|
|
|
|
চা পাতা নিয়ে আন্দোলন, বিরোধিতায় ডান-বাম দু’পক্ষই |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মজুরি-চুক্তির দাবিতে বাগান থেকে চা পাতা বাজারে যেতে বাধা দিয়ে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ যে আন্দোলনে নেমেছে, তার বিরোধিতা করল ডান ও বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি। সিটুর বক্তব্য, ‘দাদাগিরি’ করে শিল্পের ক্ষতি করা হচ্ছে। কংগ্রেসের সংগঠন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স (এনইউপিডব্লু)-এর মতে, এই ধরনের আন্দোলন ‘হঠকারিতা’ ছাড়া কিছু নয়।
গত মঙ্গলবার থেকে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠন প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তরাই ও ডুয়ার্সের সমস্ত বাগান থেকে চা পাতা বাজারে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও মালিকপক্ষ চা পাতা বার করতে পারেননি। তাঁদের সাফ কথা, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আগে অবরোধ তোলা হবে না। ওই ঘটনায় বিপাকে পড়ে গিয়েছেন চা বাগান মালিকেরা। তরাই ও ডুয়ার্সের শতাধিক চা বাগানের কয়েক হাজার কেজি চা পাতা কারখানায় আটকে গিয়েছে। বেশির ভাগ চা বাগানে বর্ষায় চা পাতা মজুত করার মতো পরিকাঠামো নেই। ফলে ওই সমস্ত চা পাতা নষ্ট হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আগামী ৪ অগস্ট পরবর্তী ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছে। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এ দিনও পরিষদের নেতাদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “এ বারের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে যাতে আন্তরিক ভাবে আলোচনা হয় সেই ব্যাপারে আমরাও উদ্যোগী হব।” তবে ওই অনুরোধেও পরিষদের পক্ষ থেকে এখনও কোনও সাড়া মেলেনি। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “চা পাতা বাগানে আটকে থাকলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে চা বাগানগুলোকে।”
বাগান মালিকদের যৌথ সংগঠন ‘দি কনসাল্টেটিভ কমিটি অফ প্লান্টেশন অ্যাসোসিয়েশনস’ এ দিন কলকাতায় বৈঠকের পর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, অবরোধ না উঠলে শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বিলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ চা বিক্রি না হলে শীঘ্রই বাগান পরিচালনার নগদ জোগানে টান পড়বে। এমনকী কিছু রুগ্ন বাগান বন্ধ হয়েও যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। এ ছাড়া ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার পরও অবরোধ-কর্মসূচি অনৈতিক ও নিয়মবিরুদ্ধ বলেও তাদের দাবি।
আরএসপি’র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি’র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, “ক্ষুদ্র স্বার্থপূরণ করতে গিয়ে বড় ক্ষতি করা হচ্ছে। চা বাইরে বার করা বন্ধ করতে সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন মিলে যৌথ দর কষাকষি চলছে। সেখানে এই ভাবে চা বাইরে বার হতে বাধা দেওয়ার মতো আন্দোলনের মানে হয় না।” সিটু’র জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক জিয়াউল আলমের মতে, এই ধরনের আন্দোলনকে বড়জোর ‘দাদাগিরি’ বলা যেতে পারে। মজুরি-চুক্তির দাবিতে সিটুর পক্ষ থেকে এ দিন সমস্ত চা বাগানে গেট মিটিং করা হয়। এনইউপিডব্লু নেতা বাবলু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ধরনের আন্দোলনের জেরে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হতে পারে বলে মালিকরা যা বলছেন তা মানা যায় না।” সুর নরম করেছেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে। তিনি বলেন, “শ্রমিকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে। তবুও নেতাদের ওই আন্দোলন তুলে নেওয়ার জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছি।” সংগঠনের তরাই-ডুয়ার্স সমন্বয় কমিটির সভাপতি জন বার্লা অবশ্য বলেন, “রাজ্য সভাপতি যে নির্দেশ দিয়েছেন সেই ব্যাপারে ফের আলোচনায় বসা হবে।” |
|
|
|
|
|