|
|
|
|
জৌলুসহীন পর্যটনকেন্দ্র গাদিয়াড়া |
নুরুল আবসার • কলকাতা |
নদীর ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। ভাঙন ধরেছে নদীবাঁধে। চারদিকেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাব স্পষ্ট। তা সে সবের কোনও তোয়াক্কা না করেই এলাকায় গড়ে উঠছে একটার পর একটা লজ। অভিযোগ, যেগুলির বেশিরভাগেই অবাধে চলছে দেহ ব্যবসা। অন্যদিকে পর্যটকদের জন্য একমাত্র সরকারি লজটি ভুগছে কর্মী সঙ্কটে। ফলে পর্যটকদের উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। হাওড়া জেলার অন্যতম সেরা পর্যটনকেন্দ্র শ্যামপুরের গাদিয়াড়ার বর্তমান ছবি এটাই। রাজ্যের পর্যটকমন্ত্রী রচপাল সিংহ অবশ্য বলেছেন, “গাদিয়াড়া পর্যটনকেন্দ্রের সার্বিক উন্নতির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই পর্যটন দফতরের বিশেষ সচিব ওই এলাকায় যাবেন। তার পরে প্রকল্পের খুঁটিনাটি ঠিক করা হবে। প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ করা হবে।”
আটের দশকের প্রথম দিকে রাজ্য সরকার হুগলি নদী ও রূপনারায়ণ নদের সংযোগস্থলে গাদিয়াড়াকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ঘোষণা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। কলকাতা থেকে এখানে আসার একটি উপায় হল রেলপথ। হাওড়া থেকে ট্রেনে বাগনান। তার পর সেখান থেকে বাসে শ্যামপুর হয়ে গাদিয়াড়া। এ ছাড়া ধর্মতলা থেকে কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসে দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে উলুবেড়িয়া। সেখান থেকে গাদিয়াড়া আসা যায়। সড়ক পথে গাদিয়াড়া আসার এমন ব্যবস্থা থাকলেও রাস্তার হাল নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। |
|
পর্যটকদের অভিযোগ, শ্যামপুর থেকে গাদিয়াড়া পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তার হাল শোচনীয়। প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা থাকায় গাড়ির চাপ থাকলেও গত ৩০ বছরে রাস্তা চওড়া করা হয়নি। বাগনান হয়ে হাওড়া-গাদিয়াড়া বেসরকারি বাস চলাচল বেশ অনিয়মিত। আবার সরকারি বাসও গাদিয়াড়া থেকে সন্ধ্যার পরে পাওয়া যায় না। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বক্তব্য, গাদিয়াড়ায় বাসের চালক এবং কণ্ডাক্টরদের রাতে থাকার ব্যবস্থা নেই। ফলে সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসতে হয়।
অনেক বছর আগে রূপনারায়ণের পাড়ের কিছু কিছু জায়গা কংক্রিটে বাঁধানো হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই বাঁধানো পাড় বেশ কিছু জায়গায় ধসে গিয়েছে। বাঁধ ধরে পযর্টকেরা নিশ্চিন্তে বেড়াতে পারেন না। কারণ বহু জায়গাতেই ভাঙনের ফলে বাঁধের অবস্থা খারাপ। মেরামতির কোনও উদ্যোগই নেই। পর্যটকদের বসার জন্য পর্যাপ্ত বেঞ্চ নেই। বাসস্ট্যান্ড থেকে নেমে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটার পরে রয়েছে সরকারি ট্যুরিস্ট লজ। একেবারে নদীর কোলঘেঁষে। রাস্তা এবড়ো-খেবড়ো হওয়ায় ট্যুরিস্ট লজে যেতে পর্যটকদের প্রাণান্তকর অবস্থা হয় বলে অভিযোগ। গাদিয়াড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সরকারি টুরিস্ট লজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নদীর পাড় বরাবর রাস্তায় রাতে আলোর ব্যবস্থা নেই।
সরকারি টুরিস্ট লজে রয়েছে ৩২টি ঘর। তার মধ্যে ৬টি ঘর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে চারটি ঘরে শীততাপ যন্ত্র চালানো যায় না। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লো-ভোল্টেজ থাকে। ফলে আলো জ্বলে টিম টিম করে। পাখা বন্ধ হয়ে যায়। লজের কর্মীরা জানালেন জেনারেটর থাকলেও যতক্ষণ না লোডশেডিং হচ্ছে তা চালানো হয় না। ২৩ জন কর্মীর মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১১ জন। যাঁরা অবসর নিয়েছেন তাঁদের জায়গায় আর নতুন কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। ফলে লজের আবাসিকরা ঠিকমতো পরিষেবা পান না বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, এই ট্যুরিস্ট লজের চারিদিকে গড়ে উঠেছে আগাছার জঙ্গল। লজের কাছেই পুকুরে এক সময়ে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সে সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও পর্যটন দফতরের দাবি, আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। কম কর্মী থাকা সত্ত্বেও আবাসিকদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়।
রাজ্যের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিকাঠামোর এমন বেহাল দশার সুযোগ নিয়ে নদীবাঁধের দু’দিকে গড়ে উঠেছে একের পর এক বেসরকারি লজ। যার মধ্যে বেশ কয়েকটিতে অবাধে চলে দেহ ব্যবসা। এর ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে অন্য লজগুলিকে। ওই সব লজ বা হোটেলের মালিকেরা জানান, যে সব লজ কর্তৃপক্ষ দেহ ব্যবসায় মদত দিচ্ছেন তাঁদের জন্য এলাকার বদনাম হচ্ছে। পুলিশকে বলা সত্ত্বেও কাজ হয়নি। ফলে পর্যটকের সংখ্যা কমছে। উলুবেড়িয়ার এসডিপিও তন্ময় সরকার অবশ্য বলেন, “গাদিয়াড়ায় বিভিন্ন লজে বার বার হানা দিয়ে দেহ ব্যবসা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।”
পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ বলেন, “গাদিয়াড়া পর্যটনকেন্দ্রের সার্বিক উন্নতির জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|