বন্ধ হল দেবপাড়া বাগান |
ম্যানেজারের গলায় জুতোর মালা চা বাগানে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বানারহাট |
চা বাগানের ‘ক্রেশ’ থেকে দখলদার উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। ‘ক্রেশ’ ছাড়তে রাজি না-হওয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে এক মহিলা শ্রমিকের তোলা পাতা কারখানায় ঢোকানো হয়নি। ওই ঘটনার প্রতিবাদে একদল মহিলা চা শ্রমিক বাগানের ম্যানেজারকে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরান। গাড়িতে চড়িয়ে ম্যানেজারকে বীরপাড়ায় নামিয়ে দিয়ে আসা হয়। এর জেরে বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের বানারহাট থানার দেবপাড়া চা বাগান। এ দিন শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়ে গিয়ে গেটে তালা বন্ধ দেখতে পান। পরে জানা যায়, প্রশাসনের কাছে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস পাঠিয়েছেন মালিকপক্ষ। বর্ষার পাতা তোলার মরসুমে এমন ঘটনার জেরে শ্রমিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। |
|
তালা ঝুলছে বন্ধ বাগানের গেটে। বৃহস্পতিবার। রাজকুমার মোদক। |
চা বাগান মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “যে ভাবে ম্যানেজারকে জুতোর মালা পরিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে, তাতে ওই চা বাগানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। এমন পরিস্থিতিতে বাগান চালাতে সমস্যা হচ্ছে দেখেই কর্তৃপক্ষ বাগান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।”
বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলে বাচ্চা নিয়ে চা পাতা তোলা কঠিন বলে উত্তরবঙ্গের বহু চা বাগানে কারখানার পাশে একটি করে ক্রেশ রয়েছে। দেবপাড়া চা বাগানের কারখানা সংলগ্ন একটি ঘরে রয়েছে এমনই একটি ক্রেশ। ঘর না-থাকায় বছর তিনেক ধরে ৩টি শ্রমিক পরিবার ওই ক্রেশে বসবাস করছিলেন। সোমবার সকালে বাগানের এক সহকারী ম্যানেজার ক্রেশ থেকে ওই পরিবারগুলিকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলে বচসা হয়। বিকালে ক্রেশে আশ্রয় নেওয়া একটি পরিবারের মহিলা শ্রমিক চা পাতা তুলে কারখানায় ওজন করাতে যান। সেই সময়ে সহকারী ম্যানেজার ওই মহিলা শ্রমিকের পাতার ওজন করানো হবে না বলে জানিয়ে দেন। সহকারী ম্যানেজার ওই মহিলা শ্রমিক পতঙ্গি নায়েককে গালিগালাজ করে ধাক্কাও দেন বলে শ্রমিকদের অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদ করে বাগানের কয়েকশো মহিলা শ্রমিক ম্যানেজার সুব্রত সাহার কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তিনিও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। |
|
স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে জলপাইগুড়ির কাছে একটি চা বাগানে। নিজস্ব চিত্র। |
এর পরেই বাগানের মহিলা শ্রমিকরা ম্যানেজারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। জুতোর মালা পরিয়ে কারখানার সামনে নিয়ে যান। বাগানের কয়েকজন ওই ম্যানেজারকে গাড়িতে চড়িয়ে বীরপাড়া শহরে ছেড়ে আসেন বলে অভিযোগ। চরম হেনস্থা হওয়ার পর ওই ম্যানেজার চিকিৎসার জন্য বাগান ছেড়ে চলে যান। তার পরে দু’দিন বাগানে কাজকর্ম চললেও এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল। বুধবার কাজ শেষ হওয়ার পর রাতে কর্তৃপক্ষের বাকি লোকজন বাগান ছেড়ে চলে যান।
যে মহিলাকে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত সেই পতঙ্গি নায়েকের কথায়, “আমাদের ঘর নেই। মালিকপক্ষ যে ঘর দিয়েছেন, সেখানে বর্ষাকালে কোনও ভাবেই রাতে থাকা সম্ভব নয়। এ কথা জানানোর পরেও আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়।” বৃহস্পতিবার বাগান ছেড়ে কর্তৃপক্ষ চলে যাওয়ার পর উত্তেজনা ঠেকাতে পুলিশমোতায়েন করা হয়। বাগানের শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, ১১৭৭ জন শ্রমিক বাগানে রয়েছেন। অথচ ৪০০ জনের কোনও থাকার ঘর নেই। বহু শ্রমিক অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। বাগানের আরএসপি নেতা বিষ্ণু শর্মা এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতা কৈলাস বরাইকের কথায়, “ম্যানেজার মহিলাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেননি। কিন্তু, বাগান বন্ধ করার কারণ বুঝতে পারছি না।” |
|