|
|
|
|
এনবিএসটিসি’র বাসের রং হবে সবুজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
রাজ্যে ক্ষমতার ‘পরিবর্তন’ হয়েছে। এ বার সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগতে চলেছে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসের রঙেও। আগামী দুই বছরের মধ্যে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) সমস্ত বাসেরই রং পুরোপুরি বদলে ফেলে সবুজ করা হবে। বৃহস্পতিবার ওই পরিবহণ নিগমের সদর দফতরে বসে এমন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
লোকসানে চলা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাসের রং বদলের জেরে বিপুল আর্থিক খরচ হবে। ফলে নিগমের চেয়ারম্যানের এদিনের ঘোষণার পরে এই পরিকল্পনার যৌক্তিকতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নিগমের চেয়ারম্যান বলেন, “এখন থেকে সংস্থার যেসব বাস মেরামতির দরকার হবে সেগুলি সবুজ রং করা হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সংস্থার সমস্ত বাসের রং পর্যায়ক্রমে বদলে দেওয়া হবে।” এই আর্থিক ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে চেয়ারম্যানের সাফাই, “শুনেছি, সবুজ রং চোখের পক্ষে ভাল। সেজন্যই ওই সিদ্ধান্ত।”
এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থার বিভিন্ন ডিপোয় ৭০৫ টি বাস রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় পাঁচশো বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। সংস্থার পর্যটন শাখার জন্য বরাদ্দ হাতেগোনা কিছু বাস বাদ দিলে বেশির ভাগ বাসই লাল রঙের। কিছু নীল ও সাদা রঙের বাসও রয়েছে। এতদিন এনবিএসটিসি প্রতি চার বছর অন্তর সচল বাসে নতুন করে রঙ করত। আধিকারিকদের কয়েকজন হিসেব করে দেখেছেন, প্রতিটি বাস রঙ করতে এনবিএসটিসি’র ন্যূনতম ৬-১৮ হাজার টাকা ব্যয় হবে। পর্যায়ক্রমে সাতশোর বেশি বাসের রং বদলানো হলে দুই বছরে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। |
|
কীভাবে লোকসানে চলা এনবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ ওই বিপুল খরচ জোগাড় করবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না সংস্থার কর্তারা। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডনবসকো লেপচা বলেন, “যে সব বাসের রং বদল প্রয়োজন হবে সেগুলিকেই ধাপে ধাপে সবুজ করা হবে। টাকার জোগাড় হয়ে যাবে।” সংস্থার চেয়ারম্যানের ওই পরিকল্পনার কথা জেনে বিরোধীরা তো বটেই, তাঁর দলের বোর্ড সদস্যদের একাংশও বিস্মিত। এনবিএসটিসি’র এক বোর্ড সদস্য বলেন, “লোকসানে চলা সংস্থাকে লাভের রাস্তায় ফেরানোর বদলে এমন বিপুল খরচের দিকে ঠেলে দেওয়ার মানে হয় না। সংস্থার বোর্ড মিটিংয়েও বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।” কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “স্বতন্ত্র পরিচিতির জন্য সাবেকি রং ফিরিয়ে আনা হলেই সব থেকে ভাল হবে।” ১৯৪৫ সালে কোচবিহারের রাজ পরিবার যখন জেলায় বাস চালু করে তখন সেগুলির রঙ ছিল সবুজ ও ধূসর রঙের। দিনহাটার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেন, “বাসের রং বদল করে মানুষের মনের রং মুছে ফেলা যায় না। তা ছাড়া যে যখন ক্ষমতায় থাকবেন তাঁরা পছন্দ মতো বাসের রং বদলে দিলে মানুষের কী উপকার হবে জানি না, সংস্থার অর্থের অপচয় হবে।” প্রাক্তন বনমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অনন্ত রায় বলেন, “ঐতিহ্য বদলে বাসের রং বদল পুরোপুরি পুরো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এনবিএসটিসির মতো ধুঁকতে থাকা সংস্থার জন্য এটা তুঘলকি সিদ্ধান্ত।” সংস্থার চেয়ারম্যান নিগমকে আগামী তিন বছরে আর্থিক স্বনির্ভর করে তুলতে এদিন একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “আয় বাড়াতে শিলিগুড়ি ও কোচবিহার থেকে ঢাকা, থিম্পু ও কাঠমান্ডুতে বাস চালানোর তোড়জোড় চলছে।” অসমের ৭৯ টি রুটে ফের বাস চালানো, সংস্থার বাসে বিজ্ঞাপন দিয়ে বছরের এক কোটি টাকা আয়, বিভিন্ন ডিপোতে কর্মী সংখ্যার সমতা ফেরানোর পরিকল্পনা হয়েছে। অসুস্থ চালকদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার চিন্তাভাবনা হচ্ছে বলেও জানান এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “দিনের বেলা সংস্থার ৭১ জন মহিলা কন্ডাক্টরকে স্বল্প দূরত্বের বাসে নামানো হবে। অক্টোবর মাস থেকে কর্মীদের মাসের প্রথম দিন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|