|
|
|
|
আজ বৈঠক মহাকরণে |
রাজধানী কলকাতাকে ‘পূর্ণাঙ্গ জেলা’ করার ভাবনা |
সুপ্রকাশ চক্রবর্তী |
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা। আবার রাজ্যের ১৯টি জেলার মধ্যে একটি জেলাও কলকাতা। কিন্তু, রাজধানী কলকাতার জৌলুসের আড়ালে কলকাতা জেলার পরিচয় কার্যত অস্তিত্ববিহীন হয়ে পড়ায় শহরের মানুষের সঙ্গীন অবস্থা।
কারণ, রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো কলকাতার জন্য নেই কোনও জেলাশাসক বা মহকুমাশাসক। কলকাতার মধ্যে নেই রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরের জেলা কার্যালয়ও। তাই বিভিন্ন কাজের জন্য কলকাতার লোকেদের এক বার ছুটতে হচ্ছে সল্টলেকে, এক বার আলিপুরে। কখনও খাদ্য ভবনে তো কখনও মহাকরণে। এর বাইরে কলকাতার মানুষকে বেশির ভাগ প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে সরাসরি রাজ্য স্তরের কার্যালয়গুলিতে। যেমন কলকাতার যুবকল্যাণ, স্বল্প সঞ্চয় আধিকারিকেরা কাজ করেন রাজ্য স্তরের অধিকর্তাদের অধীনে।
এই অবস্থার সুরাহায় কলকাতাকে একটি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনিক পরিকাঠামো তৈরির চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। সেই পরিকাঠামোর প্রাথমিক প্রশাসনিক-নকশা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে। |
|
আজ, শনিবার মহাকরণে মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সভাপতিত্বে ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির কর্তাদের উপস্থিতিতে সেই পরিকল্পনা পেশ করবেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক।
পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে কলকাতার আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো না-থাকায় তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি শংসাপত্র পাওয়ার জন্য কলকাতার মানুষকে ছুটতে হয় সল্টলেকে জেলা কল্যাণ আধিকারিকের কার্যালয়ে। তার পরে সল্টলেকের কার্যালয় থেকে সেই আবেদনগুলি সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয়। উপযুক্ত মনে হলে শংসাপত্রগুলি সই করার জন্য পাঠানো হয় আলিপুরে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কার্যালয়ে। কারণ, মহকুমাশাসকের নীচের কোনও পদমর্যাদার আধিকারিক ওই শংসাপত্রে স্বাক্ষর করতে পারবেন না। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আছেন মহকুমাশাসকেরা। অন্য দিকে, কলকাতার মানুষকে বার্ধক্য ভাতা থেকে শুরু করে অন্য বেশ কিছু পরিষেবা (যেমন মিড-ডে মিল) জোগায় কলকাতা পুরসভা। পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা পেলে কলকাতার মানুষ তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট জেলা-কার্যালয় থেকেই তাঁদের প্রাপ্য বিভিন্ন নাগরিক পরিষেবা পাবেন।
তবে কলকাতা জেলা বলতে ঠিক কোন কোন এলাকাকে বোঝাবে, ভিন্ন মত রয়েছে তা নিয়েও। কারণ কলকাতার চৌহদ্দি কতটা, তা এক-একটি সংস্থার বিচারে এক-এক রকম। কলকাতা পুলিশের এখনকার ৪৮টি থানা নিয়ে এক রকম কলকাতা। কলকাতা পুরসভার মূল ১০০টি ওয়ার্ড ধরলে কলকাতার মানচিত্র অন্য (যদিও ওই ১০০টি ওয়ার্ডের মধ্যেও রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকা)। আবার, ডাক বিভাগের পরিভাষায় কলকাতার সংজ্ঞা আর এক রকম। কেএমডিএ-র এলাকা ধরলে বাঁশবেড়িয়া থেকে বজবজ পুরোটাই বৃহত্তর কলকাতা!
এর পরেও রয়ে গিয়েছে অন্য প্রশ্ন। কলকাতার জন্য যদি পৃথক এক জন জেলাশাসক নিয়োগ করা হয়, তা হলে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদমর্যাদা কী হবে? কারণ, অন্যান্য জেলায় জেলাশাসকের পাশাপাশি জেলা পুলিশের শীর্ষে থাকেন পুলিশ সুপার। কিন্তু কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদমর্যাদা অতিরিক্ত ডিজি-র। তাঁর উপরে জেলাশাসক থাকবেন কী ভাবে?
সরকারি মহল অবশ্য এখনই এত কূট তর্কে যেতে রাজি নয়। তাঁদের বক্তব্য, আগে মুখ্যসচিব সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির মতামত জানবেন। তার পরে এ ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হবে। প্রশাসনিক খুঁটিনাটি তার পরে ঠিক করা যাবে। |
|
|
|
|
|