অঞ্জলি গোস্বামী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড হল তিন জনের। বাকি এক জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে এই রায় শোনান বীরভূম জেলা ও দায়রা বিচারক মলয়মরুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ওই মামলার আসামীরা ছিল- কিরীটী পাল, মুস্তাক মিঞা, সিদ্দিকি মিঞা ও দুর্গা সূত্রধর। চূড়ান্ত বিচারের জন্য মঙ্গলবার আদালতে মামলাটি উঠেছিল। ওই দিন তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। শুক্রবার কিরীটী, মুস্তাক ও সিদ্দিকিকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিলেও ওই হত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দুর্গার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। যদিও কিরীটী পালের দাবি, এই ঘটনায় তাকে মিথ্যা ফাঁসানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই সিউড়ি আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক মণিশঙ্কর দ্বিবেদী সাঁইথিয়ার তেলমিল কর্মী শম্ভুনাথ লোহারকে গত বছর নিজের দুই সহকর্মীকে খুনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। |
২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর সকালে সদাইপুর থানার করমকাল (বাবুইবোনা) জঙ্গলে অঞ্জলিদেবীর (৪২) দেহ মিলেছিল। বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকা দেহের গলায় শাড়ির ফাঁস দেওয়া ছিল। খুনের আগে অঞ্জলিদেবীকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল বলে ময়না-তদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ ছিল।
যদিও প্রথমে এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে জেলা পুলিশ ছিল। পরে তদন্তের ভার নেয় সিআইডি। তদন্তে নেমে সিআইডি জানতে পারে, সিউড়ির নতুন পল্লির বাড়িতে একাই থাকতেন বিধবা অঞ্জলিদেবী। একটি বিউটি পার্লারও চালাতেন। নিজে খুন হওয়ার বেশ কিছু দিন আগে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল অঞ্জলিদেবীর স্বামী ও পুত্রের। আত্মঘাতী হন তাঁর মেয়েও। এত কিছুর পরেও বিভিন্ন স্তরের লোকের সঙ্গে তাঁর অবাধ মেলামেশা ছিল। সেই সূত্র ধরে পরিচয় হয় কিরীটী পালের সঙ্গে। দেহ উদ্ধারের আগের দিন রাতে মোটরবাইকে করে রাজনগরে অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন কিরীটীর সঙ্গে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরে ফিরে আসে কিরীটী। ভাড়াটিয়া অঞ্জু মাঝির কাছে অঞ্জলিদেবীর বাড়ির চাবি চায় কিরীটী। কিন্তু দিদি কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই চাবি না নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় কিরীটী। |
এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খুন করার অপরাধে তিন পুরুষ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি গণধর্ষণ ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার দায়ে যাবজ্জীবন ও তিন বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। দুর্গা সূত্রধর-সহ সকলকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ৬ মাস অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।”
তবে এ দিনের রায় সম্পর্কে জানতে আদালত চত্বরে আসামীদের আত্মীয়দের সঙ্গে জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর লোক। পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে।
|