং এই স্পোর্টস ট্যুরিজমকে অস্ত্র করে বিদেশি মুদ্রার আশায় নেমে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা।কেপ টাউনের প্রাণকেন্দ্রে, ওয়েস্ট ইন গ্র্যান্ড হোটেলের স্পোর্টস সেন্টারে এই স্পোর্টস ট্যুরিজম নিয়েই তিন দিনের বিশাল সেমিনার হল দেশ বিদেশের নানা বিশিষ্ট লোকেদের উপস্থিতিতে। সেখানে সবাই একমত, পর্যটক টানতে খেলাকে অস্ত্র করো। পর্যটন এবং ক্রীড়া দফতর মিলেমিশে একাকার। পর্যটন দফতরের তরফে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক আলি বাখারকে। দুই কর্তা সুগেন পিল্লাই ও জেরেমাইন ক্রেগ বলছিলেন, “বিশ্বকাপ আমাদের দেশে আলাদা প্রত্যয় দিয়েছে। আলাদা করে ৩ লক্ষ ৯০ হাজার পর্যটক এসেছে। আমরা সেটাকেই কাজে লাগাতে চাই।”
সাম্প্রতিক অতীতে রাগবি বিশ্বকাপ, কনফেডারেশন কাপ, আইপিএল দেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার পরে বিশ্বকাপ। এই সময় পর্যটকদের ঢল চোখ খুলে দিয়েছে এ দেশের সরকারি কর্তাদের। প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সরকারি মুখপাত্র এখন দক্ষিণ আফ্রিকাজাত ভারতীয় নেতা সত্যেন্দ্রনাথ রঘুনানন মহারাজ। ম্যাক মহারাজ নামে সবাই যাঁকে চেনে। তাঁরা চাইছেন, এর পরের যে কোনও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পর্যটনকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিতে। কেপ টাউন চেষ্টায় ফরমুলা ওয়ান সার্কিট করতে। ডারবান চেষ্টায় অলিম্পিক করার (যদিও দেশের প্রেসিডেন্ট জুমা ও অধিকাংশ মন্ত্রীদের ইচ্ছে নেই)।
এ সব শুনে মনে হবে, কেন মোহন-ইস্ট ম্যাচ বা ইডেন টেস্টকে কেন্দ্র করেই পর্যটক টানার চেষ্টা করে না পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দফতর? কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রী আবার খেলার লোকমহমেডান কর্তা সুলতান আমেদ। বিখ্যাত টমাস কুক সংস্থা তাদের নতুন শাখা খুলেছেটমাস কুক স্পোর্টস। তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিনীত রায়নার মন্তব্য, “ভারতে স্পোর্টস ট্যুরিজম এখনও একতরফা। ভারতীয়রা খেলা দেখতে বিদেশে যায়। বিদেশ থেকে খেলা দেখার লোক আনার চেষ্টা হয় না।”
খেলা আর পর্যটনের আবার কী সম্পর্ক? ভারতে ভুরু তুলবেন অনেকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে দেখে স্পোর্টস ট্যুরিজমকে দুটো ভাগ করা হয়েছে। এক, অলিম্পিক, গ্রাঁ প্রি বা বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্ট। দুই, ওয়াটার স্পোর্টস বা হিল স্পোর্টসের ব্যবস্থা করা নিজেদের উদ্যোগ। সমুদ্র গোয়া বা দীঘাতেও রয়েছে। কিন্তু ডারবান বা কেপ টাউন যেমন সমুদ্রসৈকতে অজস্র খেলার ব্যবস্থা করে পর্যটকদের টানছে, সেটা ভারতে ভাবেইনি কেউ। কেপ টাউনের ওয়াটার ফ্রন্ট এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। ভারতে এত এত সমুদ্রসৈকত, কোথাও এমন ভাবা হয়নি।
বিশ্বকাপের পরে দেশের সব স্টেডিয়ামও শুধু ফেলে না রেখে পর্যটক টানার কেন্দ্র। ইউরোপে যা হয়। ভারতীয় মুদ্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে পর্যটকরা দেখছেন সব স্টেডিয়ামের অন্দরমহল। থাকছেন গাইড। ইডেন বা যুবভারতী নিয়ে বিশ্ব জোড়া অজস্র মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে রোজগারের চেষ্টা হয়েছে কোনও দিন? এখানে অনেক লোককে বলতে শুনলাম, কলকাতায় গেলে ইডেন দেখতে চান। সেটা যে অসম্ভব, সাধারণ মানুষকে গাইড দিয়ে ইডেন দেখানোর কোনও ব্যবস্থা নেই, কে বোঝাবে? অবশ্য ইডেনের কী দোষ! কমনওয়েলথ গেমসের দুর্ধর্ষ স্টেডিয়াম কি পর্যটকদের দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে? নেই।
কেপ টাউন, ডারবান, জো’বার্গের স্টেডিয়ামে ঢুকলে ঘোর লেগে যায় এখনও। যুবভারতীর চেয়েও কম লোক কাজ করে প্রতি স্টেডিয়ামে। তা সত্ত্বেও একটা খড়কুটো পড়ে নেই। আগামিকালই একটা বিশ্বকাপ শুরু করে দেওয়া যায়।
মদন মিত্র বা অজয় মাকেনরা তাঁদের স্টেডিয়ামের সাফাইকর্মীদের এ দেশে পাঠাতে পারেন। কী করে এত ঝকঝকে রাখা যায় দেখতে। চোখের সামনে দেখলাম, বৃষ্টি এলেই সাফাইকর্মীরা তৈরি। বৃষ্টি থামতে তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমে পড়ছেন। পর্যটকরা এলেও তৈরি থাকছেন। একটু নোংরা হলেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। কাজ ফেলে রাখার ব্যাপার নেই। কেপ টাউন স্টেডিয়ামের কর্মী জেন বললেন, “যত লোক স্টেডিয়াম দেখতে আসবে, আমাদের লাভ। দেশে বিদেশি মুদ্রা বাড়বে।”
স্পোর্টস ট্যুরিজমকে বড় অস্ত্র করে দক্ষিণ আফ্রিকা কেন এগোতে চাইবে না?
Previous Story Khela Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.