দানের জমিতে আবাসন গড়া নিয়ে আপত্তি
প্রায় ১০ বছর আগে দান করা একটি জমিতে বহুতল আবাসন গড়তে চায় তৃণমূল পরিচালিত শ্রীরামপুর পুরসভা। একই সঙ্গে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও গড়া হবে ওই জমিতে। কিন্তু আবাসন গড়া নিয়ে আপত্তি তুলেছে তৃণমূলের জোটসঙ্গী কংগ্রেস এবং বিরোধী সিপিএম। তাদের দাবি, ওই জমিতে শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালই গড়তে হবে। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব এ ব্যাপারে সম্প্রতি চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। প্রস্তাবিত আবাসন নির্মাণের প্রতিবাদে পুরসভায় পোস্টারও পড়েছে।
২০ কাঠা জমিটি শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউতে। জমিটির বর্তমান বাজারদর প্রায় ২ কোটি টাকা। ২০০২ সালে পারিবারিক ওই জমিটি পুরসভাকে দান করেন স্থানীয় বাসিন্দা বনবিহারী চক্রবর্তী এবং তাঁর দুই ভাই শান্তিকুমারবাবু এবং অনিলবাবু। অনিলবাবু বছর খানেক আগে মারা গিয়েছেন। অপর দু’জন বৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের দাবি, বহুতলের পাশাপাশি ওই জমিতে ‘হার্ট রিসার্চ সেন্টার’ গড়া হোক।
পুরপ্রধান তৃণমূলের অমিয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “যা কিছু হচ্ছে বা হবে সবই দলিল এবং চুক্তি অনুযায়ী। আমরা স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কাজ করছি।” পুরসভা সূত্রের খবর, জমিটি দানের সময়ে যে দলিল হয়, তাতে অবশ্য ‘হার্ট রিসার্চ সেন্টার’ নয়, লেখা হয় গড়া হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল। চলতি মাসের ১৪ তারিখে চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিলের সভায় ওই জমিতে বহুতল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এই সেই জমি। নিজস্ব চিত্র।
২০০২ সালে জমিটি যখন দান করা হয় তখন পুরপ্রধান ছিলেন কংগ্রেসের কেষ্ট মুখোপাধ্যায়। ২০০৫ সালে কেষ্টবাবুর মৃত্যুর পর পুরপ্রধান হন তাঁর ভাই অমিয় মুখোপাধ্যায়। তিনি অবশ্য মাঝপথে তৃণমূলে যোগ দেন। চক্রবর্তী পরিবারের দাবি, জমিটি দান করার পর থেকে বহু বার তাঁরা পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত অমিয়বাবু তাঁদের জানান, প্রকল্পটি করার টাকা পুরসভার নেই।
শান্তিকুমারবাবু বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষ শ্রীনাথ চক্রবর্তীর স্মৃতিতে হার্ট রিসার্চ সেন্টার গড়ার জন্য জমিটি পুরসভাকে দান করেছিলাম। কিন্তু জমিটা ফেলে রাখা হয়। পরে ২০০৬ সালে আমাদের স্বপ্ন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে পুরপ্রধানের সঙ্গে আর একটি চুক্তিতে সম্মত হই। ঠিক হয় আমাদের দান করা জমিতে একটি বহুতল আবাসনও গড়তে পারে পুরসভা। কিন্তু এখনও কিছুই হল না। মনে হচ্ছে জমিটা দিয়ে আমরা অন্যায় করেছি।” বনবিহারীবাবুর ক্ষোভ, “জমিটি দানের পরে তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান গিরিধারী সাহা অথবা বাম কাউন্সিলররাও কিছু করেননি। পুরসভা কি সরকারের কাছ থেকে টাকার জোগাড় করতে পারত না?”
কংগ্রেসের দাবি, ওই জমিতে শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল গড়তে হবে। কংগ্রেস কাউন্সিলর গিরিধারী সাহা (জমি হস্তান্তরের সময় উপ-পুরপ্রধান ছিলেন) বলেন, “আমরা ওই জমিতে বহুতল আবাসন নির্মাণ আটকাতে চাইছি। পুরপ্রধানকে আপত্তির কথা জানিয়েছি। পুরসভা চালাচ্ছে তৃণমূল। স্থানীয় বিধায়ক, সাংসদও তৃণমূলের। রাজ্য সরকারের প্রধান দলও তৃণমূল। কেন্দ্রেও ওরা জোটে রয়েছে। পুরসভা কেন একটা বড় মাপের হাসপাতাল গড়তে রাজ্য বা কেন্দ্রের কাছে টাকার দরবার করছে না?” তাঁর দাবি, “দ্বিতীয় দলিলটি চুপিসাড়ে হয়েছিল। তাতেও লেখা রয়েছে, প্রয়োজনে বহুতল আবাসন গড়া যেতে পারে। গড়তেই হবে, এমনটা নয়। কিন্তু সেটা করে কাদের উপকার করতে চাওয়া হচ্ছে?” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সমীরেশ রায় বলেন, “আমরাও চাই রাজ্য সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক। ওখানে যাতে কোনও অবস্থাতেই প্রোমোটারি না হয়।”
আবাসন নির্মাণের বিরোধিতা যে ভাবে হচ্ছে, তাতে পুরপ্রধান বলেন, “এক শ্রেণির লোক আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাঁদের বিষয়ে মানুষের কাছে বলব।”
First Page South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.