|
|
|
|
সস্ত্রীক রামপেয়ারি তৃণমূলে, ‘জটিলতা’ বৃদ্ধি শাসক জোটে |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক (অধুনা বহিষ্কৃত) তথা কলকাতা পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর রাম পেয়ারি রাম এবং তাঁর স্ত্রী, কাউন্সিলর হেমা রাম তৃণমূলে যোগ দিলেন। তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়ে তাঁরা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদন মঞ্জুর করে রাম-দম্পতিকে তৃণমূলে নেওয়া হয়েছে। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন সাপেক্ষেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শোভনবাবু শুক্রবার জানিয়েছেন।
রামপেয়ারি এবং হেমাদেবী তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কলকাতা পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলরের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৯ জন। কংগ্রেস কাউন্সিলরের সংখ্যা কমে দাঁড়াল ৬ জন। গতবছর পুরবোর্ড গঠিত হওয়ার সময়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা ছিল ৯৫, কংগ্রেসের ১০, বিজেপি-র ৩ এবং বামফ্রন্টের ৩৩।
কিন্তু পুরসভায় এই দু’দলের (যারা পরবর্তীকালে একসঙ্গে বিধানসভা ভোট লড়েছে এবং আপাতত জোট সরকারে রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে) সংখ্যার আনুপাতিক হার হ্রাস-বৃদ্ধি ছাপিয়েও এই দুই কাউন্সিলরের দলবদল অন্য ‘তাৎপর্য’ বহন করছে। বিরোধী শিবির সূত্রের খবর, রামপেয়ারি সহ বিভিন্ন বিধায়ক, যাঁরা বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিট না-পেয়ে ‘নির্দল’ হয়ে দাঁড়িয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, কংগ্রেস তাঁদের দলে ফিরিয়ে আনার কথা ভাবছিল। যথাসময়ে মমতার কাছে সে খবর পৌঁছোয়। এবং তার পরেই মমতা রামপেয়ারি এবং তাঁর স্ত্রীকে দলে নেওয়ার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দেন। এখন দেখার, কংগ্রেসের অন্যান্য বহিষ্কৃত নেতার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় কি না। দেখার এটাও যে, এর ফলে জোটে কোনও ‘জটিলতা’ তৈরি হয় কি না। কারণ, তৃণমূলের হয়ে যাঁরা বিধানসভা ভোটে ‘গোঁজ’ দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের ভোটের আগেই দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। ভোটের পর কংগ্রেসও সেই একই রাস্তায় হেঁটেছিল। কিন্তু সরকার গঠন-পরবর্তী পর্যায়ে দু’দলের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হওয়ায় উভয়পক্ষই পরস্পরকে কিঞ্চিৎ ‘চাপে’ রাখতে চাইছে। কংগ্রেস যেমন ঠিক করেছে, ভোটে দাঁড়ানো ওই ‘গোঁজ’ প্রার্থীদের দলে ফিরিয়ে মমতার উপর চাপ তৈরি করবে, তেমনই মমতা তার আগেই সেই ‘গোঁজ’ প্রার্থীদের তৃণমূলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। প্রসঙ্গত, রামপেয়ারিকে ভোটের আগেই অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি রাজি হননি বলে তৃণমূলের এক প্রথমসারির নেতার দাবি।
দু’দলের নেতারাই অবশ্য প্রকাশ্যে বলছেন, এই ঘটনায় জোটে কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু দু’দলেরই অন্দরে সরকার গঠনের পরেই বিভিন্ন ঘটনায় খানিকটা টেনশন তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি দু’টি ঘটনায় তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এক, প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়কে তৃণমূল রাজ্যসভার সাংসদ করেছে। দুই, কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিধায়ক-পুত্র অভিজিৎ সরকারি কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কংগ্রেসের বক্তব্য, তাদের সঙ্গে বিনা আলোচনাতেই অভিজিৎকে ওই কমিটির সদস্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, সেই মর্মে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে দিয়ে মমতাকে চিঠিও লেখানো হয়েছে। তারই পাশাপাশি কংগ্রেসের একাংশের পরিকল্পনা ছিল, বিধানসভা ভোটে দলের টিকিট না-পেয়ে যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়ানো এবং কালক্রমে বহিষ্কৃতদের দলে ফিরিয়ে আনা। রামপেয়ারি ওই তালিকার প্রথমদিকেই ছিলেন। তৃণমূলের সঙ্গে আসন-সমঝোতায় রামপেয়ারির পুনর্বিন্যস্ত কেন্দ্রটি মমতাকে ছাড়ে কংগ্রেস। সেখানে মমতা দাঁড় করান তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ নেতা ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে। রামপেয়ারি ওই কেন্দ্রেই নির্দল হয়ে লড়েন এবং হেরে যান। ভোটে জিতে ফিরহাদ মন্ত্রী হয়েছেন। রামপেয়ারিকে নেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গেও দলের তরফে কথা বলা হয়েছে। বিধায়ক পদ হারালেও রামপেয়ারি কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলার রয়েছেন। যেমন রয়েছেন তাঁর স্ত্রী হেমাদেবী।
তৃণমূলে যোগদানের বিষয়ে এ দিন রামপেয়ারি বলেন, “আমি এবং আমার স্ত্রী হেমা কলকাতার মেয়রকে তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি জানিয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “আমি কলকাতা পুরসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ছিলাম। কিন্তু আমায় কিছু না-জানিয়ে কংগ্রেস হঠাৎ দলনেতার পদ থেকে আমায় বাদ গিয়ে দেয়। এই বিষয়টি আমার কাছে অসম্মানজনক মনে হয়েছে। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। যে দল ক্ষমতায় আছে, তাদের সঙ্গে থাকলে আমার কাজের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে বলে মনে করি।” তাঁকে কংগ্রেসে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কি কোনও কথাবার্তা চলছিল? রামপেয়ারি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। উল্লেখ্য, এর আগে কংগ্রেস কাউন্সিলর মমতাজ বেগম এবং মইনুল হক চৌধুরি তৃণমূলে যোগদান করেন। |
|
|
|
|
|