স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত একটি ভবনের ‘বিপজ্জনক’ অংশ আদালতের নির্দেশে ভাঙতে এসেও শুক্রবার সকালে স্থানীয় মানুষের বাধায় ফিরে গেল আদালতের লোকজন এবং পুলিশ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চুঁচুড়ার চকবাজারের মোগলপুরায় ওই ভবনটি ভেঙে সেখানে প্রোমোটারি করার চক্রান্ত চলছে। আদালতকে বাড়ির ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানাননি ভবনটির দেখভালকারীরা। তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় পুরসভাও বিষয়টি নিয়ে মুখ বুজে রয়েছে বলে অভিযোগ। ট্রাস্টি বোর্ডের সেবায়েত অরুণ নন্দী বলেন, “আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত করা যায়নি। এর বেশি কিছু বলব না।” |
প্রশাসন সূত্রের খবর, ১৯২১ সালে বিপ্লবী ভূপতি মজুমদারের হাত ধরে ‘বিদ্যামন্দির ভবন’ নামে ওই বাড়িটি প্রতিষ্ঠা হয়। সেই অগ্নিযুগে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী এখানে এসে থাকতেন। মহাত্মা গাঁধী, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মানুষও এখানে এসেছেন বিভিন্ন সময়ে। বর্তমানে বাড়িটি দেখভালের জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড রয়েছে। দু’টি পরিবার সেখানে ভাড়া থাকে। বাড়িটি ক্রমশ জীর্ণ হয়ে পড়ছে। অভিযোগ, জীর্ণ হওয়ার কারণ দেখিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাড়িটি ভাঙার ‘চক্রান্ত’ শুরু হয়। এক দল মানুষ এর প্রতিবাদে পথে নামেন। হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আশিস সেনের নেতৃত্বে ‘বিদ্যামন্দির ভবন বাঁচাও কমিটি’ তৈরি হয়। আশিসবাবু বলেন, “বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পীঠস্থান। এই বাড়ি আমরা কোনও মতেই ভাঙতে দেব না।” স্থানীয় মানুষের দাবি, সরকারের তরফে বাড়িটিকে সংরক্ষণ করা হোক।
কমিটির দাবি, এর আগে ২০০৯ সালেও বাড়িটি ভাঙার পরিকল্পনা হয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট পুরবোর্ডের আমলে। সে যাত্রাও কমিটির আন্দোলনে ভবনটি ভাঙা যায়নি। অবশ্য ট্রাস্টি বোর্ডের লোকজন বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট যান। হাইকোর্ট বাড়িটির ‘বিপজ্জনক’ অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। এ দিন সকালে আদালতের লোকজন এবং পুলিশ বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু করতে যান। খবর পেয়েই সেখানে হাজির হন আশিসবাবুরা। স্থানীয় বাসিন্দারাও যান। তাঁরা রুখে দাঁড়ান। পুলিশের সঙ্গে বচসা হয়। শেষমেষ, ফিরতে বাধ্য হয় আদালতের লোক এবং পুলিশ।
অভিযোগ, বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব জেনেও বর্তমান পুরবোর্ড কোনও পদক্ষেপ করেনি। উল্টে, নিশ্চুপ থেকে বাড়ি ভাঙার ব্যাপারেই সম্মতি জানিয়েছে। আশিসবাবু বলেন, “মহামান্য আদালতে ভুল তথ্য পেশ করা হয়েছে। আমি আদালতে আসল সত্যিটা তুলে ধরব। বাড়িটা আগলে রাখা প্রত্যেক চুঁচুড়াবাসীর কর্তব্য।”
পুরসভার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ভাড়াটে এবং স্থানীয় মানুষের বাধায় আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। বাড়িটির সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে ওই বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি জানাব।” |