রান্না করা নিয়ে টানাপোড়েন, বিপাকে পড়ুয়ারা
রান্নার দায়িত্ব কে পাবে। এই নিয়ে অশান্তির জেরে প্রায় এক বছর ধরে স্কুলে মিড-ডে মিল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে চাল। সমস্যা সমাধানের জন্য সব পক্ষকে নিয়ে বহু বার সভা ডেকেছেন দুবরাজপুর ব্লকের কুমারশীর্ষা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক। শুধু তাই নয়, ব্লক অফিস থেকে গিয়েছিলেন প্রতিনিধিরা। কিন্তু সমস্যা যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গিয়েছে। মিড-ডে মিল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পড়ুয়ারা।
সমস্যা আসলে কোথায়? শিক্ষাকেন্দ্র ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে স্কুলটি স্থাপিত হয়েছিল। ২২৮ জন পড়ুয়া রয়েছে। শিক্ষক আছেন ৬ জন। এই শিক্ষাকেন্দ্রের উপরে নির্ভর করে কুমারশীর্ষা, কল্যাণপুর, কাঞ্চননগর, কুলতোড়, কড়কড়ি-সহ ১০-১২টি গ্রামের পড়ুয়ারা। ২০০৬-এর ডিসেম্বরে এই স্কুলে মিড-ডে মিল চালু হয়। প্রধান শিক্ষক প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, “এলাকার মোট ১৮টি স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও প্রথমে রান্না করতে রাজি হয় বাসন্তীমাতা ও নবজাগরণ নামে দু’টি স্বনির্ভর দল। কিছু দিন রান্না করার পরে তারা রান্না করতে চায় না বলে আমাকে জানিয়ে দেয়। এর পরে দুবরাজপুরের বিডিওকে জানিয়ে স্কুল পরিচালন সমিতিকে ডেকে বিষয়টি আলোচনা করি। তখন স্বনির্ভর দলের সদস্যরা লিখিত ভাবে জানান যে, তাঁরা কেউই রান্না করতে পারবেন না। শেষ পর্যন্ত বিডিও-র পরামর্শ মতো স্কুলের কাছাকাছি দুই মহিলা উত্তরা বাগদি ও কবিতা বাগদির সঙ্গে কথা হয়। তাঁরাও রান্না করতে রাজি হয়ে যান।”
এভাবেই ওই দুই মহিলা প্রায় তিন বছর ধরে রান্না করছিলেন। ২০১০ সালে ব্লক অফিস থেকে প্রধান শিক্ষকের কাছে নির্দেশ আসে মিড-ডে মিলের ভার যেন স্বনির্ভর দলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তখন প্রধান শিক্ষক স্বনির্ভর দলগুলির অনিচ্ছার কথা জানিয়ে বিডিও-র হস্তক্ষেপ চান। শেষ পর্যন্ত বিডিও মৌমিতা সাহার নির্দেশে ওই দুই মহিলাকে রান্নার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। এত দিন যে দলগুলি রান্না করায় আগ্রহ দেখায়নি, তাদের মধ্যে কয়েক জন রান্না করার জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু উত্তরা বাগদি ও কবিতা বাগদিরা সেই প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ে।
উত্তরা বাগদি ও কবিতা বাগদিতের স্পষ্ট জবাব, “এত দিন কম পয়সায় রান্না করছিলাম। তখন স্বনির্ভর দল কোথায় ছিল। এখন একটু বেশি বেশি পয়সা পাওয়া যাচ্ছে বলে তারা ঝামেলা পাকাচ্ছে। আমরা আমাদের অধিকার ছাড়ব না।” অন্য দিকে, বাসন্তীমাতা, নবজাগরণ ধর্মরাজ, প্রতিমা প্রভৃতি স্বনির্ভর দলের সদস্যদের দাবি, যেহেতু স্বনির্ভর দলের মিড-ডে মিল রান্না করার অধিকার রয়েছে, তাই এ কাজ তাঁদেরই প্রাপ্য। তারামাতা স্বনির্ভর দলের নেত্রী তথা স্বনির্ভর দল সঙ্ঘের কোষাধ্যক্ষ শান্তিরানী ঘোষ বলেন, “আগে স্বনির্ভর দলের রান্নার কাজে রাজি না হওয়া ভুল ছিল। তাই বলে আর কখনও তারা রান্না করতে পারবে না তা ঠিক নয়। আমার দাবি উভয়পক্ষই রান্না করুক।”
ওই মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালন সমিতির সম্পাদক নকুল ঘোষ বলেন, “কেউ এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় বহুবার বৈঠক করেও সমস্যা মেটেনি। বিডিও তা জানেন।” এ দিকে, অভিভাবক ব্রজগোপাল গড়াই, গোরাচাঁদ ঘোষ, সাবিত্রী মুর্মুদের কথায়, “এই স্কুলে পড়তে আসা অধিকাংশ পড়ুয়াই তফসিলি জাতি উপজাতি ও আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের। তাই মিড-ডে মিল বন্ধ থাকাটা উদ্বেগের।” বিডিও মৌমিতা সাহা বলেন, “একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তার পরে কেউ যদি বাধা দেয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
First Page Purulia Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.