প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের বাইরে রেখে কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিল পাশ হলেও বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীরা কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। মন্ত্রিসভার বৈঠকেই কাল এই বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আগে তো বটেই, কালকের বৈঠকেও মনমোহন সিংহ নিজের মনোভাব স্পষ্ট করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদকে লোকপালের আওতায় রাখা উচিত। এমনকী, লোকপালের আওতায় থাকতে ব্যক্তিগত ভাবেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই। এ সম্পর্কে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বক্তব্য, “এটা প্রধানমন্ত্রীর নিছক কথার কথা নয়, এর আগে প্রকাশ্যে আন্তরিক ভাবেই তিনি এই কথা বলেছিলেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও একই ভাবে তিনি তাঁর মত জানিয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রী এই মত পোষণ করার পরেই কপিল সিব্বল তাঁকে সমর্থন করেন। কপিল জানেন, বিজেপি নেতৃত্ব এখন প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় রাখার দাবি তুলছে। লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ সকলেই প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, জাতীয় সুরক্ষা ও আইন-শৃঙ্খলার মতো বিষয় বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতায় রাখা উচিত। বিজেপি এটাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় অটলবিহারী বাজপেয়ী নিজেকে লোকপালের আওতায় রাখার কথা বলেছিলেন। গত কালের বৈঠকে কপিল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একেবারে ঠিক কথা বলছেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। সরকার যদি সেই সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে বিজেপি-কেও ছত্রভঙ্গ করা সুবিধা হবে। তা না হলে নিজেদের আবার সাফাই দিতে হবে।”
কপিলের সুরে সুর মিলিয়ে গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী স্বতস্ফূর্ত ভাবে প্রধানমন্ত্রী ও কপিলের বক্তব্য সমর্থন করেন। সমর্থন জানান নতুন পরিবেশ মন্ত্রী জয়ন্তী নটরাজনও। নিজেদের দলের মন্ত্রীদের বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শরিক দলের নেতা শরদ পওয়ারকে তাঁর মতামত জানাতে বলেন। ভিন্ন সুরে প্রথম বক্তব্য রাখেন এনসিপি নেতা। তিনি সওয়াল করেন, প্রধানমন্ত্রীর মতো পদকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখাই বাঞ্ছনীয়। শুধু তাই নয়, নাগরিক সমাজ যে বক্তব্য রাখছে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সেই কথা শুনে রীতিমতো গর্জে ওঠেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, নাগরিক সমাজের দাবির কাছে নতিস্বীকার করার কোনও অর্থই হয় না। প্রধানমন্ত্রীর পদকে কখনওই লোকপালের আওতায় রাখা উচিত নয়। বিলটি এমনিতেই সংসদে যাবে। তারপর স্থায়ী কমিটিতে। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ থাকবে। সব বিবেচনা করে সংসদই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
পওয়ারের পর প্রধানমন্ত্রী সরকারের আর এক গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল তৃণমূলের নেতা দীনেশ ত্রিবেদীকে বলার সুযোগ দেন। তিনি অবশ্য জানিয়ে দেন, সরকারকে অস্থির করার লক্ষ্য নেই তাঁর দলের। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। লোকপালের বিষয়ে মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত ভাবে যা সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি তার পাশে থাকবেন। সে কারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে লোকপালের আওতার বাইরে রাখার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারও কোনও বিরোধিতা করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। |